পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্তমান ভারত বৈদিক পুরোহিতের শক্তি বৈদিক পুরোহিত মন্ত্রবলে বলীয়ান, দেবগণ র্তাহার মন্ত্রবলে আহত হইয়া পান-ভোজন গ্রহণ করেন ও যজমানকে অভীপিত ফল প্রদান করেন। ইহলৌকিক মঙ্গলের কামনায় প্রজাবৰ্গ, রাজন্তবর্গও তাহার দ্বারস্থ । রাজা সোম পুরোহিতের উপাস্ত, বরদ ও মন্ত্রপুষ্ট , আহুতিগ্রহণেপ, দেবগণ কাজেই পুরোহিতের উপর সদয় ; দৈববলের উপর মানব-বল কি করিতে পারে ? মানব-বলের কেন্দ্রীভূত রাজাও পুরোহিতবর্গের অনুগ্রহপ্রার্থী। তাহদের কৃপাদৃষ্টিই যথেষ্ট সাহায্য ; তাহদের আশীৰ্বাদ সর্বশ্রেষ্ঠ কর ; কখন বিভীষিকাসংকুল আদেশ, কখন সহৃদয় মন্ত্রণ, কখন কৌশলময় নীতিজাল-বিস্তার রাজশক্তিকে অনেক সময়েই পুরোহিতকুলের নির্দেশবর্তী করিয়াছে। সকলের উপর ভয়—পিতৃপুরুষদিগের নাম, নিজের যশোলিপি পুরোহিতের লেখনীর অধীন। মহাতেজস্বী, জীবদ্দশায় অতি কীর্তিমান, প্রজাবর্গের পিতৃমাতৃস্থানীয় হউন না কেন, মহাসমুদ্রে শিশিরবিন্দুপাতের ন্যায় কালসমুদ্রে তাহার যশস্বৰ্ষ চিরদিন অস্তমিত ; কেবল মহাসত্রাতুষ্ঠায়ী, অশ্বমেধযাজী, বর্ষার বারিদের ন্যায় পুরোহিতগণের উপর অজস্ৰ-ধন-বর্ষণকারী রাজগণের নামই পুরোহিতপ্রসাদে জাজল্যমান। দেবগণের প্রিয়, প্রিয়দশী ধর্মাশোক ব্রাহ্মণ্য-জগতে নাম-মাত্র-শেষ ; পরীক্ষিত জনমেজয় আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার চিরপরিচিত। রাজা ও প্রজার শক্তি রাজ্য-রক্ষা, নিজের বিলাস, বন্ধুবর্গের পুষ্টি ও সর্বাপেক্ষা পুরোহিতকুলের তুষ্টির নিমিত্ত রাজরবি প্রজাবৰ্গকে শোষণ করিতেন। বৈশ্বের রাজার খাদ্য, তাহার বেতী গাভী। কর-গ্রহণে, রাজ্য-রক্ষায় প্রজাবর্গের মতামতের বিশেষ অপেক্ষা নাই— হিন্দুজগতেও নাই, বৌদ্ধজগতেও তদ্রুপ। যদিও যুধিষ্ঠির বারণাবতে বৈশু ১ সোমলতা—বেদে উহা ‘রাজা সোম' নামে উক্ত ।