পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতীয় জীবনে বোমুস্তের কার্যকারিতা > ○> অদ্বৈতবাদী প্রকৃতির পরিণাম স্বীকার করেন, আত্মার নয়। মনে কর, একটি যবনিকা রহিয়াছে, আর ঐ যবনিকাটিতে একটি ছোট ছিদ্র আছে। আমি ঐ যবনিকার অন্তরালে থাকিয়া এই মহতী জনতাকে দেখিতেছি। প্রথমে কেবল কয়েকটি মুখ দেখিতে পাইব । মনে কর, ছিদ্রটি বাড়িতে লাগিল ; ছিদ্রটি যতই বাড়িতে থাকিবে, ততই আমি এই সমবেত জনতার অধিকতর অংশকে দেখিতে পাইব । শেষে ছিদ্রটি বাড়িতে বাড়িতে যবনিকা ও ছিদ্র এক হইয়া যাইবে। তখন তোমাদের ও আমার মধ্যে কোন ব্যবধান থাকিবে না। এস্থলে তোমাদের বা আমার কোন পরিবর্তন হয় নাই । যাহা কিছু পরিবর্তন কেবল যবনিকাটিতে ঘটিয়াছে। তোমরা প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত একরূপই ছিলে, কেবল যবনিকাটির পরিবর্তন হইল। পরিণাম সম্বন্ধে অদ্বৈতবাদীর ইহাই মত ; প্রকৃতির পরিণাম ও অন্তরাত্মার প্রকাশ। আত্মা কোনরূপে সঙ্কুচিত হইতে পারে না, ইহা অপরিণামী ও অনন্ত। আত্মা যেন মায়ারূপ অবগুণ্ঠনে আবৃত হইয়াছিল—মতই এই মায়ার আবরণ ক্ষীণ হইতে ক্ষীণতর হয়, ততই আত্মা সহজাত স্বাভাবিক মহিমায় প্রকাশিত হয় এবং ক্রমশঃ অধিকতর অভিব্যক্ত হইতে থাকে । ভারতের নিকট এই মহান তত্ত্বটি শিখিবার জন্য পৃথিবীর লোক অপেক্ষ করিতেছে ; তাহারা যাহাই বলুক, যতই নিজেদের গরিমা প্রকাশ করিবার চেষ্টা করুক, ক্রমশঃ যতই দিন যাইবে তাহারা বুঝিবে, এই তত্ত্ব স্বীকার না করিয়া কোন সমাজই টিকিতে পারে না । তোমরা কি দেখিতেছি না, সকল বিষয়েই কিরূপ গুরুতর পরিবর্তন হইতেছে ? তোমরা কি দেখিতেছ না, পুর্বে সবই স্বভাবতঃ মন্দ বলিয়া গ্রহণ করিবার রীতি ছিল, কিন্তু এখন উহা স্বভাবতঃ ভাল বলিয়। প্রমাণিত হইতেছে ? কি শিক্ষাপ্রণালীতে, কি অপরাধিগণের শাস্তি.বিধানে, কি উন্মাদের চিকিৎসায়, এমন কি, সাধারণ ব্যাধির চিকিৎসায় পর্যন্ত প্রাচীন নিয়ম ছিল—সবই স্বভাবতঃ মন্দ বলিয়া ধরিয়া লওয়া। আধুনিক নিয়ম কি ? অাধুনিক বিধান বলে, শরীর স্বভাবতই মুস্থ, নিজ প্রকৃতিবশে ব্যাধির উপশম করিয়া থাকে ঔষধ বড় জোর শরীরের মধ্যে যে সারপদার্থ আছে,তাহ সঞ্চয় করিতে সাহায্য করে। অপরাধীদের সম্বন্ধে এই নববিধান কি বলে ? নূতন ৱিধান স্বীকার করিয়া থাকে, কোন অপরাধী ব্যক্তি যতই হীন হউক, তাহার মধ্যে যে-দেবত্ব রহিয়াছে, তাহার কখনও পরিবর্তন হয় না, সুতরাং অপরাধিগণের প্রতি আমাদের সেইরূপ ব্যবহার করা উচিত।