S88 স্বামীজীর বাণী ও রচনা এই জগৎ থাকিবে, ততদিন বৈষম্য থাকিবে ; স্থষ্টিচক্র যখন শেষ হইয়। যাইবে, তখনই পূর্ণ সাম্যভাবের স্বর্ণযুগ আলিৰে। তাহার পূর্বে সাম্যতাব আসিতে পারে না। তথাপি এই ভাব আমাদের এক প্রবল প্রেরণাশক্তি । স্বাক্টর জন্য যেমন বৈষম্য প্রয়োজন, তেমনি ঐ বৈষম্য সীমাবদ্ধ করার চেষ্টাও প্রয়োজন। বৈষম্য না থাকিলে স্বষ্টি থাকিত না, আবার সাম্য বা মুক্তিলাভের ও ঈশ্বরের নিকট ফিরিয়া যাইবার চেষ্টা না থাকিলেও স্বষ্টি থাকিত না । এই দুই শক্তির তারতম্যেই মানুষের অভিসন্ধিগুলির প্রকৃতি নিরূপিত হয়। কর্মের এই বিভিন্ন প্রেরণা চিরকাল থাকিবে, ইহাদের কতকগুলি মাকুযকে বন্ধনের দিকে এবং কতকগুলি মুক্তির দিকে চালিত করে। এই সংসার চক্রের ভিতরে চক্র’—এ বড় ভয়ানক যন্ত্র। ইহাতে যদি হাত দিই, তবে আটক পড়িলেই সর্বনাশ ! আমরা সকলেই ভাবি কোন বিশেষ কর্তব্য করা হইয়া গেলেই আমরা বিশ্রাম লাভ করিব ; কিন্তু ঐ কর্তব্যের কিছুটা করিবার পূর্বেই দেখি আর একটি কর্তব্য অপেক্ষা করিতেছে। এই বিশাল ও জটিল জগৎ-যন্ত্র আমাদের সকলকেই টানিয়া লইয়া যাইতেছে। ইহা হইতে বাচিবার দুষ্টটিমাত্র উপায় আছে : একটি—এই যন্ত্রের সহিত সংস্রব একেবারে ছাড়িয়া দেওয়া, উহাকে চলিতে দেওয়া এবং একধারে সরিয়া দাড়ানো—সকল বাসনা ত্যাগ করা। ইহা বলা খুব সহজ, কিন্তু করা একরূপ অসম্ভব। দুই কোটি লোকের মধ্যে একজন ইহা করিতে পাবে কি না, জানি না। অার একটি উপায়—এই জগতে ঝাপ দিয়া কর্মের রহস্য অবগত হওয়া— ইহাকেই ‘কমযোগ’ বলে। জগৎ-যন্ত্রের চক্র হইতে পলায়ন করিও না ; উহার ভিতরে থাকিয়া কর্মের রহস্য শিক্ষা কর । ভিতরে থাকিয়া যথাযথভাবে কর্ম করিয়াও এই কর্মচক্রের বাহিরে যাওয়া সম্ভব। এই যন্ত্রের মধ্য দিয়াই ইহার বাহিরে যাইবার পথ । আমরা এখন দেখিলাম, কর্ম কি। কর্ম প্রকৃতির ভিত্তির অংশবিশেষ-- কর্মপ্রবাহ সর্বদাই বহিয়া চলিয়াছে। যাহার ঈশ্বরে বিশ্বাণী, তাহারা ইহা আরও ভালরূপে বুঝিতে পারেন, কারণ র্তাহারা জানেন—ঈশ্বর এমন একজন অক্ষম পুরুষ নন যে, তিনি আমাদের সাহায্য চাহিবেন। যদিও এই "চরকাল চলিতে থাকিবে, আমাদের লক্ষ্য মুক্তি, আমাদের লক্ষ্য স্বার্থশূন্তত। কর্মযোগ অনুসারে কর্মের দ্বারাই আমাদিগকে ঐ লক্ষ্যে