পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

있● স্বামীজীর বাণী ও রচনা অতএব দেখা গেল, যে-ব্যক্তি নিজেকে বশীভূত করিয়াছে, বাহিরের কোন বস্তু তাহার উপর ক্রিয় করিতে পারে না, তাহাকে আর কাহারও দাসত্ব করিতে হয় না। তাহার মন মুক্ত। এরূপ ব্যক্তিই জগতে স্থখে স্বচ্ছন্দে বাস করিবার ধোগ্য। আমরা সচরাচর দুই মতের মানুষ দেখিতে পাই । কেহ কেহ দুঃখবাদী—র্তাহারা বলেন, এ পৃথিবী কি ভয়ানক, কি অসৎ ! অপর কতকগুলি ব্যক্তি মুখবাদী—র্তাহারা বলেন, এই জগৎ কি স্বন্দর, কি অপূর্ব ! যাহারা নিজেদের মন জয় করেন নাই, তাহাদের পক্ষে এই জগৎ দুঃখে পূর্ণ, অথবা সুখদু:খমিশ্রিত বলিয়া প্রতিভাত হয়। আমরা যখন আমাদের মনকে বশীভুত করিতে পারিব, তখন এই সংসার আবার স্বখের বলিয়া মনে হইবে। তখন কোন কিছুই আমাদের মনে ভাল বা মন্দ ভাব উৎপন্ন করিতে পরিবে না। আমরা সবই বেশ যথাস্থানে সামঞ্জস্য-পূর্ণ দেখিতে পাইব । যাহারা প্রথমে সংসারকে নরককুণ্ড বলিয়া মনে করে, তাহারাই আত্মসংযমে সমর্থ হইলে এই জগৎকে স্বর্গ বলিবে । আমরা যদি প্রকৃত কর্মযোগী হই এবং নিজদিগকে এই অবস্থায় লইয়া যাইবার জন্য শিক্ষিত করিতে ইচ্ছা করি, তবে আমরা যেখানেই আরম্ভ করি না কেন, পরিশেষে পূর্ণ আত্মত্যাগের অবস্থায় উপনীত হইবই ; যখনই এই কল্পিত “অহং’ চলিয়া যায়, তখনই যে-জগৎ প্রথমে অমঙ্গলপূর্ণ বলিয়। মনে হয়, তাহ পরমানন্দে পূর্ণ এবং স্বর্গ বলিয়। বোধ হইবে । ইহার হাওয়া পর্যন্ত শাস্তিতে পূর্ণ হইয়। যাইবে, প্রত্যেক মানুষের মুখচ্ছবি ভাল বলিয়া বোধ হইবে । ইহাই কর্মযোগের চরম গতি ও উদ্দেশু, এবং ইহাই কর্মজীবনে পূর্ণতা বা সিদ্ধি। - ( অতএব দেখিতেছ, এই ভিন্ন ভিন্ন যোগ পরস্পর-বিরোধী নয়। প্রত্যেকটিই আমাদিগকে একই লক্ষ্যে লইয়া যায়, পূর্ণ করিয়া দেয়। কিন্তু প্রত্যেকটিই দৃঢ়ভাবে অভ্যাস করিতে হইবে। অভ্যাসই সিদ্ধির সমগ রহস্য । প্রথমে শ্রবণ, তারপর মনন, তারপর অভ্যাস—প্রত্যেক যোগ সম্বন্ধেই ইহা সত্য। প্রথমে শুনিতে হইবে, তারপর বুঝিতে হইবে । অনেক বিষয় যাহা একেবারে বুঝিতে পার না, তাহা পুনঃ পুনঃ শ্রবণ ও মননের ফলে স্পষ্ট হইয়া যাইবে। সব বিষয় শোনামাত্রই বুঝা বড় কঠিন। প্রত্যেক, বিষয়ের ব্যাখ্যা তোমার নিজের ভিতরে। কেহই প্রকৃতপক্ষে