পাতা:হেক্‌টর বধ - মাইকেল মধুসূদন দত্ত.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
হেক্‌টর বধ।

গুলি বাসন্ত কুসুমসমূহের উপর উড়িয়া বসে, আর কতক গুলি দলবদ্ধ হইয়া বায়ুপথে ইতস্ততঃ পরিভ্রমণ করিতে থাকে, সেইরূপ গ্রীক্‌সৈন্যদল আপন আপন শিবির হইতে বদ্ধশ্রেণী হইয়া বাহির হইল। বহু-রসনা-শালী জনরব বহুবিধ বার্ত্তা বহু দিকে বিস্তৃত করিতে লাগিল। সৈন্যদলে মহা কোলাহল হইয়া উঠিল।

 তদনন্তর রাজসন্দেশবহ ঊর্দ্ধবাহু হইয়া, তোমরা সকলে নীরব হও, তোমরা সকলে নীরব হও, এই কথা বলিবা মাত্রেই যে যেখানে ছিল, অমনি বসিয়া পড়িল। সেই মহা কোলাহল-স্থলে অকস্মাৎ যেন শান্তিদেবী পদার্পণ করিলেন। রাজচক্রবর্ত্তী আগেমেম্‌নন্‌ দক্ষিণ হস্তে রাজদণ্ড ধারণ করতঃ উচ্চৈঃস্বরে কহিতে লাগিলেন, হে বীরবৃন্দ। দেবকুল-ইন্দ্র যে অঙ্গীকার করিয়া আমাদিগকে এ দূর দেশে আনিয়াছেন, এক্ষণে তিনি সে অঙ্গীকার রক্ষা করিতে বিমুখ। যে কুহকিনী আশার কুহক যেন কোন দৈব ঔষধ স্বরূপ আমাদিগকে এই দুরন্ত রণে ক্লান্ত হইতে দিত না, এবং আমাদের দেহ রক্তশূন্য হইলে পুনরায় তাহা রক্তপূর্ণ করিত, আমাদের বাহু বলশূন্য হইলে পুনরায় তাহা বলাধান করিত, এক্ষণে সে আশায় আমাদিগকে হতাশ হইতে হইল। এ দুর্দ্ধর্ষ রিপুদল যে আমাদের বীরবীর্য্যে ও পরাক্রমে পরাভুত হইবে, এমত আর কোনই আশা বা সম্ভাবনা নাই। এই আদেশ আমি সম্প্রতি দেবেন্দ্রের নিকট হইতে প্রাপ্ত হইয়াছি। কি লজ্জার বিষয়! আমার বিবেচনায়, আমাদের এ দুঃখের কাহিনী শুনিলে, বর্ত্তমানের কথা দূরে থাকুক; বোধ হয়, ভবিষ্যতের বদনও ব্রীড়ায় অবনত ও মলিন হইবে।