পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুস্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ : ১২৭ বৈঠকখানার বহিস্কারে পদধ্বনি শুনিতে পাইলেন । চমকিয়া মুখ ফিরাইয়া দেখিলেন, গোপাল । বর্ণলতার কঠোর মলে অবধি কণে"র অগ্র ভাগ পযর্ণত লাল হইয়া উঠিল । ব্যস্তসমস্ত হইয়া চাদরখানি ফেলিয়া দ্রতপদে বাটীর মধ্যে প্রস্থান করিলেন । সেখানি তলিয়া আলনায় রাখিবার অবকাশ পাইলেন না । গোপাল জিজ্ঞাসিলেন, “কি বৰ্ণলতা ?” বণলতা সে দেশেও না। তখন তিনি আস্তে আস্তে চাদরখানি তলিয়া আলনায় রাখিলেন এবং বিছানায় শুইয়া পড়িলেন । উপড়ে হইয়া বালিশের উপর মুখ রাখিয়া গোপাল ভাবিতে লাগিলেন । তাঁহার অজ্ঞাতসারে ঘন ঘন দীঘনিশ্বাস বহিতে আরম্ভ করিল। মনে মনে কহিলেন, “বামন হয়ে চাঁদে হাত কেন তোমার ? দরোশা ভাল নয় । দরাশা ক’রে কারও কখন ভাল হয় নাই । কি আশ্চয্য ! লোকের সহিত কিছু বলবার জো নাই, বলেই পাগল বলবে ।" ( দীঘ নিশ্বাস ) “টাকা না থাকলে বেচে থাকা বথা । আজ টাকা থাকলে আমার ভাবনা কি ?" (দীঘ নিবাস ) “কবিরা বলেন, টাকা অনথের মলে । কিন্ত তাঁরা বই লিখে মরেন কেন ? বিক্ৰী না হ’লেই বা দুঃখ করেন কেন ? পথিবী শঠতায় পরিপণ", এখানে কেহই মনের কথা কহে না । কহিবেই বা কেন ? মনের কথা প্রকাশ করলেই লোকে যেখানে পাগল বলে, সেখানে চপে ক’রে থাকাই ভাল।" ( দীঘ নিশ্বাস ) “সবণলতার বাপ যদি উইল ক’রে এত টাকা সবণকে না দিতেন, তা হ’লে এক দিন কারকে দিয়ে বলাতে পারতাম। কিন্ত উইল ক’রেই সে পথ বন্ধ হয়েছে।" ( দীঘ নিশ্বাস ) “আমি টাকা চাই না । এখনও ত উইল ওলটান যায় । কিন্তু আমি টাকা চাই নে ব’লে সবণ টাকা ছাড়বে কেন ? আমি তাকে যেমন ভালবাসি, সেও কি আমাকে তেমনি ভালবাসে ? কখনই হ’তে পারে না । আমি গরিবের ছেলে, আমাকে বড়মানুষে কেন ভালবাসবে ১ সে দিন আমার অবস্থার কথা শুনে অবধি আর আমার সঙ্গে কথা কহে না, আমাকে ডাকে না, আমি যেখানে যাই, সেখান থেকে চলে যায় ।" ( দীখ নিশ্বাস ) “সে যদি আমার জন্য না ভাবে, আমি কেন তার জন্যে ভেবে মরি ? ভেবেই বা ফল কি ? আর দুই তিন দিন পরে আমি চলে যাব । হয় ত আর এ জন্মে দ্বিতীয় বার দেখা হবে না ।" (দীঘ নিশ্বাস ) “দর করো ভাবনা ৷" এই বলিয়া একখানি পুস্তক হাতে লইয়া পড়িতে লাগিলেন । কিন্ত হাতে লওয়াই সার । পড়িতে আরম্ভ করিয়া তিন চারি পংক্তি পয্যন্ত মন সংযোগ করিয়া পাঠ করিলেন । পরে মন অন্য দিকে গেল । খানিক পড়িয়া দেখেন, যা পড়িয়াছেন, সকলই মিথ্যা হইয়াছে । এক বণও মনে নাই । আবার প্রথম হইতে আরম্ভ করিলেন । পুনৰবার তিন চারি পংক্তি পড়িয়া অন্যমনস্ক হইলেন । আবার খানিক পড়িয়া টের পাইলেন, কিছই মনে নাই । সেই প্রথমকার তিন পংক্তি ভিন্ন আর বঝিতে পারেন নাই । বিরক্ত হইয়া সেখানা ফেলিয়া দিয়া আর একখানা পুস্তক লইলেন। সেখানিও পড়িতে গিয়া ঐরাপ হইতে লাগিল ।