পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 স্বামীজীর বাণী ও রচনা পুরুষাৰ্থ বলিয়া প্রচার করে, যদি কেহ জড়জগৎকেই ঈশ্বরং বলিয়া প্রচার করে, তবে সে মিথ্যাবাদী । এই পবিত্র ভারতভূমিতে তাহার স্থান নাই— ভারতের লোক তাহার কথা শুনিতে চায় না। পাশ্চাত্য সভ্যতার যতই চাকচিক্য ও ঔজ্জ্বল্য থাকুক না কেন, উহা যতই অদ্ভূত ব্যাপারসমূহ প্রদর্শন করুক না কেন, আমি এই সভায় দাড়াইয়া তাহাদিগকে মুক্তকণ্ঠে বলিতেছি, ও-সব মিথ্যা, ভ্রাস্তি—দ্রান্তিমাত্র । ঈশ্বরই একমাত্র সত্য, আত্মাই একমাত্র সত্য, ধর্মই একমাত্র সত্য। ঐ সত্য ধরিয়া থাকে । তথাপি আমাদের যে-সব ভ্রাতারা এখনও উচ্চতম সত্যের অধিকারী হয় নাই, তাহাদের পক্ষে হয়তো এক প্রকার জড়বাদ কল্যাণের কারণ হইতে পারে—অবশ্য উহাকে আমাদের প্রয়োজনের উপযোগী করিয়া লইতে হইবে । সকল দেশেই, সকল সমাজেই একটি বিষম ভ্ৰম চলিয়া আসিতেছে । আর বিশেষ দুঃখের বিষয় এই যে-ভারতে পূর্বে এই ভ্রম কখনও হয় নাই, কিছুদিন যাবৎ সেখানেও এই ভ্রাস্তি প্রবেশ করিয়াছে । সেই ভ্ৰম এই : অধিকারী বিচার না করিয়া সকলের জন্য একই ধরনের ব্যবস্থা-প্রদান । প্রকৃতপক্ষে সকলের পথ এক নহে । তুমি যে সাধন-প্রণালী অবলম্বন করিয়াছ, আমারও সেই একই প্রণালী হইতে পারে না । তোমরা সকলে জানো, সন্ন্যাস-আশ্রমই হিন্দু-জীবনের চরম লক্ষ্য । আমাদের শাস্ত্র সকলকে সন্ন্যাসী হইতে আদেশ করিতেছেন । সংসারের সুখসমূদয় ভোগ করিয়া প্রত্যেক হিন্দুকেই জীবনের শেষভাগে সংসার ত্যাগ করিতে হইবে । যে তাহ না করে, সে হিন্দু নহে ; তাহার নিজেকে হিন্দু বলিয়া পরিচয় দিবার অধিকার নাই, সে শাস্ত্র অমান্য করে। যখন ভোগের দ্বারা প্রাণে প্রাণে বুঝিবে যে, সংসার অসার –তখন তোমাকে সংসার ত্যাগ করিতে হইবে। আমরা জানি-ইহাই হিন্দুর আদর্শ। যখন ভালরূপে পরীক্ষা করিয়া বুঝিবে, সংসারফলের ভিতরটা ভূয়ামাত্র –আমডার মতো উহার ‘র্তাটিও চামড়া’ই সার, তখন সংসার ত্যাগ করিয়া যেখান হইতে আসিয়াছ, সেখানে ফিরিবার চেষ্টা, কর । মন যেন চক্রগতিতে সম্মুখে ইন্দ্রিয়ের দিকে ধাবমান হইতেছে—উহাকে আবার ফিরিয়া পশ্চাতে আসিতে হইবে । প্রবৃত্তিমাৰ্গ ত্যাগ করিয়া নিবৃত্তিমার্গের আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইবে –ইহাই আদর্শ। কিন্তু কিছু পরিমাণ অভিজ্ঞতা হইলে তবে এই আদর্শ ধরিতে পারা যায়। শিশুকে ত্যাগের তত্ত্ব শেখানো যায় না । সে জন্মাবধি আশার স্বপ্ন দেখিতেছে। ইন্দ্ৰিয়েই তাহার