পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩২ স্বামীজীর বাণী ও রচনা কর্ম করিলেও আমরা ফল ভোগ করিব না, মন্দভাবে করিলেও চিন্তান্বিত হইব না। শাস্ত ও মুক্তভাবে কাজ করিয়া যাও। এই মুক্ত অবস্থা লাভ করা বড় কঠিন। দাসত্বকে কর্তব্য বলিয়া, দেহের প্রতি দেহের অস্বাভাবিক আসক্তিকে কর্তব্য বলিয়া ব্যাখ্যা করা কত সহজ ! সংসারে মানুষ টাকার জন্য বা অন্ত কিছুর জন্ত সংগ্রাম করে, চেষ্টা করে এবং আসক্ত হয়। জিজ্ঞাস। কর, কেন তাহারা উহা করিতেছে, তাহার। বলিবে, ইহা অামাদের কর্তব্য’। বাস্তবিক উহ। কাঞ্চনের জন্য অস্বাভাবিক তৃষ্ণামাত্র। এই তৃষ্ণাকে তাহার। কতকগুলি ফুল দিয়া ঢাকিবার চেষ্টা করিতেছে। তবে শেষ পর্যন্ত কর্তব্য বলিতে কি বুঝায় ? উহা কেবল দেহ-মনের আবেগ-আসক্তির তাড়না। কোন আসক্তি বদ্ধমূল হইয়া গেলেই আমরা তাহাকে কর্তব্য বলিয়া থাকি। দৃষ্টান্তস্বরূপ : যে-সব দেশে বিবাহ নাই, সে-সব দেশে স্বামি-স্ত্রীর মধ্যে কোন কর্তব্যও নাই। সমাজে যখন বিবাহপ্রথা প্রচলিত হয়, তখন স্বামী ও স্ত্রী আসক্তিবশতঃ একত্র বাস করে। পুরুষানুক্রমে এরূপ থাকার পর একত্র বাস করা রীতিতে পরিণত হয়, তখন উহ! কর্তব্য হইয়া দাড়ায়। বলিতে গেলে ইহা একপ্রকার পুরাতন ব্যাধি । রোগ যখন প্রবলাকারে দেখা দেয়, তখন আমরা উহাকে ‘ব্যারাম বলি ; যখন উহা স্থায়ী দাড়াইয়া যায়, উহাকে আমরা "স্বভাব’ বলিয়া থাকি। যাহাই হউক, উহা রোগমাত্র। আসক্তি যখন প্রকৃতিগত হইয়া যায় তখন উহাকে ‘কর্তব্য’রূপ আড়ম্বরপূর্ণ নামে অভিহিত করিয়া থাকি। আমরা উহার উপর ফুল ছড়াইয়া দিই, তদুপলক্ষে তুরীভেরীও বাজানো হয়, উহার জন্য শাস্ত্র হইতে মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়। তখন সমগ্র জগৎ ঐ কর্তব্যের অনুরোধে । সংগ্রামে মত্ত হয়, এবং মানুষ পরম্পরের দ্রব্য আগ্রহ-সহকারে অপহরণ করিতে থাকে । কর্তব্য এই হিসাবে কতকটা ভাল যে, উহাতে পশু-ভাব কিছুটা সংযত হয়। যাহারা অতিশয় নিম্নাধিকারী, যাহারা অন্য কোনরূপ আদর্শ ধারণা করিতে পারে না, তাহীদের পক্ষে কর্তব্য কিছুটা ভাল বটে ; কিন্তু র্যাহার কর্মযোগী হইতে ইচ্ছা করেন, তাহাদিগকে কর্তব্যের ভাব একেবারে দূত্র করিয়া দিতে হইবে । তোমার আমার পক্ষে কোন কর্তব্যই নাই। জগৎকে যাহ দিবার আছে অবশ্যই দাও, কিন্তু কর্তব্য বলিয়া নয়। উহার জন্ত ।