পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& óァ স্বামীজীর বাণী ও রচনা ভোজ্যদ্রব্যের ন্যায় নানাধাতুবিশিষ্ট শরীর ও অনস্তভাবতরঙ্গশালী চিত্তের আর কি প্রকৃষ্ট উপাদান ? কিন্তু যে খাদ্য দেহরক্ষণ ও মনের বলসমাধানে একান্ত আবশ্বক, তাহারই শেষাংশ যথাসময়ে শরীর হইতে বহিষ্কৃত হইতে না পারিলে সকল অনর্থের মূল হয়। ব্যষ্টি ও সমষ্টি জীবন সমষ্টির জীবনে ব্যষ্টির জীবন, সমষ্টির মুখে ব্যষ্টির মুখ, সমষ্টি ছাড়িয়া ব্যষ্টির অস্তিত্বই অসম্ভব, এ অনন্ত সত্য-জগতের মূল ভিত্তি। অনস্ত সমষ্টির দিকে সহানুভূতিযোগে তাহার মুখে স্থখ, দুঃখে দুঃখ ভোগ করিয়া শনৈঃ অগ্রসর হওয়াই ব্যষ্টির একমাত্র কর্তব্য। শুধু কর্তব্য নহে, ইহার ব্যতিক্রমে মৃত্যু-পালনে অমরত্ব। প্রকৃতির চক্ষে ধূলি দিবার শক্তি কাহার ? সমাজের চক্ষে অনেক দিন ষ্টুলি দেওয়া চলে না। উপরে আবর্জনারাশি যতই কেন সঞ্চিত হউক না, সেই স্তুপের তলদেশে গ্রেমস্বরূপ নিঃস্বার্থ সামাজিক জীবনের প্রাণস্পন্দন হইতেছে । সৰ্বংসহ ধরিত্রীর ন্যায় সমাজ অনেক সহেন, কিন্তু একদিন না একদিন জাগিয়া উঠেন এবং সে উদ্বোধনের বীর্যে যুগযুগাস্তের সঞ্চিত মলিনতা ও স্বার্থপরতারাশি দূরে নিক্ষিপ্ত হয়। তমসাচ্ছন্ন পাশবপ্রকৃতি মানুষ আমরা সহস্রবার ঠেকিয়াও এ মহান সত্যে বিশ্বাস করি না, সহস্রবার ঠকিয়াও আর ঠকাইতে যাই – উন্মত্তবৎ কল্পনা করি যে, আমরা প্রকৃতিকে বঞ্চনা করিতে সক্ষম । অত্যন্ত্ৰদশী—মনে করি, যে কোন প্রকারে হউক, নিজের স্বার্থসাধনই জীবনের চরম উদ্দেশ্য। বিদ্যা, বুদ্ধি, ধন, জন, বল, বীর্য-যাহ কিছু প্রকৃতি আমাদের নিকট সঞ্চিত করেন, তাহ পুনর্বার সঞ্চারের জন্য ; একথা মনে থাকে না— গচ্ছিত ধনে আত্মবুদ্ধি হয়, অমনিই সর্বনাশের স্বত্রপাত। প্রজাসমষ্টির শক্তিকেন্দ্ররূপ রাজা অতি শীঘ্রই ভুলিয়া যান যে, তাহাতে শক্তিসঞ্চয় কেবল সহস্ৰগুণমুংস্রষ্টং। বেণ * রাজার ন্যায় তিনি সর্ব- বেণ-ভাগবতোক্ত রাজা-বিশেষ। কথিত আছে, ইনি আপনাকে ব্ৰহ্ম৷ বিষ্ণু, মহেশ্বর— আদি দেবগণ অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ এবং পুজনীয় বলিয়া প্রচার করিতেন। ঋষিগণ র্তাহার এ অহঙ্কার দূর করিবার জন্ত কোন সময়ে সদ্বপদেশ দিতে আসিলে তিনি তাহদের তিরস্কার করেন এবং আপনাকেই পূজা করিতে বলায় তাহদের কোপানলে নিহত হন । ভগবান বিষ্ণুর অবতার বলিয়া গণ্য মহারাজ পৃথু এই বেণ রাজার বাহুমন্থনে উৎপন্ন।