পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজকাল ঠিক দুপুরে ও সন্ধ্যার আগে একবার করে বসি কাছারীর পেছনের কাশজঙ্গলের ধারে সর্ষেক্ষেতের পাশে। প্রস্ফাট সর্ষেফুলের গন্ধে সেই ছেলেবেলার বড়দিনের বন্ধে বনৰ্গা থেকে বাড়ী আসার কথা মনে পড়ে। বড় আনন্দ হয় এই মাটি, এই আধ-শুকনো, আধ-সবুজ কাশীবনের স্নিগ্ধ ছায়া, তারই ধারে এই হলুদ রংএর গন্ধে ভরপুর সর্ষেখেত, এই নিৰ্জনতা একবারে মাটির মায়ের কোলে বসে থাকা । এই আকাশ-আমার জানলা দিয়ে রোজ সন্ধ্যায় দেখতে পাওয়া, দূর পূর্ব আকাশের orion-এর pointer-টা বড় মুগ্ধ করে দেয আমাকে । আকাশের নক্ষত্রের দিকে চেয়ে চেয়ে নিৰ্জন কাশীবনের রহস্য আমার প্রাণে এসে লাগে-জীবনটা কি ? কি গহন গভীর গোপনতা-কি যাওয়া আসার १ऊिष्छन्म । কাল সন্ধ্যান্য টেবিলটায় বসে লিখতে লিখতে দূর পূর্ব-আকাশের একটা নক্ষত্রের দিকে চেযে চেযে ভাবলাম—ঐ সব নক্ষত্রের বা তার পাশের গ্রহের অজানা জীবনযাত্রা, আমাদের কাছে একেবারে গোপনতায় ঢাকা । (কে জানে ওর মধ্যে কি প্ৰাণীদ’ল, কি জীবনের গতি । এই আমি যে অত্যন্ত বাস্তব জীব এই টেবিলে বসে লিখছি।--আর ঐ জল-জলে তারাটার মধ্যে অনন্ত মহাশূন্যের ব্যবধানকোনকালেই এ ব্যবধান পৃথিবীর জীবে ঘোচাতে পারবে না বোধ হয় । কে জানে ওদের জগতে কিরকম জীবনযাত্ৰা ? গভীর রাত্রে রামচরিত যখন আমার ঘরে ঘুমিযে পড়ে তখন বাইরে উঠে নিৰ্জন বন মাঠের ওপরকার নক্ষত্রভরা আকাশের দিকে চেয়ে থাকি। বহু দূরপারের গভীর কোন গহন রহস্ত ধীরে ধীরে আমার মনে নেমে আসে-সে বলা যায় না, লেখা যায় না । জীবনের গভীর মুহূৰ্ত্ত সে সব-কেবল তা মনে এই সত্য আনে যে জীবন ঐ দূৱ ছায়াপথের মত দূরবিসৰ্পিত, এটুকু শেষ নয়। এখানে আরম্ভও নয়-সুদূর কোথা থেটিক এসে সুদূরের কোন পারের দিকে তার ডিঙ্গার মুখ ফিরানো । প্রাণের মধ্যে এই অনুভূতিটুকু যেন সকলের সত্য হয়ে ওঠে। ॥ २६ ख्रिश्द्र, • • २१ ॥ গভীর রাত্রে নির্জন কাশীবনের মধ্যের কাছারী ঘরে শুয়ে শুয়ে গিবন পড়ছিলাম। কত রাজা রাণী সম্রাট মন্ত্রী খোজা সেনাপতি, কত সুন্দরী তরুণী বালক যুবার আশা নিরাশার দ্বন্দ্বের কাহিনী । কত যুদ্ধ-বিগ্রহ, উত্থান-পতন, কত অত্যাচারউৎপীড়ন, হত্যা, পরের জন্য কত প্ৰাণ দেওয়া-অতীতের ছায়ামূৰ্ত্তিারা আবার V