পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে মানুষের চারধারে গহন অসীম বিস্তৃত, মাথার ওপরে শূন্যে এখানে ওখানে ক্ষণে ক্ষণে মিনিটে চার পাঁচটা করে কত না-জানা প্ৰাচীন জগতের ভাঙা টুকরোর তারাবাজি ধূমভস্মে পরিণত হচ্ছে, যে শান্ত সন্ধ্যায় পাখীর গানে নদীর মৰ্ম্মরে রক্ত সুৰ্য্যের অস্ত-আভায় অনন্ত জীবনের স্বপ্ন দেখে-পাথরে কাপড়ে ক্যানভাসে নব সৌন্দয্যের সৃষ্টিকর্তৃণ বড় ধৰ্ম্ম প্রচার করেছে, কত লোককে কঁাদিয়েছে, নক্ষত্ৰজগৎকে চিনিয়েছে, ভগবানের সত্ত্বাকে আন্দাজ করেছে।--তার অদৃষ্ট কি পৃথিবীর ধূলোর সঙ্গে সত্য সত্যই জড়িত থাকবে ? বিশ্বাস হয় না । মনে হয় কত দূর দিনে ঐ সমস্ত বিশাল নাক্ষত্ৰিক শূন্যের .স হবে উত্তরাধিকারী । অসীম ব্যোমপথে নব নব গ্ৰহ তারার অজানা সৌন্দয্যের দেশে তার যে অভিযান এখন সে মনে ভাবতেও সঙ্কচিত হয়, তখন তা হবে নিত্য নূতন আনন্দের পুষ্পবীথি। মানুষের ভবিষ্যৎ অদ্ভুত, উজ্জল, রহস্যময়, রাত্রির অন্ধকারো-এই নির্জনে বসে স্পষ্ট তখন দেখতে পেলাম । সত্যিই আর ভয় করি না, নিরানন্দ বোধ করি না । মানস-সরোবরের শতদল পদ্মের মত এই অনন্তের বোধ আমার প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে যেন । যখন তখন নীল আকাশের দিকে চাইলেই মনে হয় আমার এ দুদিনের প্রবাস অনস্তের খেয়ার এপারের ঘাট পারানীর ছোট কুড়েখানা। ঐতো কানে আসছে উন্মত্ত গহন গভীর সাগরের ক্ষুব্ধ উদাত্ত সঙ্গীত ; কুঁড়ের চাল ভুলে যাই । পুই মাচার কথা মনে থাকে না । লাউশাকগুলো গরুতে খেয়ে ফেললে কিনা দেখবার কার মাথাব্যথা পড়েছে ? শতজন্মের পারে তাকে যেন আবার পাবো ? কোন দেবতা আছেন যেন জন্ম-মৃত্যুর নিয়ন্ত । তিনি সব দেখেন শুনেন । কতদিন আগে এই সময়ের সেই গানটা মনে পড়ল : “তোমার অসীমে প্ৰাণমন লয়ে যতদূরে আমি ধাই” ৷৷ ২৯শে অক্টোবর ১ন ২৭, ভাগলপুর। আজ সকালে মাহেন্দু ঘাট থেকে ষ্টীমারে হরিহরছাত্ৰ মেলা দেখতে গিয়ে কত কি দেখলাম। ভোটারীনারী হাসপাতালে জিনিসপত্র রেখে টমটমে বেরুলাম। কি ভিড়, ধূলো ! সেই ষে মেয়েটা ধূলায় ধূসরিত কেশ নিয়ে বসে আছে, ভারী সুন্দর দেখতে । হাতী বাজার, উট বাজার, চিড়িয়া বাজার-কত সাহেব মেম ধূলি ধূসরিত হয়ে মেলা দেখে বেড়াচ্ছে। হাজিপুর থেকে, মজঃফরপুর থেকে