পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
 পুরাতনী
২২

ঠাকুরঝি বল্লেন—তার মা তাকে আনতে পালকি পাঠিয়েছেন কিন্তু ভাড়া বাড়িতে মা পাঠাবেন না বলেছেন, তাই সে ছাতে বসে কাঁদছে। উনি এই কথা শুনে তখনি বাবামশায়ের কাছে চলে গেলেন। তিনি বাপের কাছে যত স্পষ্ট কথা বলতেন, এমন আর কোন ছেলে সাহস করত না। বাবামশায় যখন শুনলেন মা এই কারণে আমাকে যেতে দিচ্ছেন না তখন নিজেই বাড়ীর ভিতর চলে এলেন। এসে মাকে বল্লেন—সত্যেন্দ্রর বউয়ের মা তাঁকে নিতে পালকি পাঠিয়েছেন, তুমি নাকি ভাড়া বাড়ী বলে’ তাকে যেতে দাও নি? ভাড়াবাড়ী কেন, মা গাছতলায় থাকলেও মায়ের কাছে যাবে, এখনি পাঠিয়ে দাও।—একথা শুনে আমার খুব আহ্লাদ হল। মায়ের কাছে গিয়ে শুধু তাঁকে মা বলে ডাকতে এত আনন্দ হচ্ছিল যে একটা আলাদা ঘরে গিয়ে মা মা বলতে লাগলুম। সামনে বারবার বলতে লজ্জা করছিল।

 আমাদের অসুখ বিসুখ করলে দাসীরা গিয়ে মাকে খবর দিলে তিনি বলতেন, যা দপ্তরখানায় খবর দে গে যা। সেখানকার কর্তা ছিলেন আমার মামাশ্বশুর। তিনি ডাক্তারকে খবর পাঠাতেন।

 তখনকার ভাল ডাক্তারদের মধ্যে একজন ইংরেজ ও একজন বাঙালী ডাক্তার আমাদের পরিবারে বাঁধা ছিলেন। একবার মনে আছে একটা অসুখ হয়ে কোণে পড়ে আছি। ডাক্তার এসে আমাকে ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করে দিলেন। মামা নিয়মিত খাইয়ে গেলেন। তারপর পড়েই আছি। আর কোন খোঁজ খবর নেই। আমার বড় ননদ তখন আঁতুড়ে, তা বাঁচিয়ে যতদূর সম্ভব আঁতুড় ঘরের কাছে গিয়েই বসলুম। তখন ভয়ানক খিদে পেয়েছে, মাথা ঝিমঝিম করছে। বড় ঠাকুরঝির খাবার জন্যে একজন ঘিয়ে ভাজা চিঁড়ে দিয়ে গেল, তাতে বুঝি নাড়ী শুকোয়। তিনি তখন আমায় জিজ্ঞেস করলেন—খাবে? আমি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালুম। তখন এত শরীর অবসন্ন বোধ হচ্ছিল যে, লজ্জা করবার অবস্থা ছিল না। সেই চিঁড়ে খেয়ে যেন ধড়ে প্রাণ এল।