পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২১
পুরাতনী  

সঙ্গে মিশে গেলুম তখন অন্দরমহলে বেশ সুখেই ছিলুম। দাসীরা গঙ্গা নাইতে গেলে বলতুম ছোট ছোট নুড়ি কুড়িয়ে আনতে, তাই দিয়ে আমাদের ঘুঁটি খেলা হত। তাস খেলাও বোধহয় শিখেছিলুম, তাতেও খুব আনন্দ পেতুম।

 অনেকদিন বাদে বাদে বাবামশায় (মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর) আসতেন। আগেই বলেছি, তাঁকে ভয় করতুম, তাই বেশি কথা বলতুম না।

 আমরা বউয়েরা প্রায় সকলেই শ্যামবর্ণ ছিলুম। শাশুড়ী ননদ সকলেই গৌরবর্ণ ছিলেন। প্রথম বিয়ের পর শাশুড়ী আমাদের রূপটান ইত্যাদি মাখিয়ে রং সাফ করবার চেষ্টা করতেন। তিনি সামনে বসে থাকতেন তক্তপোশের উপর, আর দাসীরা আমাদের ঐসব মাখাত। দিন কতক পরে যতদূর হবার হলে ছেড়ে দিতেন। আমরা মেয়েরা বউয়েরা সকলেই ঠিক তাঁর কথামত চলতুম। আমি বড্ড রোগা ছিলুম। একদিন কাদের বাড়ীর বউরা বেড়াতে এসেছে সেজেগুজে, তাদের বেশ হৃষ্টপুষ্ট দেখে মা বল্লেন, “এরা কেমন হৃষ্টপুষ্ট দেখ দেখি, আর তোরা সব যেন বৃষকাষ্ঠ!” তারপর আমাকে কিছুদিন নিজে খাইয়ে দিতে লাগলেন। আমার একমাথা ঘোমটার ভিতর দিয়ে তার সেই সুন্দর চাঁপার কলির মত হাত দিয়ে ভাত খাওয়াতেন। আমার কেবল মনে হত মা কতক্ষণে উঠে যাবেন আর আমি দালানে গিয়ে বমি করব।

 বিয়ের দুতিন বৎসর পরে বাবামশায় মাকে সুদ্ধ নিয়ে এসে কলকাতায় বাড়ী ভাড়া করে রইলেন। মা আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাবার জন্য পালকি পাঠালেন। কিন্তু শাশুড়ী ঠাকরুণ বল্লেন ভাড়া বাড়িতে বউ পাঠাবেন না। আমি তাঁর উপর তো কখন কিছু বলিনি, এই কথা শুনে লুকিয়ে ছাতের এক কোণে বসে কাঁদতে লাগলুম। দাসীদের ভয় করতুম, কেননা তার মায়ের কাছে লাগিয়ে দিয়ে বকুনি খাওয়াত। এমন সময় উনি মায়ের কাছে কি একটা কথা বলতে এলেন। বড়ঠাকুরঝিকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন—সে কোথা? বড়