পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সরল রাজযোগ, প্রাণায়ামের পূর্বে ঐ ত্রিকোণ-মণ্ডলকে ধ্যানে দেখবার চেষ্টা কর। চোখ বন্ধ করে এর ছবি মনে মনে স্পষ্টরূপে কল্পনা করবে। ভাবে, এর চারপাশে আগুনের শিখ, আর তার মাঝখানে কুণ্ডলীকৃত সর্প ঘুমিয়ে রয়েছে। ধ্যানে যখন এই কুণ্ডলিনী শক্তি স্পষ্টভাবে দেখতে পাবে, তখন কল্পনায় তাকে মেরুদণ্ডের মূলাধারে স্থাপন কর ; কুম্ভক-কালে শ্বাস রুদ্ধ রাখার সময় ( স্থপ্ত ) কুওলিনীকে জাগাবার জন্য ঐ রুদ্ধ বায়ু সৰলে তার মস্তকে নিক্ষেপ করবে। যার কল্পনা-শক্তি যত বেশী, সে তত শীঘ্ৰ ফল পায়, আর তার কুণ্ডলিনীও তত শীঘ্ৰ জাগেন। যতদিন তিনি না জাগেন, ততদিন কল্পনা কর—তিনি জেগেছেন। আর ঈড়া ও পিজলার গতি অহুভব করবার চেষ্টা কর, জোর ক’রে তাদের স্বযুম্না-পথে চালাতে সচেষ্ট হও । এতে কাজ খুব তাড়াতাড়ি হবে। চতুর্থ পাঠ মনকে সংযত করবার পূর্বে মনকে জানতে হবে। চঞ্চল মনকে সংযত ক’রে বিষয় থেকে টেনে এনে একটা ভাবে স্থির ক’রে রাখতে হবে। বারবার এইরকম করতে হবে। ইচ্ছাশক্তি দ্বারা মনকে সংযত ক’রে, রুদ্ধ ক’রে ভগবানের মহিমা চিন্তা কর । মনকে সংযত করবার সব চেয়ে সোজা উপায় চুপ করে বসে কিছুক্ষণের জন্য মনকে ছেড়ে দেওয়া, যেখানে সে ভেসে যেতে চায় যাক—দৃঢ়ভাবে চিন্তা করবে, ‘আমি দ্রষ্ট, সাক্ষী ; বসে ধসে মনের ভাসাডোবা—ভেসে-যাওয়া দেখছি । মন আমি নয়।’ তারপর মনটাকে দেখ। ভাবো, মন থেকে তুমি সম্পূর্ণরূপে পৃথক। ভগবানের সঙ্গে নিজেকে অভিন্নভাবে চিন্তা কর, জড়ৰস্তু বা মনের সঙ্গে নিজেকে এক ক’রে ফেলে না। কল্পনা কর—মন যেন তোমার সম্মুখে প্রসারিত একটা নিস্তরঙ্গ হ্রদ, এবং যে চিন্তাগুলি মনে উঠে মিলিয়ে যাচ্ছে, সেগুলি যেন হয়ে বুদবুদ উঠছে আর তার বুকে লয় পাচ্ছে। চিন্তাগুলিকে নিয়ন্ত্রিত করবার কোন চেষ্টা করে।