পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯy& পূর্বকথিত ডাকাতীর কয়েক দিন পূৰ্ব্বে জঙ্গলমধ্যে সেবাধারীদিগের কমিটী বসিয়াছিল। দলপতি আসেন নাই ; সন্তোষ ও নাই—অন্ত সকলে মিলিয়া বিজনকুমারের হাতে একটা বন্দুক তুলিয়া দিয়া এ কার্য্যে তাহাকেই সর্দাররূপে নিৰ্ব্বাচিত করিল। সহব্ৰতীদিগের জয়োপ্পাস হুঙ্কারের মধ্যে অভিনন্দিত সমাদরে তাহার মনেও তখন জয়মত্ততা জাগিয়া উঠিল। পরে মন্দির ত্যাগ করিয়া সমিতির নিয়মামুসারে সতর্কতা অবলম্বনপুৰ্ব্বক যখন একাকী সে বিজন-পথ ধরিল—তখন চিন্তা করিবার অবসর লাভে এ কার্য্যের ভীষণতা তাহর মনের স্তরে স্তরে প্রবেশ লাভ করিয়া তাঙ্গকে অবসাদগ্ৰস্ত করিয়া তুলিল । মনের ইচ্ছা, আমরা স্বাধীন জাতি হইব ; অসভ্য জাপান, চীন দস্তুর মত মাথা তুলিয়া দাড়াইল— আর স্বসভ্য আর্য্যজাতি আমরা এখনও পদানত আছি ? হায় রে । কিন্তু এই মনুষোচিত ইচ্ছা কার্য্যে পরিণত করিবার পক্ষে অর্থাৎ আমাদের মুক্তির পথে যে অগ্নিপরীক্ষা—তাহাতে উত্তীর্ণ হইবার পক্ষে বলসঞ্চয়ের উদ্যম ও অধ্যবসায়শক্তি, আমাদের কয় জনের মনে এবং কতটুকু জাগিয়া উঠিয়াছে ? উত্তরে শুনিতে পাষ্ট, জাগিয়া উঠিয়াছে বই কি ; খুব বেশী পরিমাণেই জাগিয়া উঠিয়াছে ; মোহনিদ্রা অবসানে ভারতের এ যে জাগরণের কাল ! এই বাক্যস্বধfপানে হৃদয় যখন আনন্দমত্ত হইয়া উঠে, তখন ঈর্ষা-কাতর হুমুখ যুক্তিবাগীশ মহাশয় মনের দরজায় উকি মারিয়া ব্যঙ্গচ্ছলে বলিতে থাকেন,-“অভ আনন্দ ভাল নয় গো, ভাল নয় ।” ভারতের নিদ্রা যদি বা ভাঙ্গিয় থাকে, বলিতে পারি না,-কিন্তু তাহার মোহের অবস্থা যে সমানই আছে, তাহাতে কিছুমাত্র ভুল নাই। আলস্ত, মূৰ্খতা, বৃথা গৰ্ব্ব, স্বার্থৰন্দ্ব প্রভৃতি সাড়ে ষোল আনা মোহে ভারত এখনো ভরপুর আচ্ছন্ন, জাগরণ যদি তাহার হইয়া থাকে ত স্বপ্নের মধ্যেই হুইয়াছে, প্রকৃত জাগরণ এ নয়। অতএব ইহাতে এত অনিন্দ বা গৰ্ব্ব বোধ করিবার কারণ ত দেখিতেছি না । মৰ্ম্মাহত হইয়াও দুখুথি মহাশমের কথা ত অগ্রাহ করিতে পারি না । বস্তুতঃই আমাদের অবস্থা এমনই প্রতিকুল যে, দেশের বড় বড় সেনাপতি গুরুদিগের দৃঢ় অtশী-সঙ্কল্পও যখন স্বপ্নের মধ্যে রচিত হইয়া স্বপ্নেই বিলীন হইয়া পড়িতেছে, তখন স্বল্পবুদ্ধি বালক চেলাদিগের কি কথা ! এই উপন্যাস যখনকার ইতিহাস, বিদেশী পণ্যবজ্জনেই তখন স্বদেশী যুগের আরম্ভ। কর্জন-নীতির স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী বিরুদ্ধে লড়িবার পক্ষে দেশের মাতব্বর রাজনীতিকগণ ইহাই মহা অস্ত্র বলিয়া জ্ঞান করিলেন। কিন্তু দেশমঙ্গলকামী দুঃসাহসী বালকের দল ইহাতে সস্তুষ্ট হইল না। পক্ষপাতময় শাসননীতির মূল উৎপাটন সংকল্পে তাহারা গুপ্ত বিদ্রোহিতার আয়োজন আরম্ভ করিল। এ সময় মাথা ঠিক রাথিয়া কায করা নেতৃগণের পক্ষেও সম্ভব হইয়া উঠে নাই—যুবকদল ষে বিভ্রান্ত হইয়া উঠিবে, ইহাতে আশ্চৰ্য্য কি ! কিন্তু ইহার ফলে বিপদগ্ৰস্ত হইল, - রাজ্যের লোকেই, রাজ-সিংহাসন যেমন অটল ছিল, তেমনই অটল রহিল। ছেলেরা এক পক্ষে বিলাতী দ্রব্যের নির্বাসন সংকল্পে ক্ষুদ্রপ্রাণী দেশের দোকানদারদের উপর জুলুম আরম্ভ করিল ; অন্য পক্ষে বিদ্রোহিগণ দেশকে জাগাইয়া তুলিবার অভিপ্রায়ে কোনরূপ অনাচার-অত্যাচারকেই অন্যায় বলিয়া জ্ঞান করিল না । বিজন রায়ও প্রথমে বিলাতী জিনিষের ধ্বংসসাধন করিয়া স্বদেশীজীবন আরম্ভ করে, তবে পিতার নিকট এ কথা গোপন রাখিবার উদ্দেণ্ডে মুখোস পরিয়াই তাহাকে এ কার্য্য করিতে হইত। পরে এষ্ট স্বত্রেই মাতৃমন্দিরের দলপতিকে সে গুরুরূপে লাভ করে এবং অজ্ঞানে ক্রমশ: এমনই ফাদে জড়াইয়া পড়ে যে, তখন আর ইচ্ছা করিলেও তাহার সরিয়া পড়িষার উপায় রহিল না । কিছুদিন পূৰ্ব্বে তাহার উপরই দীনেশকে গুলী করার ভার পড়িয়াছে । দীনেশ অবশু গুরুতর অপরাধী সন্দেহ নাই ! শরৎকুমারকে মারিতে পারিবে না ; এইরূপ স্পষ্ট জবাবে গুরুকে সে অপমানিত করিয়াছে। কি দুঃসাহস ! ঠিকই শাস্তি তাহার হইয়াছে। কেন, ডাক্তারটাকে মারিতে ক্ষতি ছিল কি ? সেটাকে মর্ত্য ছাড়া করিতে পারিলেই ত সব বালাই চুকিয়া যায়। বিজন শরৎকুমারকে অন্তরের সহিত ঘৃণা করিত, - কেন, তাহ পাঠক জানেন। কিন্তু তবুও । সে তবুওটা কি ? দীনেশ ষে নিতান্ত বেচার, তাহীকে গুলী করিতে বিজনের মন নিতান্ত নারাজ । যাহা হউক, সে কাধের এখনও বিলম্ব আছে,—তাহার পূৰ্ব্বে দীনেশের মন বা গুরুর মত বদলাইতেও পারে। কিংবা বিজনের স্থলে অন্য কেহ এ কার্য্যভার গ্রহণও করিতে পারে । কিন্তু আপাততঃ ডাকাতীর দিন যে সন্নিকট ; আর সেই ত সর্দাররূপে নিৰ্ব্বাচিত্ত ! অথচ এ কার্থ্যের পক্ষে সে একেবারেই কাচা—ড়াকাতী লোকে কি