পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢ ९ স্বামীজীর বাণী ও রচনা সমন্বয়ের ভাব দেখাইতে পারেন নাই, এই উনবিংশ শতাব্দীতে রামকৃষ্ণ পরমহংসের দ্বারা তাহা সাধিত হইয়াছে। s’ দ্বিতীয়তঃ নিষ্কাম কর্ম—এই নিষ্কাম কর্ম অর্থে আজকাল অনেকে অনেকরুপবুঝিয়া থাকেন। কেহ কেহ বলেন, নিষ্কাম হওয়ার অর্থ—উদেশ্বহীন হওয়া। বাস্তবিক তাহাই যদি ইহার অর্থ হয়, তাহা হইলে তো হৃদয়শূন্ত পশুরা এবং দেয়ালগুলিও নিষ্কাম কর্মী ; অনেকে আবার জনকের উদাহরণে নিজেকে নিষ্কাম কর্মিরূপে পরিচিত করিতে ইচ্ছা করেন । কিন্তু জনক তো পুত্রোৎপাদন করেন নাই, কিন্তু ইহারা পুত্রোৎপাদন করিয়াই জনকবং পরিচিত হইতে চাহেন। প্রকৃত নিষ্কাম কর্মী পশুবং জড়প্রকৃতি বা হৃদয়শূন্য নহেন। র্তাহার অন্তর এতদূর ভালবাসায় ও সহানুভূতিতে পরিপূর্ণ যে, তিনি সমগ্র জগৎকে প্রেমের সহিত আলিঙ্গন করিতে পারেন। এরূপ প্রেম ও সহানুভূতি লোকে সচরাচর বুঝিতে পারে না। এই সমন্বয়ভাব ও নিষ্কাম কর্ম—এই দুইটি গীতার বিশেষত্ব । গীতার একটি শ্লোক এক্ষণে গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় হইতে একটু পাঠ করা যাক। তং তথা কৃপয়াবিষ্টম ইত্যাদি শ্লোকে কি সুন্দর কবিত্বের ভাবে অজুনের অরস্থাটি বর্ণিত হইয়াছে! তারপর শ্ৰীকৃষ্ণ অজুনকে উপদেশ দিতেছেন, "ক্লৈব্যং মাস্ম গম: পার্থী—এই স্থানে অজুনকে ভগবান যুদ্ধে প্রবৃত্তি দিতেছেন কেন ? অজুনের বাস্তবিক সত্ত্বগুণ উদ্রিক্ত হইয়া যুদ্ধে অপ্রবৃত্তি হয় নাই ; তমোগুণ হইতেই যুদ্ধে । অনিচ্ছা হইয়াছিল। সত্ত্বগুণী ব্যক্তিদের স্বভাব এই যে, তাহারা অন্য সময়ে যেরূপ শান্ত,বিপদের সময়ও সেরূপ ধীর। অজুনের ভয় আসিয়াছিল। আর তাহার ভিতরে যে যুদ্ধপ্রবৃত্তি ছিল, তাহার প্রমাণ এই—তিনি যুদ্ধ করিতেই যুদ্ধক্ষেত্রে ' আসিয়াছিলেন । সচরাচর আমাদের জীবনেও এইরূপ ব্যাপার দেথা যায় । অনেকে মনে করেন, আমরা সত্ত্বগুণী ; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহারা তমোগুণী । অনেকে অতি অশুচি ভাবে থাকিয়া মনে করেন, আমরা পরমহংস। কারণ, শাস্ত্রে আছে—পরমহংসের জড়োন্মত্তপিশাচবৎ’ হইয়া থাকেন। পরমহংসদিগের সহিত বালকের তুলনা করা হয়, কিন্তু তথায় বুঝিতে হইবে ঐ তুলনা একদেশী। পরমহংস ও বালক কখনই অভিন্ন নহে। একজন জ্ঞানের অতীত