পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেরিয়েছি সত্যবাবুর বাড়ীতে যে দিন থেকে নেই।--অনেক কাল আগে সেই ১৯০৮ সালে, এক সন্ধায় বেহারী ঘোষের বাড়ী মাণিকের গান হ’ল-পরদিন জিনিষপত্র নিয়ে সেই যে বোর্ডিংএ এলাম-কি ক্ষণে বাড়ীর বাইরে পা দিয়েছিলাম জামি না।--সেই বিদেশ বাম সুরু হ’ল । পরে আর বারাকপুরকে বারমাসের জন্য একবারও পাইনি-হারিয়ে হারিয়ে পেয়ে আসছি। -- ক’ত জগদ্ধাত্রী পূজার ছুটীতে, গুড ফ্রাইডের ছুটতে, বড়দিনে, পূজায় - শনিবার পেয়ে এসেছি ছেলেবেলায়-এখনও অন্য ভাবে পাই । এখনও তো শৈশবের স্বপ্ন দেখা সে সব দেশ দেখতে বাক’ আছে, পথে যখন বেরিয়ে পড়েছি তখন সতাই কি সে সব বাদ থেকে যাবে ? ৷৷ ৯ই ডিসেম্বর ১৯২৭ ৷৷ আজও কালকার ঘোড়া চড়াটা ভাল লাগল । আগঞ্জ একটু বেলা গেলেই বেরুলাম । লাল কিশন সিং এর বাসার পথটা দিয়ে. কলোয়ার চক হাটের পথ দিয়ে যখন যাচ্ছি তখন সুধা ডুবু ডুবু । যেতে হবে বটেশ্বর নাথ পাহাড়ের এপার । খুব জোরে সুখটিয়া কুলবনের ভিতর দিয়ে ঘোড; ছুটিয়ে দিলাম। ঘোড়ার এই চলাটা আজকাল বড় আরামের মনে হয় । সহদেব সিংএর টোলার কাছা - কাছি সেই বনঝোপভরা পথটায় অন্যদিন থামি, কিন্তু আজ বেলা যাওয়াতে আর না থেমে সোজা বেরিয়ে গেলাম । কুতরুটােলার মধ্যে মেয়ের উদারার জল নিতে আসছে, সেই জন্যে আস্তে আস্থে চালিয়ে বাইরের মাঠটায় পড়ে আবার জোরে ছুটিলাম । কলুটোলার সামনে দিয়ে কলাইক্ষেতগুলোর পাশ দিয়ে এসে একটা উঁচু আল পার হলাম-সো জায়গাটি বড় নিৰ্জন, একটা ছোট অশ্বখ গাছ, বনঝোপ, সন্ধ্যার ঘন ছায়া ও নিৰ্জনতা বড় ভাল লাগল। পরেই এসে গঙ্গার ধারে প্রায়ান্ধকার পাহাড়টার দিকে চােক রেখে দূরে চিকচক্রবালের ধূসর সান্ধা মায়ায় মুগ্ধ হয়ে ঘোড়ার ওপর বসে রইলাম । সেই দিনটার কথা মনে পড়েসেই জ্যোঠামহাশয়ের সঙ্গে কুঠার মাঠে গিয়ে ফিরে এসে ভেবেছিলাম কত দূর না গেছি ! সেই দিনটি থেকে আজ কত দূর কোথায় চলে এসেছি ! মায়ের কথা মনে হ’ল-ঠিক এই সময় মা বলতেন, আমায় শীগগির যেতে হবে, ছেলের অমাবার বিয়ে দেব । কি অপূৰ্ব্ব এই জীবন ! এই দুঃখের, আনন্দের, শোকের, স্নেহের, আশার, পুলকের ভালবাসার স্মৃতি জড়ানো- এই অপূৰ্ব্ব গতিশীল সুখদুঃখে মধুর এই Wo