পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি করেছি,—ডাক্তার যে দেশশত্র । তুমি কি বল বস্তুমিঞা ?” বসন্তু অণশ্বাসবাক্যে বলিল,—“না মিঞাঁদীন, ডাক্তার দেশশত্রু নন; দেশসেবক তিনি, গুরু ভুল বুঝেছিলেন ।” - অনেক দিন পরে দীনেশের বুকের চাপ পাতরখান কে যেন উঠাইয়া ধরিল, সে আরামে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিয়া উঠিল, "আঃ, আমি মুখে মৰ্বতে পারব তা হ’লে, আর আমার কোন কষ্ট নেই। . উভয় শ্রোতার মনের মধ্যে জ্বলন্ত সহানুভূতি উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিল ; অনাদি তাহার অনুতাপবেদনা হৃদয়ে অনুভব করিয়া নীরব হইম পড়িল । বসন্ত সাস্তুনা বাক্যে কহিল,-“মন্ত্ৰবি কেন ভাইয়া ? দেশমাতা যে এখনও ভুর্থী, তার অন্নের যোগাড় করতে হবে যে আমাদের।” “কিন্তু আমি যে দাগী, আমার কায ফুরিয়েছে বসুমিঞা । ঠিক দিনটিতে আত্ম-সমৰ্পণ করার জন্য আমি কেবল অপেক্ষীয় অাছি।” ইঙ্গকে যে তাহারা মরিতে দিবে না এবং এমশ: বুঝাইয়। নিজেদের পক্ষে তাহাকে টানিয়া লইবে, সঙ্কল্পে মনে মনে সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইয়া জিজ্ঞাসা করিল,—“কোথায় ? কোন দিন ?” “কাল জেনে এসেছি, মন্দিরের শীল-জঙ্গলে, অমাবস্তার দিনে। সে দিন গুরুদেবেরও আগমন হবে।” এই কুষ্ঠিত ভক্তি-নিষ্ঠায় বসস্তের হৃদয় অভিভূত হইয়া পড়িল । হাঁয় রে । মঙ্গল-কার্য্যে ত এরূপ বিশ্বাসী লোক পাওয়া যায় না। দেশ-মাতার এ কি দুর্ভাগ্য ! বসন্ত সংযত হইয়া একটু পরে কছিল, --"ও", সে ঢের দেরীর কথা। তার মধ্যে বিশ্ব উণ্টে যেতে পারে। গুরুদেব ভুল বুদ্ধিতে তোমাকে দাগী করেছেন, সে ভুল তার ভাঙ্গবেষ্ট, তখন নিশ্চয়ই তুমি র্তার ক্ষমা পাবে।” অনাদি এতক্ষণ পরে তাহার নীরবতা ভঙ্গ করিরা কহিল,—”কণয কর মিঞাদান, কায বন্ধ কালে চলবে না । মঙ্গল কাষে মঙ্গল আছেই, গুরুর আদেশ ভ্রান্ত হ’তে পারে, কিন্তু এ সত্য অলান্ত ।” বসন্ত অনাদির দ্যায় সরল-নৈতিক নহে। কোতোস্থালিতে কায করিয়া সে বুঝিয়াছে, কাব লইতে হইলে সময়বিশেষে কূটনীতির শরণাপন্ন না হইলে চলে না। অনাদির কথা অন্ত অর্থে ঘুরাইয়৷ 66: লইয়া সে কহিল,—“কাষ দেখিয়ে গুরুকে প্রসন্ন কর মিঞার্দীন " উদাসভাবে দীনেশ উত্তরে কঠিল,—“কি কাষ কবৃতে বল ?” "পুলিসের মনে একটা সন্দেহ জেগেছে এক্টরূপ শুনছি। শীঘ্রই বনজঙ্গলে তার খানাতল্লাসী চ{লীবে । এখন আমাদের কত্তব্য হয়েছে, শস্ত্র অস্তিানী থেকে হাতিয়ারগুলো সরানো " ' অবশু পুলিসে এ খবর সত্যই উঠিয়াছে, বা উঠিবার সম্ভবনা আছে-এ ভাবনা তখন তাহার মনে আদেী ছিল না। দীনেশকে এ কার্য্যে ভিড়াইবার অভিপ্রায়েই বসন্ত এইরূপ করিয়া বলিল। ছিতে বিপরীত ঘটিল। দীনেশ ভীতভাবে বলিল,—“কাল ত সেখানে এ কথা কারে মুখে শুনি নি, এ খবরটা তা হ’লে কেউ এখনো জানে না ; জানানো ত উচিত।” অনাদি এই কথায় প্রমাদ গণিল, কি জানি, যদি দীনেশ সেখানে গিয়া সব কথা প্রকাশ করিয়ে দেয় । কিন্তু অনাদি হইতে বসন্ত পাক লোক ; যখন হইতে বসন্ত শুনিয়াছে যে, দীনেশ দাগী, তখন হইতে সে আশ্বস্ত । দীনেশের উত্তরে সে কছিল,—“হ্যা, জানতে হবে বই কি ! মিটিং কবে আবার ?” “পরশু। পবর জান না, ভাইয়া ?” “আমরা যে এখানে ছিলুম না ।” “তার পর আবার ৭ দিন সব বন্ধ থাকৃবে,—এই ত কাল স্থির হয়েছে। পরশুই তোমরা গিয়ে এ খবরটা জানিয়ে এস । আমার দিনের আগে আমি ত আর সেখানে যেতে পারব না।” দীনেশের এই কথায় বসন্ত ও অনাদি উভয়েই অনেকটা নিশ্চিন্ত বোধ করিল। বসন্ত বলিল,— “বেশ, আমিই সবাইকে খবর জানিয়ে আসব, আর, অস্ত্র-উদ্ধার সম্বন্ধে যা পরামর্শ হয়—তা-ও তোমাকে এসে খবর দেব। তুমি এখন ভাইয়া তোমার দিনটা আসা পর্য্যস্ত এইখানেই থাকে। ডাক্তারও এখানে শীঘ্র স্বাস্বেন, তার সঙ্গেও দেখা হবে। তিনি নিঃসন্দেহ তোমাকে মুক্তি পাইয়ে দেবেন।” গুরুহারা, গৃহহারা, মৃত্যুদণ্ড-সম্মুখীন হতভাগ্য দীনেশ ইহুদিগকে বন্ধু পাইয় আপনাকে ধন্ত জ্ঞান করিল। সেই রাত্রে অনাদি বাড়ী যাইবার সময় গোপনে বসন্তকে ক'হল,—“আমার কিন্তু ভাই মনটা বড়ই খারাপ ষ্ট':য় গেছে ”