পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভক্তি ** > নিন্দা করিতে পারেন, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আবার আপনাদিগকে বাধ্য হইয়া আর একখানি নৃত্তন পুরাণ প্রণয়ন করিতে হইবে । ধরুন, আমাদের মধ্যে কোন মহাপুরুষের আবির্ভাব হইল—তিনি এই-সকল প্রাচীন পুরাণ অস্বীকার করিলেন ; তাহার দেহত্যাগের পর বিশ বৎসর যাইতে না যাইতে দেখিবেন, তাহার শিষ্যেরা তাহার জীবন অবলম্বন করিয়াই একখানি পুরাণ রচনা করিয়া ফেলিবে । পুরাণ ছাড়িবার জো নাই, প্রাচীন পুরাণ ও আধুনিক পুরাণ– এইটুকুমাত্র পার্থক্য। মানুষের প্রকৃতিই ইহা চাহিয়া থাকে যাহারা সমুদয় মানবীয় দুর্বলতার অতীত হইয়া প্রকৃত পরমহংসোচিত নিৰ্ভীকতা লাভ করিয়াছেন, র্যাহারা মায়ার বন্ধন, এমন কি স্বাভাবিক অভাবগুলি পর্যন্ত অতিক্রম করিয়াছেন, শুধু সেই বিজয়মহিমায় মণ্ডিত দেবমানবদেরই খুরাণের প্রয়োজন নাই । - ব্যক্তিবিশেষ ঈশ্বরকে উপাসনা না করিলে সাধারণ মানুষের চলে না । যদি সে প্রকৃতির মধ্যে অবস্থিত ভগবানের পুজা না করে, তবে তাহাকে স্ত্রী-পুত্র, পিতা-বন্ধু, আচার্য বা অন্য কোন ব্যক্তিকে ভগবানের স্থলাভিষিক্ত করিয়৷ পূজা করিতেই হইবে । পুরুষ অপেক্ষ নারীগণের আবার ইহা অধিক আবখ্যক । আলোকের স্পন্দন সর্বত্রই থাকিতে পারে, অন্ধকার স্থানেও থাকিতে পারে ; বিড়াল ও অন্যান্য জন্তু অন্ধকারেও দেখিতে পায়, এই ঘটনা হইতেই ইহা অনুমিত হয়। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিগোচর হইতে হইলে আমরা যে স্তরে বুয়োছি, আলোককে তদুপযোগী স্তরের স্পন্দনবিশিষ্ট হইতে হইবে । সুতরাং আমরা এক নিগুৰ্ণ নিরাকার-সত্তা প্রভৃতি সম্বন্ধে কথা বলিতে পারি বটে, কিন্তু যতদিন আমরা সাধারণ মর্ত্যজীব, ততদিন আমাদিগকে কেবল মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর দর্শন করিতে হইবে। অতএব আমাদের ভগবানের ধারণা ও উপসন৷ স্বভাবতই মানুষ-ভাবাপন্ন। সত্য সত্যই এই শরীর ভগবানের শ্রেষ্ঠ মন্দির। সেই জন্যই দেখিতে পাই, যুগযুগান্তর ধরিয়া লোকে মাহুষের উপাসনা করিয়া আসিতেছে, আর যদিও ঐ সঙ্গে স্বভাবতঃ যে-সকল বাড়াবাড়ি হইয়া থাকে, তাহাদুর অনেকগুলি আমরা নিন্দ বা সমালোচনা করিতে পারি, তথাপি আমরা সঙ্গে সঙ্গে দেখিতে পাই যে, উহার মর্মদেশ অটুট রহিয়াছে ; এই-সব বাড়াবাড়ি সত্ত্বেও, এই সকল চরমে উঠা সত্বেও এই প্রচারিত মতবাদে সার আছে, উহার অন্তরত্নম ভাগ খাটি ও স্বল্প-উহার একটা মেরুদও আছে।