পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘সামাজিক সম্মেলন অভিভাষণ’ ף כסי অস্বীকার করবার একটা উৎকট ভাব আছে, তা থেকে একটু নরম স্বরে নেমে ইসলামপন্থীদেরও দলকে দল ভিক্ষু সন্ন্যাসীকে গ্রহণ করতে হয়েছে । সন্ন্যাসী আবার হরেক রকমের—কেউ পুরা মাথা-কামানো, কেউ খানিকট কামানে, দীর্ঘকেশ, হ্রস্বকেশ, জটাজুটধারী এবং অন্যান্য নানাবিধ ঢঙের কেশবিশিষ্ট সন্ন্যাসী আছেন । আবার এদের পোশাকের তারতম্যও অনেক—কেউ দিগম্বর, কেউ চৗরাস্বর, কেউ কাষায়ধারী, কেউ পীতাম্বর—আবার কৃষ্ণাঙ্গর খ্ৰীষ্টান ও নীলাম্বর মুসলমান রয়েছেন। আবার ঐ সন্ন্যাসি-সম্প্রদায়ের মধ্যে একদল নানারূপে দেহকে কষ্ট দিয়ে তপস্যার পক্ষপাতী, অপর একদল বলেন—শরীরমাদ্যং খলু ধর্মসাধনম’, ‘ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যং মূলমুত্তমম্।’ প্রাচীনকালে প্রত্যেক দেশেই সন্ন্যাসীর ভিতর একদল যোদ্ধ ছিল—নাগ-সন্ন্যাসীর দল চিরকালই ছিল । পুরুষজাতির ন্যায় নারীজাতির ভিতরও একই ত্যাগের ভাব এবং সদৃশ শক্তিপ্রকাশ ঠিক যেন সমান্তরাল রেখায় চলে আসছে। সন্ন্যাসীর ন্যায় সন্ন্যাসিনী-সম্প্রদায়ও বরাবর ছিল, এখনও আছে। মিঃ রানাডে শুধু যে ভারতীয় সামাজিক সম্মেলনেব সভাপতিপদ অলঙ্কৃত করেছেন তা নয়, তিনি নারীজাতির মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে সদা-বদ্ধপরিকর একজন মহাশয় ব্যক্তিও দেখছি । শ্রীতি ও স্মৃতিতে যে সন্ন্যাসিনীবৃন্দের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়, তাতে তার সম্পূর্ণ সম্মতি আছে বলে বোপ হচ্ছে। প্রাচীনকালের অবিবাহিত। ব্রহ্মবাদিনীরা, যারা বড় বড় দার্শনিকগণকে তর্কযুদ্ধে আহবান ক’রে এক রাজসভা থেকে আর এক রাজসভায় ঘুরে বেড়াতেন, তারা স্বষ্টিকর্তা ঈশ্বরের মুখ্য উদ্দেশ্য যে বংশবৃদ্ধি তাতে বাধা দিয়েছেন ব’লে তার আশঙ্কা নেই,—এই রকমই মনে হয় ; আর মিঃ রানাডের মতে— পুরুষর সন্ন্যাসী হয়ে যেমন মানবীয় অভিজ্ঞতার পূর্ণত ও বৈচিত্র্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, নারীরাও সেই একই প্রকার কার্যপ্রণালীর অমুসরণ ক’রে ঐরূপ বঞ্চিত হয়েছেন, তা বোধ হয় না । সুতরাং আমরা প্রাচীন সন্ন্যাসিনীকুল ও তাহাদের আধুনিক আধ্যাত্মিক বংশধরগণকে মিঃ রানাডের সমালোচনা-পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব’লে ছেড়ে দিলাম । তা হ’লে চূড়ান্ত দোষী পুরুষকেই শুধু মিঃ রানাডের সমালোচনার সব চোটটা সহ্য করতে হচ্ছে । এখন দেখা যাক, এই চোটটা খেয়েও সে সামলে উঠতে পারে"কিনা।