পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e " স্বামীজীর বাণী ও রচনা হে বালকগণ, অনিষ্টের মূলোচ্ছেদই প্রকৃত উপায়। আমাদের দর্শনশাস্ত্র শিক্ষা দেয়—ভাল ও মন্দ নিত্যসংযুক্ত, এক জিনিসেরই এপিঠ ওপিঠ। একটি লইলে অন্যটিকে লইতেই হইবে। সমুদ্রে একটা ঢেউ উঠিল—বুঝিতে হইবে কোথাও না কোথাও জল খানিকটা নামিয়াছে। শুধু তাই নয়, সমুদয় জীবনই দুঃখময় । কাহারও প্রাণনাশ না করিয়া নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ পর্যন্ত অসম্ভব ; এক টুকরা খাবার খাইতে হইলেও কাহাকে না কাহাকে বঞ্চিত করিতে হয়। ইহাই প্রকৃতির বিধান, ইহাই জীবন-দর্শন । এই কারণে আমাদিগকে এইটুকু বুঝিতে হইবে যে, সুমাজিক ব্যাধির প্রতিকার বাহিরের চেষ্ট দ্বারা হইবে না, মনের উপর কার্য করিবার চেষ্টা করিতে হইবে। আমরা যতই লম্বা লম্বা কথা বলি না কেন, বুঝিতে হইবে সমাজের দোষ সংশোধন করিতে হইলে প্রত্যক্ষভাবে চেষ্ট না করিয়া শিক্ষাদানের দ্বারা পরোক্ষভাবে উহার চেষ্টা করিতে হইবে। সমাজের দোষ-সংশোধন সম্বন্ধে প্রথমে এই তত্ত্বটি বুঝিতে হইবে ; এই তত্ত্ব বুঝিয়া আমাদের মনকে শাস্ত করিতে হইবে, ইহা বুঝিয়া আমাদের রক্ত হইতে ধর্মান্ধত একেবারে দূর করিয়া আমাদিগকে শাস্ত—উত্তেজনাশূন্ত হইতে হইবে। পৃথিবীর ইতিহাসও আমাদিগকে শিক্ষা দিতেছে যে, যেখানেই এইরূপ উত্তেজনার সহায়তায় কোন সংস্কার করিবার চেষ্ট হইয়াছে, তাহাতে এই মাত্র ফল দাড়াইয়াছে যে, যে-উদ্বেতে সংস্কার-চেষ্টা, সেই উদ্দেশুই বিফল হইয়াছে । আমেরিকায় দাস-ব্যবসায় রহিত করিবার জন্য যে যুদ্ধ হইয়াছিল, মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ইহা অপেক্ষা বৃহত্তর আন্দোলন কল্পনা করা যাইতে পারে না ; তোমাদের সকলেরই উহা জানা আছে। কিন্তু ইহার ফল কি হইয়াছে ? দাস-ব্যবসায় রহিত হইবার পুর্বে দাসদের যে অবস্থা ছিল, পরে তাহদের অবস্থা উহার অপেক্ষ শতগুণ মন্দ হইয়াছে। দাস-ব্যবসায় রহিত হইবার পুর্বে এই হতভাগ্য নিগ্রোগণ ব্যক্তিবিশেষের সম্পত্তিরূপে পরিগণিত হইত—নিজ সম্পত্তি-নাশের আশঙ্কায় অধিকারিগণকে দেখিতে হইত, যাহাতে তাহারা দুর্বল ও অকৰ্মণ্য হইয়া না পড়ে। কিন্তু এখন তাহারা কাহারও সম্পত্তি নহে, তাহাদের জীবনের এখন কিছুমাত্র মূল্য নাই ; এখন তাহাদিগকে সামান্ত ছুতা করিয়া জীবস্ত পুড়াইয়া ফেলা হয়, তাহাদিগকে গুলি করিয়া মারিয়া ফেলা হয় ; কিন্তু হত্যাকারীদের জন্ত কোন অাইন নাই, কারণ ইহার 'নিগার’—