পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার মরনীতি So Y সংস্কারকগণকে আমি বলিতে চাই, আমি তাহাদের অপেক্ষ একজন বড় সংস্কারক। তাহারা একটু আধটু সংস্কার করিতে চান—আমি চাই আমূল সংস্কার । আমাদের প্রভেদ কেবল সংস্কারের প্রণালীতে। তাহাদের প্রণালীভাঙিয়া-চুরিয়া ফেল, আমার পদ্ধতি—সংগঠন। আমি সাময়িক সংস্কারে বিশ্বাসী নহি, আমি স্বাভাবিক উন্নতিতে বিশ্বাসী। আমি নিজেকে ঈশ্বরের স্থানে বসাইয়া সমাজকে "তোমায় এদিকে চলিতে হইবে, ওদিকে নয়’ বলিয়া আদেশ করিতে সাহস করি না । আমি কেবল সেই কাঠবিড়ালের মতো হইতে চাই, যে রামচন্দ্রের সেতুবন্ধনের সময় যথাসাধ্য এক অঞ্জলি বালুক বহন করিয়াই নিজেকে কৃতাৰ্থ মনে করিয়াছিল – ইহাই আমার ভাব। এই অদ্ভূত জাতীয় যন্ত্র শত শতাব্দী যাবৎ কাজ করিয়া আসিতেছে, এই অদ্ভূত জাতীয় জীবন-নদী আমাদের সম্মুখে প্রবাহিত হইতেছে—কে জানে, কে সাহস করিয়া বলিতে পারে, উহা ভাল কি মন্দ বা কিরূপে উহার গতি নিয়মিত হওয়া উচিত ? সহস্র ঘটনাচক্র উহাকে বিশেষরূপে বেগবিশিষ্ট করিয়াছে, তাই সময়ে সময়ে উহা মৃদু ও সময়ে সময়ে দ্রুত-গতিবিশিষ্ট হইতেছে। কে উহার গতি নিয়মিত করিতে সাহস করে ? গীতার উপদেশ অনুসারে আমাদিগকে কেবল কর্ম করিয়া যাইতে হইবে, ফলাফলের চিন্তা একেবারে পরিত্যাগ করিয়া শাস্তচিত্তে অবস্থান করিতে হইবে । জাতীয় জীবনের পুষ্টির জন্য যাহা আবশ্বক"তাহা উহাকে দিয়া যাও, কিন্তু উহা নিজের প্রকৃতি অনুযায়ী বিকশিত হইবে ; কাহারও সাধ্য নাই এইরূপে বিকশিত হও বলিয়া উপদেশ দিতে পারে। আমাদের সমাজে যথেষ্ট দোষ আছে ; অন্যান্য সমাজেও আছে। এখানে বিধবার অশ্রুপাতে সময় সময় ধরিত্রী সিক্ত হয়, সেখানে—পাশ্চাত্যদেশে জুনূঢ়া কুমারীগণের দীর্ঘনিশ্বাসে বায়ু বিষাক্ত। এখানে জীবন দারিদ্র্যবিষে জর্জরিত, সেখানে বিলাসিতার অবসাদে সমগ্র জাতি জীবন্মত ; এখানে লোক না থাইতে পাইয়া আত্মহত্যা করিতে যায়, সেখানে খাদ্যত্রব্যের প্রাচুর্ষে লোকে আত্মহত্যা করিয়া থাকে । দোষ সর্বত্র বিদ্যমান। ইহা পুরাতন বাতরোগের মতে, পা হইতে র করিলে, মাথায় ধরে ; মাথা হইতে তাড়াইলে উহা আবার অন্তত্ব সাশ্রয় লয়। কেবল এখান হইতে ওখানে তাড়াই বেড়ানো মাত্র-এই পর্বত্ত্ব