পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮২
হারানাে খাতা।

আশ্রিতা পালিতারা করছে, সে সবই এরা পারে; আর সুতোকাটা তাঁতবোনা সেবাশ্রম করে দুস্থের যত্ন সেবা ইত্যাদি আরও কি কিছু কম করবার আছে? তবে কেন এত শক্তি অনর্থক অপব্যয় হয়ে যাচ্ছে। পথভ্রষ্টের জন্য কি পথ সহজ করে কেউ দেবে না?”

 সুষমা দুজনকার পায়ের গোড়াতেই প্রণাম করিয়া উঠিয়া আনন্দসজলচক্ষু কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ করিয়া নিরঞ্জনের কদাকার মুখের দিকে চাহিল গাঢ়স্বরে কহিল “বাবা! আমায় ওই রকম করেই তুমি এইবার সার্থক করে তোল। এখন মনে হচ্ছে, তা হলে আমার মতন হতভাগ্য জীবনেরও দরকার ত কোথাও আছে?”

 নিরঞ্জনের সঙ্গে গাড়ীতে উঠিয়া সুষমা চলিয়া গেল। একদিক দিয়া অতুল শান্তিতে এবং আর একদিক হইতে একটা তীব্র ব্যথায় নরেশচন্দ্রের প্রাণটা যেন হাহা করিয়া উঠিল। এতদিন পরে সুষমা যে তার প্রকৃত পথের সন্ধান ও সে পথের যথার্থ আশ্রয় লাভ করিতে সমর্থ হইয়াছে তাহারই আনন্দ,আর তার সঙ্গেই এতদিনের পর সুষমার সকল সম্বন্ধ হইতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করিয়া লওয়ার ব্যথা একটু তীক্ষ্ণ হইয়াই মনে বাজিতেছিল। কিন্তু তথাপি তাঁহারা দুজনেই যে মস্ত বড় প্রলোভনকে জয় করিয়া অম্লান ও অপ্রতিহত রহিলেন, ইহার গৌরবও তাঁহার সেই ক্লিষ্ট চিত্তকে কম সান্ত্বনা দিল না।