পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3 ebr স্বামীজীর বাণী ও রচনা একটি শ্রেণীর অপর প্রান্তে (শেষে ) যাইয়া বুঝিতে পারা যায়, তাহার নাম ক্রম । পতঞ্জলি এখানে ‘ক্রম’-শব্দের সংজ্ঞা দিতেছেন। যে পরিণামগুলি মুহূর্তকাল সম্বন্ধে সম্বন্ধ, 'ক্রম’ শব্দ দ্বারা সেগুলিকে বুঝাইতেছে। আমি চিন্তা করিতেছি, ইহারই মধ্যে কত মুহূর্ত চলিয়। গেল। এই প্রতি মুহুর্তেই ভাবের পরিবর্তন হইয়াছে, কিন্তু আমরা ঐ পরিণামগুলিকে একটি শ্রেণীর অন্তে (অর্থাৎ অনেক পরিণামশ্রেণীর পর ) ধরিতে পারি। ইহাকে ‘ক্রম" বলে। কিন্তু যে-মন সর্বব্যাপী হইয়া গিয়াছে, তাহার পক্ষে আর ‘ক্রম’ নাই। তাহার পক্ষে সবই বর্তমান হইয়া গিয়াছে। কেবল এই বর্তমানই তাহার নিকট উপস্থিত আছে, ভূত ও ভবিষ্যৎ তাহার জ্ঞান হইতে একেবারে চলিয়া গিয়াছে। তখন সেই মন কালকে জয় করে আর সমুদয় জ্ঞানই তাহার নিকট মুহূর্তের মধ্যে উদ্ভাসিত হয়। সবই তাহার নিকট বিদ্যুতের মতো এক ঝলকে প্রকাশ পায় । পুরুষার্থগুস্তানাং গুণানাং প্রতিপ্রসবঃ কৈবল্যং স্বরূপপ্রতিষ্ঠা বা চিভিশক্তেরিতি। ৩৩ ৷৷ —গুণসকলে যখন পুরুষের আর কোন প্রয়োজন থাকে না, তখন তাহাদের প্রতিলোমক্রমে লয়কে কৈবল্য’ বলে, অথবা উহাকে চিৎশক্তির (চৈতন্যশক্তির ) স্বরূপ-প্রতিষ্ঠা বলিতে পারা যায়। প্রকৃতির কার্য ফুরাইল। আমাদের পরম কল্যাণময়ী ধাত্রী প্রকৃতি ইচ্ছ। করিয়া ষে নিঃস্বার্থ কার্য নিজ স্বন্ধে লইয়াছিলেন, তাহ ফুরাইল। তিনি যেন আত্মবিশ্বত জীবাত্মার হাত ধরিয়া তাহাকে জগতে যত প্রকার ভোগ অাছে, ধীরে ধীরে সব ভোগ করাইলেন ; যত প্রকার প্রকৃতির অভিব্যক্তি-বিকার অাছে, সব দেখাইলেন। ক্রমশঃ তাহাকে নানাবিধ শরীরের মধ্য দিয়া উচ্চ হইতে উচ্চতর সোপানে লইয়া যাইতে লাগিলেন, শেষে আত্মা নিজ হারানো মহিমা ফিরিয়া পাইলেন, নিজ স্বরূপ পুনরায় তাহার স্মৃতিপথে উদিত হইল। তখন সেই করুণাময়ী জননী যে পথে আলিয়াছিলেন, সেই পথেই ফিরিয়া গেলেন এবং যাহারা এই পদচিহ্নহীন জীবনের মরুতে পথ হারাইয়াছে, তাহাদিগকে আবার পথ দেখাইতে প্রবৃত্ত হইলেন।