পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
২০৯

 “আমায় একবার সঙ্গে করে সুষমার বাড়ী নিয়ে যাবে? তার কাছেও একটু ক্ষমা চেয়ে আসবো,—আর—আর—যাঁকে—যাঁকে না চিনে— না জেনে—”

 “পরিমল! কি বল্‌চো তুমি? তুমি সুষমার বাড়ী যাবে তার কাছে ক্ষমা চাইতে?”

 পরিমল রুদ্ধকণ্ঠ পরিষ্কার করিবার অশেষ চেষ্টা করিয়া কহিল, “শুধু তার কাছেইত নয়; তার চেয়েও বেশী অপরাধী আমি যাঁর কাছে তাঁর পায়ের ধুলো না নিয়ে এলে আমি যে আর স্থির হ’তে পারছিনে।” —পরিমল সহসা ফুকারিয়া কঁদিয়া উঠিল।

 নরেশ চৌকি হইতে সবেগে উঠিয়া পড়িলেন—“পরিমল! পরিমল! কার কথা তুমি বল্‌চো? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনে!”

 ক্রন্দনবিবশা পরিমল একখানা আসনের উপর বসিয়া পড়িয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে বলিতে লাগিল, “তুমি কি করে বুঝ্‌তে পারবে? তুমিতো চেনো না। —কিন্তু আমি, আমি কি করে তাঁকে অত অযত্ন করেছিলেম। আমি কি করে তাঁকে চিন্‌তে পেরেও চিন্‌তে পারিনি? গরীব নিরঞ্জন বলেই না অমন করে তুচ্ছ করতে পেরেছিলেম! তিনি যে আমারই মায়ের আনা রোগ ঘেঁটে নিজে রোগে পড়েছিলেন, তাঁকে যে মরা মানুষ মনে করে আমিই দাহ করতে নিয়ে যেতে দিয়েছি। উঃ, আমি কি! আমি কি! আমি কি!”

 হাবড়া ষ্টেশনে প্লাটফর্মে পা দিয়াই নরেশের সঙ্গে সাধুজীর দলের সাক্ষাৎ ঘটিয়া গেল। সাধু সানন্দে চেঁচাইয়া উঠিলেন “এই যে রাজা আমাদের তুলে দিতে এসেছেন!—জয়োস্তু!”

 সাধুজীর সঙ্গে স্বাগত শেষ করিয়া নরেশ দুই হাত বাড়াইয়া অগ্রসর হইল নিরঞ্জনের দিকে। নিরঞ্জন এত লোকের মধ্যে তার মতন একটা