পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১০
হারানো খাতা।

নগণ্য লোকের এতটা খাতির অশোভন হয় দেখিয়া নত হইয়া নরেশের পদধুলি লইতে গেলে নরেশ তাহাকে উত্তপ্ত গাঢ় আলিঙ্গনে একেবারে বুকের মধ্যে বাঁধিয়া ফেলিলেন, কৃত্রিম কোপে হাসিয়া ধমক দিলেন, বলিলেন, “ফের বদ্‌মাইসি।”

 তার পর ইহরা ষ্টেশনের একপ্রান্তে একটু ভিড় ছাড়া হইয়া দাঁড়াইলেন, নরেশ বলিলেন, “নিরঞ্জন! মুক্তেশ্বর রায়ের নায়েব-দেওয়ান হরিশচন্দ্র মিত্র যে মহাপাতক করেছিলেন, তাঁর সে পাপের কথঞ্চিৎ প্রায়শ্চিত্তের জন্য তাঁর বিশ্বাসঘাতকতা-লব্ধ সম্পত্তির অর্দ্ধেকটা—অর্থাৎ যেটা তিনি মুনিবের কাছ থেকে লাভ করেছিলেন, সেটা আমি বিষয়ের প্রকৃত মালিককে ফিরিয়া দিতে এনেছি,—কোন কথা শুন্‌বো না নিতেই হবে। তোমার বাবা রত্নেশ্বরবাবু সেই সম্পত্তি হাতে পেয়েও একদিন আমার বাবাকে ছেড়ে দেন; সেই উপলক্ষে তিনি যে চিঠিখানি লেখেন, আমি বড় হয়ে সেখানি সযত্নে তুলে রেখেছি। চার বৎসর মাত্র পূর্ব্বে সেই চিঠি পেয়েই আমি তোমার খোঁজে চট্টগ্রাম গিয়ে জানতে পারি যে মাস কয়েক পূর্ব্বে তুমি মারা গেছ,—এবং তখন আর কোন পথ না পেয়ে—যদিই এতে আমাদের পাপের কিছু প্রায়শ্চিত্ত হয় ভেবে তোমারই শেষ চিহ্ণ বলে তোমার পরিত্যক্তা”—

 নিরঞ্জনের পা টলিয়া সে বসিয়া পড়িতেছিল, নরেশ তাহাকে হাতে ধরিয়া নিকটস্থ বেঞ্চির উপর বসাইয়া দিলেন। গৈরিকধারিণী সুষমা দূরে দাড়াইয়া ইঁহাদের হেঁয়ালিপূর্ণ কথাবার্ত্তা সবিস্ময়ে শুনিতেছিল; নিরঞ্জনের সুশ্রুষার জন্য অগ্রসর হইতে গিয়া সে সাশ্চার্য্যে দেখিল, নিকটস্থ মেয়েদের বিশ্রামাগার হইতে দ্রুতপদে বাহির হইয়া আসিয়া একটী তাহারই বয়সী মেয়ে সেই আধপাগলা নিরঞ্জনের পায়ের কাছে পড়িয়া অপরিপ্লুতমুখে বাষ্পগদ্‌গদ্‌স্বরে কাঁদিয়া ফেলিয়া বলিয়া উঠিল,—“রমেশ