পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্তমান ভারত ૨૨ ૭ শূদ্রেরও গৃহে পদার্পণ করিতেছেন, প্রজারা রামচন্দ্রের যৌবরাজ্যে অভিষেক প্রার্থনা করিতেছে, সীতার বনবাসের জন্য গোপনে মন্ত্রণা করিতেছে, কিন্তু সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষ-সম্বন্ধে রাজ্যের প্রথা-স্বরূপ, প্রজাদের কোন বিষয়ে উচ্চবাচ্য নাই। প্রজাশক্তি আপনার ক্ষমতা অপ্রত্যক্ষভাবে বিশৃঙ্খলপে প্রকাশ করিতেছে। সে শক্তির অস্তিত্বে প্রজাবর্গের এখনও জ্ঞান হয় নাই। তাহাতে সমবায়ের উদ্যোগ বা ইচ্ছাও নাই ; সে কৌশলেরও সম্পূর্ণ অভাব, যাহা দ্বারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তিপুঞ্জ একীভূত হইয়া প্রচণ্ড বল সংগ্রহ করে। নিয়মের [ যে ] অভাব—তাহাও নহে ; নিয়ম আছে, প্রণালী আছে, নির্ধারিত অংশ আছে, কর-সংগ্রহ ও সৈন্যচালনা বা বিচার-সম্পাদন বা দণ্ডপুরস্কার সকল বিষয়েরই পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ম আছে, কিন্তু তাহার মূলে ঋষির আদেশ, দৈবশক্তি, ঈশ্বরাবেশ। তাহার স্থিতিস্থাপকত্ব একেবারেই নাই বলিলেই হয় এবং তাহতে প্রজাবর্গের সাধারণ মঙ্গলকর কার্য-সাধনোদেশে সহমতি হইবার বা সমবেত বুদ্ধিযোগে রাজগৃহীত প্রজার ধনে সাধারণ স্বত্ববুদ্ধি ও তাহার আয়-ব্যয়-নিয়মনের শক্তিলাভেচ্ছার কোন শিক্ষার সম্ভাবনা নাই। আবার ঐ সকল নির্দেশ-পুস্তকে । পুস্তকাবদ্ধ নিয়ম ও তাহার কার্যপরিণতি, এ দুয়ের মধ্যে দূর—অনেক। একজন রামচন্দ্র শত শত অগ্নিবর্ণের’ পরে জন্মগ্রহণ করেন । চণ্ডাশোকত্ব অনেক রাজাই আজন্ম দেখাইয়া যান, ধর্মাশোকত্ব*—অতি অল্পসংখ্যক । আকবরের ন্যায় প্রজারক্ষকের সংখ্যা আরঙ্গ জীবের ন্যায় প্রজাভক্ষকের অপেক্ষ অনেক অল্প । হউম যুধিষ্ঠির বা রামচন্দ্র বা ধর্মাশোক বা আকবর, পরে যাহার মুখে সর্বদা অন্ন তুলিয়া দেয়, তাহার ক্রমে নিজের অন্ন উঠাইয়া খাইবার শক্তি লোপ পায়। ১ অগ্নিবর্ণ—সুর্যবংশীয় রাজা-বিশেষ । ইনি প্রজাগণের সহিত সাক্ষাৎ না করিয়া দিবারাত্র অন্তঃপুরে কাটাইতেন। অতিরিক্ত ইন্দ্রিয়পরতাদোষে যক্ষ্মরোগে ইহার মৃত্যু হয় । ২ ধর্মাশোক-ভারতবর্ষের একচ্ছত্র সম্রাট অশোক । ভ্রাতৃহত্য প্রভৃতি নৃশংস কার্যের দ্বারা সিংহাসন লাভ করাতে ইনি পূর্বে চওশোক নামে খ্যাত ছিলেন। কথিত আছে, সিংহাসনলাভের প্রায় নয় বৎসর পরে, বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হইয় তাহার স্বভাবের অদ্ভুত পরিবর্তন হয়—ভাবত ও ভারতেতর দেশে বৌদ্ধধর্মের বহুল প্রচার তাহার দ্বারাই সাধিত হয়। ভারত, কাবুল, পারস্ত ও পালেস্তাইন প্রভৃতি দেশে অদ্যাবধি আবিষ্কৃত স্তুপ, স্তম্ভ এবং পর্বতগাত্রে খোদিত শাসনাদি ঐ বিষয়ে ভূরি সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে। এই প্রকার ধর্মামুরাগ এবং প্রজারঞ্জনের জন্তই ইনি পরে দেবানাং পিয়ে পিয়দশি ( দেবতাদের প্রিয় প্রিয়দর্শন ) ধর্মাশোক বলিয়া প্রসিদ্ধ হন।