পাতা:হারামণি - মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৵৹

 কথা নিতান্ত সহজ, কিন্তু সুরের যোগে এর অর্থ অপূর্ব্ব জ্যোতিতে উজ্জ্বল হ’য়ে উঠেছিল। এই কথাটিই উপনিষদের ভাষায় শোনা গিয়েছে, “তং বেদ্যং পুরুষং বেদ মা বো মৃত্যুঃ পরিব্যথাঃ”—যাঁকে জান্‌বার সেই পুরুষকেই জানো, নইলে যে মরণ-বেদনা। অপণ্ডিতের মুখে এই কথাটিই শুন্‌লুম, তার গেঁয়ো সুরে, সহজ ভাষায়—যাঁকে সকলের চেয়ে জান্‌বার তাঁকেই সকলের চেয়ে না-জানবার বেদনা—অন্ধকারে মাকে দেখতে পাচ্ছে না যে শিশু, তারই কান্নার সুর—তার কণ্ঠে বেজে উঠেছে। “অন্তরতর যদয়মাত্মা” উপনিষদের এই বাণী এদের মুখে যখন “মনের মানুষ” ব’লে শুন্‌লুম, আমার মনে বড় বিস্ময় লেগেছিল। এর অনেককাল পরে ক্ষিতিমোহন সেন মহাশয়ের অমূল্য সঞ্চয়ের থেকে এমন বাউলের গান শুনেচি, ভাষার সরলতায়, ভাবের গভীরতায়, সুরের দরদে যার তুলনা মেলে না, তাতে যেমন জ্ঞানের তত্ত্ব তেম্‌নি কাব্যরচনা, তেম্‌নি ভক্তির রস মিশেচে। লোকসাহিত্যে এমন অপূর্ব্বতা আর কোথাও পাওয়া যায় ব’লে বিশ্বাস করিনে।

 সকল সাহিত্যে যেমন লোকসাহিত্যেও তেম্‌নি, তার ভালমন্দের ভেদ আছে। কবির প্রতিভা থেকে যে রসধারা বয় মান্দাকিনীর মতো অলক্ষ্যলোক থেকে সে নেমে আসে; তারপর একদল লোক আসে যারা খাল কেটে সেই জল চাষের ক্ষেতে আন্‌তে লেগে যায়। তারা মজুরি করে,