পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি ভয়ে পিছু হঠা কাপুরুষের ধৰ্ম্ম,—সফলতা এক মুহূৰ্ত্তে না-ও আসতে পারে—একদিন ষে সিদ্ধিলাভ হবেই—এই তাদের ধ্রুব বিশ্বাস । মাণিকতলার দল ধরা পড়েছে ব’লে তারা দ’মে যায় নি – পুলিস-দমনেও এ চক্রান্ত বাড়বে বই কমবে বোধ হয় না ।” “কিন্তু এখনকার বিপ্লবপন্থী দল – মাথা হারিয়ে কাণ্ডাকাগুঞ্জনশূন্ত নিঠুৰ কবন্ধ হয়ে উঠেছে । ইংরাজ খুন-জখমের চেষ্টা আপাতত: ততট আর শোনা যাচ্ছে না— বোধ হয়, এ কাজটা তাদের পক্ষে তত সহজসাধ্য নয়। স্বদেশী খুন স্বদেশ ডাকাতিতেই এখন তারা বিদেশ দস্যদেরও অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে । হায় হায় ! স্বজাতিপীড়নেই স্বরাজ্যলাভের ব্যবস্থা । সত্যই ভারতের মঙ্গলদেবতা ভাবতভূমি থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন।” শরৎকুমার এই গম্ভীর প্রসঙ্গে লঘুভাব পদান করিয়া কহিলেন—“কিন্তু দেশে ছেলেদের মনে যে কার্য্যোদ্ধম-ক্ষুধা জেগে উঠেছে, তার ত একটা থোরাক চাই । যদি সৈনিকপদ তাদের জন্য খোলা থাকৃত, তা হ’লে এ ক্ষুধার জ্বালাটা থেমে যেতে পারত । কিন্তু আপনারা এত দিন বক্তৃতীয়, কবিতায় জঠরানল জালিয়ে তুলে অন্ন দেবার বেলা এখন বলছেন,—ষা বাছার চ’রে গিয়ে থা, অথচ সেই তার চ’রে খেতে আরম্ভ করেছে অমান কাণ্ডুনি গাচ্চেন-হায় হায় । গোল্লায় গেলি বাছাধনরা ! বেচারার কি করে বলুন ত ?” রাজাও একটু হাসিয়া বলিলেন, "কিন্তু বেচারীদের সত্যই যদি উদ্দেশ্য হয় দেশোদ্ধার করা - তা হ’লে গোল্লায় গেলে ত চলবে না । মেরেধরে ইংরাজকেও তাড়া- যাবে না— দেশবাসীকেও স্বাধীনতার কলম পড়ান চলবে না । দেশমাতাকে ভালবাসতে শিলেই তার স্বার্থপর সন্তানগণও তার মঙ্গলে নিজের মঙ্গল জ্ঞান ক’রে স্বার্থত্যাগী হ’তে শিখবে । কিন্তু দেশসেবকদের এরূপ নিষ্ঠুর আচরণে স্বাধীনতার প্রতি জনসাধারণের অনুরাগ বাড়ছে, না বিরাগ জন্মাচ্ছে,—এতে দেশমাতার শৃঙ্খলমোচন হচ্ছে—ন বিশৃঙ্খলা বাড়ছে, সেইটে বল দেখি ? ইংরাজ প্রজাপীড়ন করে, এই অজুহাতে তোমরা তাদের দণ্ডনীয় জ্ঞান কর, অথচ ভারতবাসীর খাটি ঘে মহত্ত্ব,— আদর্শ যে ধৰ্ম্মনীতি, তাকেই পদদলিত ক’রে বিলাতী করালীমূৰ্ত্তি সেজে ভ্রাতৃ-রক্তপানে তোমরা উল্লসিত হয়ে উঠেছ ! এই ত দেশভক্তির পরিপাম । দুঃখে, ২৭ ক্ষোভে, অসহ্য যন্ত্রণাল হৃদয় জলে ওঠে।" বলিয়া বাজা নীরব হইলেন । একাদশ পরিচ্ছেদ রাজার ক্ষুব্ধ বাক্যের উত্তরে শরৎকুমার বিনীতস্বরে কছিলেন, “অবশ্য দেশ-ভক্তির দোহাই দিয়েও এরূপ দেশপীড়নকে সমর্থন করা যায় না, তবুও তাদের পক্ষে এইটুকু বলার অাছে যে, ডাকাতী করার জন্যই তার। ডাকাতী করছে না। সব কাজেই ত অর্থবল চাই । অনন্তোপায় হয়েই তার ডাকাতী ধরেছে। আপনার স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে তাদের ত অর্থ যোগাবেন না।” “দেশের কাজে সাধ্যমত অর্থ অনেকেই যোগচ্ছেন, আমি ও যুগিরে থাকি । মায়ের নামডাকে লোকের চাঁদাদানে যে কিরূপ আগ্রহ, হাসনালভাণ্ডার প্রতিষ্ঠার দিন তুমিও ত তা দেখেছ? তবে সারপিটের জন্ত চাঁদা তোলা দুষ্কর, এটা ঠিক।" "আচ্ছা, আবার আপনাকে জিজ্ঞাসা করি, বে-আদপি মাপ করবেন, বিনা অস্ত্রে বৃটিশকেশরীকে বশ করতে পারা গেছে, এমন কোন নজীর আপনি দেখাতে পারেন ?” রাজা অতি দু:খেও একটু হাসিয়া বলিলেন, “আমিও তর্কের খাতিরে তোমাকে জিজ্ঞাসা করি —তোমাদের অস্ত্র কোথায়—তাই তা হ’লে দেখাও অtগে ? প্রসাদপুরের মচেধরা ছ’চারখানা বন্দুক তলোয়ার, আর বমপটক প্রস্থতের একখানা শিশুশিক্ষণ---এই ত অস্ত্র সম্বল তোমাদের । কিন্তু পুরাকালের দ্রোণশৰ্ম্ম৷ স্বয়ং সশরীরে এসে আজি যদি তোমাদেব আচার্য্য হয়ে দাঁড়ান, তা হ’লে র্তীকেও পশ্চিমের প্রবল-প্রতাপ আধুনিক বিজ্ঞানদৈত্যাচার্য্যের নিকট পরাভব মানতেই হবে।” "তা হ’লে কি আপনি বলেন, এ দাস জাতির মল্লযুত্ব রক্ষার চেষ্টা পণ্ডশ্রম মাত্র, মীর খেতেই আমরা জন্মেছি – অতএব মীর খাওয়ারূপ কর্তব্য-কৰ্ম্ম-সাধনেই পতিত আমাদের স্বৰ্গলাভ ?” “ন, তা আমি বলিনে। এইখানেই আমাদের মতভেদ | চাই না রক্তপাত—আমরা কোৰ্ব্ব না আঘাত, ব্যর্থ করব আরির অস্ত্র ধৰ্ম্ম-কৃপাবলে— এ কথা আমার মুখের কথা নয়, মনের প্রকৃত ভাব। নিরস্ত্র আমরাও বলহীন মই,—ধৰ্ম্মবল,