পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজপুতানায় স্বামীজী লাহোর হইতে দেরাদুন, সাহারানপুর, দিল্লী, রাজপুতানার অন্তর্গত আলোয়ার ও জয়পুর হইয়া থেতড়ি গমন করেন। সর্বত্রই তিনি শিল্প, ভক্ত ও অনুরাগী বন্ধুদের সহিত আলাপ আলোচনা ও ধর্ম-প্রসঙ্গ করেন এবং ছোট ছোট বক্তৃতা দেন । খেতড়ি জয়পুরের অধীনে একটি ক্ষুন্ত্র রাজ্য। থেতড়ির রাজা অগ্রবর্তী হইয়া স্বামীজীর পাদব্যদনা করেন এবং ছয়ঘোড়ার গাড়িতে স্বামীজীকে তুলিয়া থেতড়িতে উপনীত হন । ১৭ই ডিসেম্বর, ১৮৯৭ খৃঃ স্থানীয় স্কুলগৃহে এক সভায় স্বামীজীকে এক অভিনন্দন প্রদত্ত হয় । সভাপতিত্ব করেন পেতড়িব রাজা । উত্তরে স্বামীজী বলেন : ভারতের উন্নতিকল্পে আমি সামান্য যাহা করিয়াছি, রাজাজীর সহিত সাক্ষাৎ না হইলে তাহা অামি করিতে পারিতাম না। পাশ্চাত্যদেশের আদর্শ ভোগ এবং প্রাচ্যদেশের—ত্যাগ । খেতড়িনিবাসী যুবকগণ, পাশ্চাত্য আদর্শের চাকচিক্যে বিহ্বল না হইয়া দৃঢ়ভাবে প্রাচ্য আদশের অনুসরণ কর। শিক্ষা অর্থে মানবের মধ্যে পূর্ব হইতেই যে-ঈশ্বরত্ব রহিয়াছে, তাহাই প্রকাশ করা । অতএব শিশুদের শিক্ষা দিতে হইলে তাহাদের প্রতি অগাধবিশ্বাস-সম্পন্ন হইতে হইবে, বিশ্বাস করিতে হইবে যে, প্রত্যেক শিশুই অনস্ত ঈশ্বরীয় শক্তির আধারস্বরূপ, আর আমাদিগকে তাহার মধ্যে অবস্থিত সেই নিদ্রিত ব্ৰহ্মকে জাগ্রত করিবার চেষ্টা করিতে হইবে । শিশুদিগকে শিক্ষা দিবার সময় আর একটি বিষয় আমাদিগকে স্মরণ রাখিতে হইবে—তাহারাওঁ যাহাতে নিজেরা চিস্তা করিতে শিখে, সেই বিষয়ে তাহাদিগকে উৎসাহ দিতে হইবুে । এই মৌলিক চিস্তার অভাবই ভারতের বর্তমান হীনাবস্থার কারণ। যদি এই ভাবে ছেলেদের শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে তাহার মানুষ হইবে এবং জীবন-সংগ্রামে নিজেদের সমস্যা সমাধান করিতে সমর্থ হইবে ।