পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
হারানাে খাতা।

আমায় গ্রাস করতে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, এম্‌নি সময়ে একেবারে তিনি নিজে ছুটে এসেই আমায় কোলে তুলে নিলেন। এই যে গাইচি শুনুন না।”—

 এই বলিয়া সে পুনশ্চ গাহিতে লাগিল—

“পড়ে বিপদের ফাঁদে, ছেড়ে সংসারের সাথে,
যখন কাতর প্রাণে, কুসন্তানে মা বলে কাঁদে—
তখন, ত্বরায় গিয়ে কোলে নিয়ে, স্তন্য সুধা দাও তাকে।
মাগো, তবে আর এ সংসারে আনন্দ নাই বলে কে?”

 নিরঞ্জন নিস্পন্দ হইয়া গান শুনিল, তারপর বিমোহিতভাবে সে ঐ অপরিচিতা মেয়েটীর দিকে মুখ ফিরাইয়া উহাকে বলিল, “তোমায় আমার মা বলে ডাকতে ইচ্ছা করচে! মার মতন তুমি আজ আমাকে, যে শিক্ষা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিলুম, সেই মহাশিক্ষার মধ্যে হাতে ধরে টেনে এনে দিলে।”

 মেয়েটা জোড়হাত নিজের কপালে ঠেকাইয়া জবাব দিল, “মা হবার যোগ্যতা আমার একটুও নেই; তবে আপনি আমার বাবা হলেন। নিজের মেয়েকেও তো লোকে আদর করে ‘মা’ বলে, সেই হিসেবে আমায় আপনি ‘মা’ই বলবেন। আমার নাম সুষমা। আমি রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে লুকিয়ে এক একদিন এখানের খোলা হাওয়া আর আমার বড় মায়ের রূপ দেখতে আসি। থাকি কিনা আদি গঙ্গার ছোট্ট মা-টীর বুকে। আপনিও হয়ত আমার মতই উদ্দেশ্য নিয়ে অথবা কোন উদ্দেশ্য না নিয়েই এসেছেন? আপনাকে আমার কিন্তু বড্ড ভাল লাগছে! হলে কি হয়, সকাল হয়ে এ’ল, আপনি এখন বাড়ী যাবেন তো? আমিও তাহলে এখন বাড়ী যাই।”

 নিরঞ্জন মুগ্ধ হইল, একটু যেন সে তৃপ্ত হইল। বিস্মিত হইল্পা বলিল,