পাতা:স্বামী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী 89 সেবা নেবার ফন্দি। সতীর মহিমা কেবল মেয়েমানুষের বেলা-পুরুষের বেলায় সব কঁাকি ! আত্মা আত্মা যে করি, সে কি মেয়েমানুষের দেহে নেই ? তার কি স্বাধীন-সত্তা নেই ? সে কি শুধু এসেছিল পুরুষের সেবাদাসী হবার জন্যে ?” “বউ-মা, বলি কথা কি তোমাদের শেষ হবে না বাছা ?” মাথার ওপর বাজ ভেঙে পড়লেও বোধ করি, মানুষে এমন কোরে চমকে ওঠে না, আমরা দু’জনে যেমন কোরে চমকে উঠলুম। নরেন হাত ছেড়ে দিয়ে বৃত্বে পড়ল আমি মুখ ফিরিয়ে দেখলুম, বারান্দায় খোলা জানালার ঠিক সুমুখে দাঁড়িয়ে আমার শাশুড়ী। বলুলেন, “বাছা, এ পাড়ার লোকগুলা ত তেমন সভ্য-ভব্য নয়, অমান কোরে ঝোপের মধ্যে দাড়িয়ে কান্না-কাটি করতে দেখলে হয় তা বা দোষের ভেবে নেবে। বলি, বাবুটকে ঘরে ডেকে পাঠালেই ত দেখতে শুনতে সব দিকে বেশ হ’ত!” কি একটা জবাব দিতে গেলুম, কিন্তু মুখের মধ্যে জিভটা আমার আড়ষ্ট হয়ে রইল-একটা কথাও ফুটিল না । তিনি একটুখানি হেসে বললেন, ধ্রুবলুতে ত পারিনে, বাছা, শুধু ভেবেই মরি, বউ-মাটি কেন আমার এত কষ্ট স’য়ে মাটীতে শুয়ে থাকেন। তা” বেশ! বাবুট নাকি দুপুরবেলা চা খান। চা তৈরীও হয়েছে- একবার মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করা দেখি, বউ-মা চায়ের পিয়ালাটা বৈঠকখানায়, পাঠিয়ে দেব, না, ঐ বাগানে দাড়িয়ে দাড়িয়েই খাবেন ?” উঠে দাঁড়িয়ে প্রবল চেষ্টায় তবে কথা কইতে পাবুলুম, বলুলুম, “তুমি কি রোজ এমুনি কোরে আমার ঘরে আড়ি পাতো মা ?” শাশুড়ী মাথা নেড়ে বললেন, “না, মা, সময় পাই কোথা ? সংসারের কাজ ক’রেই ত সান্বতে পারিনে। এই দেখ না বাছা, বাতে মসূচি, তবু চা তৈরী কম্বতে রান্নাঘরে ঢুকতে হয়েছিল। তা এই ঘরেই না হয় পাঠিয়ে