পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বা সৌন্দর্যমূলক সত্য, ইন্দ্ৰিয়জয় অতীন্দ্ৰিয় রসের আবেদন, অথবা একই শ্রেষ্ঠ কাব্য উপন্যাস বা নাটক, জন্মগত ক্ষমতা তখন অনুশীলনবৃত্তির চর্চাভেদে বিভিন্ন পাঠকের মনে- প্ৰধানতঃ “ইনটেনসিটি’র দিক দিয়ে-বিভিন্ন রকমের সাড়া জাগায় । সুতরাং আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, সাহিত্যের যে একটি স্বাভাবিক আভিজাত্য আছে, এমন কিছু না করা যাতে তা একটুকু ক্ষুন্ন হয়, পরন্তু আমাদের সবাইকে তার উপযুক্ত হতে শিক্ষিত ফর। দুদিন বা দশদিন পরে কেউ আমার বই পড়বে না, এ ভয় কোনো সত্যিকার কথা-সাহিত্যিক করেন না । করেন। তারা, যারা একটা মিথ্যা ভবিষ্যতের ধুম, লোকে নিজদের চিরপ্রতিষ্ঠ দেখতে গিয়ে বর্তমানের দাবীকে অস্বীকার করেন। কেউ বঁাচে নি, বড় বড় নামওয়াল কথা-সাহিত্যিক তলিয়ে গিয়েছেন কালের ঘূর্ণিপাকের তলায়-সেই যুগের প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী যুগের লোকের ধুলো ঝেড়ে ছেঁড়া-পাতাগুলো উদ্ধার করবার কষ্টও স্বীকার করে না । দু' দশজন সাহিত্য-রসিক, দু পাচজন পণ্ডিত, দু একজন বৈদগ্ধ্যাগবী মানুষ ছাড়া আজকালকার যুগে কথাসরিৎসাগর কে পড়ে, গোটা অখণ্ড আরব্য উপন্যাস কে পড়ে, ডন কুইকসোট কে পড়ে ? চসার, দান্তে মিণ্টন, এ’দের কথা বাদ দিই— ছাত্র বা অধ্যাপক ছাড়া কেউ এ’দের পাতা ওন্টায় না।--সকলে তো কাব্যপ্রিয নয় -কিন্তু অত বড় যে নামজাদ ঔপন্যাসিক বালজাক তার উপন্যাস--রাশির মধ্যে কখানা আজকাল লোকে সখা করে পড়ে ? স্কট, হেনরি জেমস, থ্যাকারে, ডিকেন্স সম্বন্ধেও অধিকােল এই কথা! প{টে । ফিল্মে না। উঠলে অনেকের অনেক উপন্যাস কি নিয়ে লেখা তাই লোকে জানত না । মানটাই থেকে যায় লেখকের, তার রচনা আধমরা অবস্থায় থাকে ; অনেক ক্ষেত্রেই মরে ভূত হয়ে যায় । জানি, একথা আমাদের স্বীকার করতে মনে বড় বাধে । খোলাখুলিভাবে বললে আমরা এতে ঘোর আপত্তি করি।--‘বিশ্ব’, ‘অমরা’, ‘শাশ্বত, প্রভৃতি বড় বড় গাল-ভরা কথা জুড়ে জুড়ে দীর্ঘ ছাদে সেণ্টেন্স রচনা করে তার প্রতিবাদ করি। কিন্তু আমরা মনে মনে আসল কথাটি সকলেই জানি । যে সাহিত্য টবের ফুল-দেশের সত্যিকার মাটিতে শিকড় চালিয়ে যা রসসঞ্চয় করছে না, দেশের লক্ষ লক্ষ মুক নরনারীর আশা-আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ বেদনা যাতে বাণী খুজে পেলে না, তা হয় রক্তহীন, পাণ্ডুর, থাইসিসের রোগীর মত জীবনের বরে বঞ্চিত, নয়তো সংসার বিরাগী, উৰ্দ্ধবাহু, মৌনী, যোগীর মত সাধারণ e ty e