পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি র্তাহার মনে পড়িয়া যায়— সেই কথা— সেই শবসাধন মন্ত্র,—তিনি শিহরিয়া উঠেন ;— গল্প-গুজবের মধ্যেও অন্তঃসলিলভাবে তাঙ্গার মন বলিয়৷ উঠে- কখনো না–কথনে না—এরূপ ঘাতকের কার্য্যে মুক্তি নাই --নাই। নির্জনতার মধ্যে তিনি যখন চিন্তামগ্ন হইবার অবসর লাভ করেন—তখন এই কথাতেই তাহার মনঃপ্রাণ ভরপুর হুইয়া ও:ঠ—তিনি নিবিষ্টচিত্তে ভাবেন, কখনো না কখনো না, প্রতিহিংসা ভারতের মুক্তির পথ নহে, মিলন-মন্তেই নষ্ট ভারত পুনৰ্জ্জীবিত হইয়া উঠিবে । কিন্তু কে শিপাইবে সে মন্ত্র, কোথায় পাইব তাহার সাধন-দীক্ষা ! ভগবান, কবে তুমি আমাদেব মহানিদ্রা ভঙ্গ করিবে ! 意 會 擊 এক দিন আহারাস্তে দুই সখ তে পালঙ্কে বিশ্রাম শয়নকালে, হাসি রাজকন্তার হাতখানি ধরিয়া বলিল, “এস ভীষ্ট, আমরা সষ্ট পাতাই।” যেমন বিনা ফুলে সাজ-সজ্জা সম্পূর্ণ হয় না—সেইরূপ হাসির মনে হইতেছিল একটা কিছু না পাতাইলে তাহদের বন্ধুত্ব ঠিক পূর্ণগ্ৰী লাভ করিতেছে না ! রাজকন্যা আদর করিয়া ডাকিলেন,—“সই, সই, ওগো সই”—তাহার পরই হাসিয়া বলিলেন,—“না ভাই, এ ডাকটা বড় নভেলি রকম শোনাচ্ছে । তা ছাড়া সই হ’লেই ত মনের কথা বলতে হয়, কি বলব তোকে, ভাঙ্গ ? অামার মনে ত কোন লুকান কথা নেই ।” হাসি সগীর গল টিপিয়া বলিল,--“বটে ! নেষ্ট বই কি! আমি বেশ জানি আছে, আমাকে শুধু ফাকি দেবীর চেষ্টা।” বলিতে বলিতে হাসির ‘শরদার” কথা মনে পড়িয়া গেল ; বলিল,- “শরদাকে ত তোমাদের ওখানে দেখতে পাইনে আজকাল, তার খবর কি ?” জোতিৰ্ম্ময়ীর মনের ভাব গোপন করা দুঃসাধ্য হইয়া উঠিল ; বাঙ্গা মুধ একেবাবেই রাঙ্গ হইয়া উঠিল। সি হাসিয়া বলিল,--“এই না বলছিলে, কোনো মনের কথা তোমার বলার নেই !” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী সংযত হইয়া বলিলেন, —“তুই যে রকম কথা ভাবছিলি, তা মোটেই ন--আমি দেশকে বরণ করেছি, অামার কি ও সব ভাৰনা ভাববার অবসর অাছে, ও সব বাজে কথা রাখ * রাজকস্তার এ ছলনার কথা নহে, তিনি নিজের মনের সহিত এই ভাবে বোঝাপড়া করিয়া লইয়াছিলেন।

  • আচ্ছা দেখা যাবে—দেখা যাবে ।”
  • বেশ, যখন দেখবি—তখন বলিস। এখন

●ማ আমার মনেও যে তোর মতন একটা সৰ্থ জেগেছে ।” “কি সৰ্থ ?” “পাতাবার সখ -পূর্ণ করবি সে সাধ ! বল আগে ।” “নিশ্চয় নিশ্চয়—” “আমার ভাই তোর সঙ্গে মা পাতাতে সগ যায় ।” এবার হাসির মুখ লাল হইয়া উঠিল, বলিল,— “কি যে বলিস্, ভাই!” “সত্যি বলছি ! এবার থেকে তোকে আমি মা ব’লে ডাকব,- হ’তেই হবে তোকে আমার মা । অনেক দিন থেকে এই সাধ আমার মনে জেগেছে। পূর্ণ কর, ভাই ।” “আমার মা ত ভাই তোমার সে সাধ পুর্ণ করাছেন । তুমি আমার সখী—প্রোপের সখী —”

    • মা হ’লে কি সর্থী হ’তে পারা যায় না—না কি ? অামি এমন মা চাই—যার একমাত্র মেয়ে হব আমি —আমি বড় স্বার্থপর । তাকে আর কেউ ম৷ বলতে পারবে না,—বুঝলি, তুই ?”

এই সময় দিদিমা’র আবির্ভাবে জ্যোতিৰ্ম্ময়ী উঠিয়া আসিয়া তাহার হাত ধরিয়া ঠাহীকে বিছানায় টনিয়া বসাইয়া বলিলেন,—“দিদিমা, আপনি বলুন ; আমি হাসির সঙ্গে মা পাতাতে চাই, পচা মামুলি সই পাতানের চেয়ে এট লক্ষ গুণে ভাল কি না ?” দিদিমা মনে মনে জ্যোতিন্ময়ীর শুভ বুদ্ধির প্রশংসা করিয়া মুখে বলিলেন,- “তাতে দোষ কি রূপসী নাৎনা, তোর ত ভাগ্য ভাল, বিনা কষ্টে মেয়ে পাচ্ছিস্ –আর অমন গুণের মেয়ে-ভাগ্যবতী তুই ।” কিন্তু হাসির মন প্রসর হইল না, সে বলিল,— “ন, ভাই, আমি তোমাকে কিছুতেই মেয়ে বলতে পারব না।” রাজকন্ত দৃঢ়কণ্ঠে বলিলেন,—“তুই মেয়ে না বলিস, আমি তোকে বলব মা ।” বলিয়া তিনি তহিকে প্রণাম করিয়া, তাহার পায়ে হাভ ঠেকাইলেন । হাসি হাসিয়া হাতটা চাপিয়া ধরিয়া ব্যতিব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিল,—“করিস্ কি, ভাই, করিস কি ?” রাজকণ্ঠ তখন দুষ্ট হাতে হাসির গলা জড়াইয়া ধরিয়া বলিলেন,—“ম আমার, প্রাণের মা, আমার প্রিয়সখী মা । অনেক দিন কাউকে মা ব’লে ডাকি নি ? তোকে আজ ম! ব’লে ডেকে আমার প্রাণ যেন ভরপুর হয়ে উঠলে৷ ”