পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিব্রাজক ፄ » ঐ যে ছড়ি, এক থেকে তিন মাস্তুল—লঙ্কা, মালদ্বীপ বা আরব থেকে নারকেল, খেজুর, শুটকি মাছ ইত্যাদি বোঝাই হয়ে আসে ; আর কত ব’লব, ওরা সব হলেন—‘অধঃশাখা প্রশাখা' । পালভরে জাহাজ চালানো একটি আশ্চর্য আবিস্ক্রিয়া । হাওয়া যে দিকে যাক না কেন, জাহাজ আপনার গম্যস্থানে পৌছবেই পৌছবে । তবে হাওয়া বিপক্ষ হ’লে একটু দেরি। পালওয়ালা জাহাজ কেমন দেখতে স্বন্দর, দূরে বোধ হয়, যেন বহুপক্ষবিশিষ্ট পক্ষিরাজ আকাশ থেকে নামছেন । পালের জাহাজ কিন্তু সোজা চলতে বড় পারেন না ; হাওয়া একটু বিপক্ষ হলেই একে বেঁকে চলতে হয়, তবে হাওয়া একেবারে বন্ধ হলেই মুস্কিল—পাখা গুটিয়ে বসে থাকতে হয় । মহ-বিষুবরেখার নিকটবতী দেশসমূহে এখনও মাঝে মাঝে এইরূপ হয়। এখন পাল-জাহাজেও কাঠ-কাঠর কম, তিনিও লৌহনির্মিত । পাল-জাহাজের কাপ্তানি করা বা মাল্লাগিরি করা স্ট্রীমার অপেক্ষ অনেক শক্ত, এবং পাল-জাহাজে অভিজ্ঞতা না থাকলে ভাল কাপ্তান কখনও হয় না। প্রতি পদে হাওয়৷ চেনা, অনেক দূর থেকে সঙ্কট জায়গার জন্ত হুশিয়ার হওয়া, ষ্টীমার অপেক্ষা এ দুটি জিনিস পাল-জাহাজে অত্যাবশ্যক। স্ট্রমার অনেকটা হাতের মধ্যে, কল মুহূর্তমধ্যে বন্ধ করা যায়। সামনে পেছনে আশে পাশে যেমন ইচ্ছা অল্প সময়ের মধ্যে ফিরানো যায়। পাল-জাহাজ হাওয়ার হাতে। পাল খুলতে, বন্ধ করতে, হাল ফেরাতে হয়তো জাহাজ চড়ায় লেগে যেতে পারে, ডুবো পাহাড়ের উপর চড়ে যেতে পারে, অথবা অন্য জাহাজের সহিত ধাক্কা লাগতে পারে। এখন আর যাত্রী বড় পাল-জাহাজে যায় না, কুলী ছাড়া । পাল-জাহাজ প্রায় মাল নিয়ে যায়, তাও তুন প্রভৃতি খেলো মাল। ছোট ছোট পাল-জাহাজ, যেমন হুড়ি প্রভৃতি, কিনারায় বাণিজ্য করে। সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে টানবার জন্য ষ্টীমার ভাড়া ক'রে হাজার হাজার টাকা টেক্স দিয়ে পাল-জাহাজের পোষায় না। পাল-জাহাজ আফ্রিকা ঘুরে ছ-মাসে ইংলণ্ডে যায়। পাল-জাহাজের এই সকল বাধার জন্য তখনকার জল-যুদ্ধ সঙ্কটের ছিল। একটু হাওয়ার এদিক ওদিক, একটু সমুদ্র-স্রোতের এদিক ওদিকে হার জিত হয়ে যেত। আবার সে সকল জাহাজ কাঠের ছিল। যুদ্ধের সময় ক্রমাগত আগুন লাগত, আর সে আগুন নিতে হত। সে জাহাজের গঠনও আর এক রকমের ছিল। একদিক ছিল চেপটা আর অনেক উচু, পাচ-তল।