পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তি · ১২৯ দুঃখ আসিবে। আমার বাড়ি’, ‘আমার শরীর' এরূপও বলিও না । এইখানেই মুশকিল। এই শরীর তোমারও নয়, আমারও নয়, কাহারও নয়। এগুলি প্রকৃতির নিয়মে আলিতেছে, বাইতেছে ; কিন্তু আমরা মুক্ত— সাক্ষিস্বৰূপ। একখানি ছবি বা দেওয়ালের যতটুকু স্বাধীনতা আছে, শরীরের তদপেক্ষা বেশী নাই । একটা শরীরের প্রতি আমরা এত আসক্ত হইব কেন ? যদি কেহ একখানি ছবি অঁাকে, সেটি শেষ করিয়৷ অন্তটিতে হাত দেয়। ‘আমি উহ। অধিকার করিব?—বলিয়া স্বার্থজাল বিস্তার করিও না। যখনই এই স্বার্থজাল বিস্তৃত হয়, তখনই দুঃখের.আরম্ভ । অতএব কর্মযোগে বলা হয় : প্রথমে এই স্বার্থপরতার জাল বিস্তার করিবার প্রবণতা বিনষ্ট কর, যখন উহ দমন করিবার শক্তি লাভ করিবে, তখন মনকে আর স্বার্থপরতার তরঙ্গে পরিণত হইতে দিও না। তারপর সংসারে গিয়া যত পারে। কর্ম কর, সর্বত্র গিয়া মেলামেশা কর, যেখানে ইচ্ছা যাও, মন্দের স্পর্শ তোমাকে কখনই দূষিত করিতে পারিবে না। পদ্মপত্র জলে রহিয়াছে, উহাতে জল যেমন কখনও লিপ্ত হয় না, তুমিও সেইভাবে সংসারে থাকিবে ; ইহাই বৈরাগ্য’ বা অনাসক্তি। মনে হয়, তোমাদিগকে বলিয়াছি ষে, অনাসক্তি ব্যতীত কোন প্রকার ‘যোগ’ই হইতে পারে না। অনাসক্তি সকল ষোগেরই ভিত্তি। যে-ব্যক্তি গৃহে বাস, উত্তম বস্ত্র পরিধান এবং স্থখাদ্য ভোজন পরিত্যাগ করিয়া মরুভূমিতে গিয়া থাকে, সে অতিশয় আসক্ত হইতে পারে। তাহার একমাত্র সম্বল নিজের শরীর তাহার নিকট সর্বস্ব হইতে পারে, ক্রমশঃ তাহাকে তাহার দেহের জন্যই প্রাণপণ সংগ্রাম করিতে হুইবে । অনাসক্তি বাহিরের শরীরকে লইয়া নয়, অনাসক্তি মনে । “আমি ও আমার’—এই বন্ধনের শৃঙ্খল মনেই রহিয়াছে। যদি শরীরের সহিত এবং ইন্দ্রিয়ভোগ্য বিষয়সমূহের সহিত এই ৰোগ না থাকে, তবে আমরা যেখানেই থাকি না কেন, যাহাই হই না কেন, আমরা অনাসক্ত। একজন—সিংহাসনে উপবিষ্ট হইয়াও সম্পূর্ণ অনাসক্ত হইতে পারে, আর একজন হয়তো ছিন্নবস্ত্র পরিহিত হইয়াই ভয়ানক আসক্ত। প্রথমে আমাদিগকে এই অনাসক্ত অবস্থা লাভ করিতে হইবে, তারপর নিরস্তর কার্য করিতে হইবে। ষে কর্মপ্রণালী আমাদিগকে সর্বপ্রকার আসক্তি ত্যাগ করিতে সাহায্য করে, কর্মযোগ আমাদিগকে তাছাই দেখাইয়া দেয়। অবশ্য ইহা অতি কঠিন।