পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দশম পরিচ্ছেদ

পথিক দরজায়, বিদেশী অসহায়,
কাতর সে যে হায়, বিষম ঝড়ে,
নাই মা, বধূ নাই, খেতে কে দেবে ভাই,
কে তা’রে দেবে ঠাঁই বৃষ্টি পড়ে।

—তীর্থ সলিল।

 পঠন পাঠন চলিতে লাগিল। যদিও গুরু শিষ্যা উভয়েরই পক্ষে এই শিক্ষাদান ও শিক্ষালাভ ব্যাপারের মধ্যে বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ বা আনন্দের সম্পর্ক পর্য্যন্ত ছিল না; উভয় পক্ষের সবটুকুই শুধু দায় ঠেলার খাতির, সুতরাং ফলও ঠিক তদনুযায়ী প্রচুরতররূপে ফলিয়া উঠিতে লাগিল, অর্থাৎ বড় একটাই দেখা গেল না। পরিমল প্রথম দিনের সেই সঞ্চারিত সঙ্কোচকে প্রাণপণে যুক্তিতর্ক ও সিদ্ধান্তের দ্বারায় কোনমতে তার মন হইতে অপসৃত করিয়াছিল। নিজেকে সে এই বলিয়াই শান্ত করিতে চাহিল যে, মানুষের মত মানুষ যে কত থাকে; একজনের গলার সুরের মতন কি আর আর এক-জনের গলার স্বর থাকে না? এর হাসি তো দেখিনি; বােধ হয় এ মােটেই হাসে না, কিন্তু তাঁর,—তাঁর হাসিটীই যে তাঁর সব চেয়ে বড় সৌন্দর্য্য ছিল। এর আড়ন সেই রকমই বটে, কন্তু সে রং, সে চোখ, সে চুল, সেই বলিষ্ঠ দৃঢ় গঠন— সে সব এর কোথায় কি? তারপর তাহার ঠোটের কোণে একটা ফোঁটা হাসি এবং চোখের কোনে ফোঁটা দুই অশ্রু দেখা দিয়া তাহাকে সচকিত করিয়া তুলিল। আমিও কি পাগলের বাতাস লেগে পাগল হলেম নাকি? কি ছাই ভাবছি? যাকে নিজের চোখে মর্‌তে দেখলেম, পুড়িয়ে পর্য্যন্ত এলাে,