দিয়া রাখে; এইটুকু হইতেও সেই কর্ম্মহীন দীর্ঘ অবসরের ক্লান্ত জীবনটকে বঞ্চিত করা তার কাছে হঠাৎ যেন চৌর্য্যের মতই অপরাধজনক ঠেকিল। আর এই অবসরে এই বিপুল রাজপ্রাসাদের অসংখ্য দাসদাসীবর্গের দ্বারায় উৎপীড়িত উপদ্রুত মানুষটাকে সে যে কতকটা রক্ষা করিয়াও চলিতেছিল, সেইটুকুকে হারাইয়া ফেলায় তার মন আজ পীড়া বোধ করিতে লাগিল। আহা, ভাগ্যচক্রের কঠোর নিষ্পেষণে কি নিপীড়িত—কি ভীষণরূপেই নিপীড়িত সে; আর কি তাকে পীড়ন করিতে দিতে আছে? নিজের স্বামীর মহত্ব অনুভব করিয়া সেদিন এম্নি চঞ্চল হইয়া উঠিল যে, রাত্রে নরেশ শয়ন করিতে গেলে, সেও তৎক্ষণাৎ আর এক দিক দিয়া সেই ঘরে ঢুকিল। নরেশের মন যদিও সে সময় পত্নী সম্ভাষণের ঠিক অনুকূল ছিল না,—বড়ই চিন্তাম্লান ও ভরাক্রান্ত—তথাপি স্ত্রীকে আসিতে দেখিয়া তাহার স্বভাবসিদ্ধ স্নেহ প্রদর্শন পূর্ব্বক তাহার দিকে হাত বাড়াইয়া দিয়া বলিলেন “এসো।”
স্ত্রীর সম্বন্ধে মনের মধ্যে একটুখানি ত্রুটি বোধ থাকার কুণ্ঠাতেই তাহার পরে, সময় সময় আদরের মাত্রাটা কিছু বেশী করিয়াই বর্দ্ধিত করিতে হয়, সেখানে নিজের শরীর মনের আলস্যকে প্রশ্রয় দেওযা বুঝি একেবারেই চলে না!
পরিমল আসিয়া ঢিপ করিয়া তাঁহার পায়ে একটা প্রণাম করিল, আর এক দিনকার একটা অবিস্মৃত এম্নি দৃশ্যই স্মরণ করিয়া নরেশের হৃদপিণ্ড অমনি প্রমত্তবেগে দুলিয়া উঠিল, তিনি কষ্টে সংযত হইয়া উহা চাপা দিবার জন্য উহাকে নিজের বুকে নিবিড় আলিঙ্গনে বাঁধিয়া ধরিলেন।
“ঈস্!-আজ হঠাৎ এত ভক্তি কেন?”