পাতা:স্বামী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী Rby~ বলুলুম, “মাথাধরা আমার ছেড়ে গেছে, আর ঘুমোবাে না।” তিনি বললেন, “তবে সবুর কর, ওষুধটা তোমার কপালে লাগিয়ে দিই৷” বলে উঠে গিয়ে কি একটা নিয়ে এসে ধীরে ধীরে আমার কপালে ঘষে দিতে লাগলেন। আমি ঠিক ইচ্ছে ক’রেই যে কবুলুম, তা নয়, কিন্তু আমার ডান-হাতটা কেমন ক’রে র্তার কোলের ওপর গিয়ে পড়তেই তিনি একটা হাত দিয়ে সেটা চেপে ধ’রে রাখলেন। হয় তা একবার একটু জোর ক’রেও ছিলুম। কিন্তু জোর আপনিই কোথায় মিলিয়ে গেল। দুরন্ত ছেলেকে মা যখন কোলে টেনে নিয়ে জোর ক’রে ধীরে রাখেন, তখন, বাইরে থেকে হয় ত সেটাকে একটুখানি অত্যাচারের মতও দেখায়, কিন্তু সে অত্যাচারের মধ্যে শিশুর ঘুমিয়ে পড়তে বাধে না । বাইরের লোক যাই বলুক, শিশু বোঝে, ওইটেই তার সব চেয়ে নিরাপদ স্থান। আমার এই জড়পিণ্ড হাতটারও বোধ করি সেই জ্ঞানই ছিল, নইলে কি কোরে সে টের পেলে, নিশ্চিন্ত-নির্ভরে পড়ে থাকৃবার এমন আশ্রয় তার আর নেই। তার পর তিনি আস্তে আস্তে আমার কপালে হাত বুলোতে লাগলেন, আমি চুপ ক’রে পড়ে রইলুম ; আমি এর বেশি আর বোলুব না । আমার সেই প্রথম রাত্রির আনন্দ-স্মৃতি-সে। আমার, একেবারে আমারই থাকৃ। কিন্তু আমি ত জানতুম, ভালবাসার যা কিছু, সে আমি শিখে এবং শেষ করে দিয়ে শ্বশুরবাড়ী এসেছি। কিন্তু সে শেখা যে ডাঙায় হাত-পা ছুড়ে সাতার শেখার মত ভুল-শেখা, এই সোজা কথাটা সেদিন যদি টের পেতাম ! স্বামীর কোলের ওপর থেকে আমার হাতখানা যে তার সর্বাঙ্গ দিয়ে শোষণ ক’রে এই কথাটাই আমার বুকের ভেতর পৌঁছে দেবার চেষ্টা কবৃছিল, এই কথাটাই যদি সেদিন আমার কাছে ধরা পড়ত !