পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একাদশ পরিচ্ছেদ

আমি ক্ষুদ্র তুচ্ছ ফুল তুমি মহীয়ান,
তবু তােমা পানে ধায় আকুল পরাণ।

৺ইন্দিরা দেবী।

 আদিগঙ্গার উপরে ছােট্ট একখানি লালরংয়ের দোতলা বাড়ীব্র গঙ্গার ধারের উঁচু পাঁচিল ঘেরা ছাদে কয়েকটা ফুলের গাছ টবে সাজান এবং তারই মধ্যে একখানি কাঠেব বেঞ্চির উপর বসিযা একটা মেয়ে সেতাব বাজাইতেছিল। টবে গাছগুলি সদ্যজলসিক্ত, তখনও ভিজামাটীর গন্ধটুকু বাতাসের সঙ্গে মিশিয়া বহিয়াছে। বজনীগন্ধা দুএকটা জুঁই এবং কতক গুলি ভুঁইচাপ, জিনিয়া আর কস্‌মিয়া জাতীয় ফুল অল্প বিস্তর ফুটিয়া রহিয়াছে। গােলাপের গাছ দুটো একটা আছে কিন্তু ফুল হাতে একটাও ফুটিয়া উঠে নাই।

 মেয়েটীর বয়স সতের বা আঠরোর বেশী নয়। রূপ, হ্যাঁ, তা রূপ তাহার শরীরে নেহাৎ কম ছিল না। গোলগাল গড়ন, অথচ একটু ক্ষীণ দেহ, রং আরমানী বিবিদের মত না হােক তবু সচরাচর যাহাকে বাঙ্গালী ঘরে ফবসা রং বলে তাইতেই একটু খানি জৌলুস ছিল। চোক দুটি মাঝাবি, নাক, কাল, ঠোঁট সবই তাহার মাঝামাঝি, শুধু চুলগুলিতে বড় বেশী বিশেষত্ব ছিল।—কোকড়ান না হইলেও, রেশমের মতন নরম, কাল ও ঢেউখেলান খােলা চুলগুলি তাহার বাজনার তালে তালে তাল দিয়া যখন নাচিয়া নাচিয়া উঠিতেছিল, তখন অপরাহ্ণের শুক্তি-শুভ্র আকাশের এক প্রান্তে আকস্মিক উদিত প্রাবৃট মেঘের কথা স্বতঃই স্মরণ করাইয়া দিতেছিল। একেবারেই নিরাড়ম্বব বেশভূষণে এই সুশ্রী