পাতা:হেক্‌টর বধ - মাইকেল মধুসূদন দত্ত.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হেক্‌টর বধ।
২৭

কি আক্ষেপের বিষয়! আমরা এমত প্রচণ্ড ও প্রকাণ্ড সৈন্য সহকারে এ ক্ষুদ্র রিপুদলকে দলিত করিতে পারিলাম না? নয় বৎসর পরিশ্রমের পর কি আমাদের এই ফললাভ হইল? দেখ, আমাদের তরীবৃন্দের ফলক সকল ক্ষত হইতেছে, রজ্জুসকল জীর্ণাবস্থা প্রাপ্ত হইতেছে, আর আমাদিগের চিরানন্দ গৃহে পতি-বিরহ-কাতরা কলত্রবৃন্দ, ও পিতৃ-বিরহকাতর শিশুসন্তান সকল আমাদিগের প্রত্যাগমন প্রতীক্ষায় পথ নিরীক্ষণ করিতেছে। এ সকল যন্ত্রণার কি এই ফল? কিন্তু কি করি, বিধাতার নির্ব্বন্ধ কে খণ্ডন করিতে পারে? এক্ষণে আমার এই পরামর্শ, যে যখন ট্রয়নগর অধিকার করা আমাদের ক্ষমতাতীত হইল, তখন চল, আমাদের এ দেশে থাকায় আর কোনই প্রয়োজন নাই।

 মহাবাহু সেনানীর এতাদৃশ বাক্যাবলী শ্রবণ করিয়া, যাহারা রাজমন্ত্রণার নিগূঢ় তত্ত্ব না জানিত, তাহাদের মন, যেমন শস্যপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রবল বায়ু বহিলে, শস্যশিরঃ তদ্বহনাভিমুখে পরিণত হয়, সেইরূপ রাজপরামর্শের দিকে প্রবণ হইল। সৈন্যদল আনন্দধ্বনি করতঃ এ উহাকে আহ্বান করিয়া কহিতে লাগিল, ডিঙা সকল ডাঙা হইতে সমুদ্র জলে নামাও। চল, আমরা স্বদেশে ফিরিয়া যাই। এইরূপ কোলাহলময় ধ্বনি অমরাবতীতে প্রতিধ্বনিলে দেবকুলেন্দ্রাণী কৃশোদরী হীরী নীলকমলাক্ষী আথেনীকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, হে সখি, গ্রীক্‌ সৈন্যদল কি এই সকলঙ্ক অবস্থায় স্বদেশে প্রস্থান করিতে উদ্যত হইল? তাহারা কি আপনাদের পরাভবের অভিজ্ঞানরূপে হেলেনী সুন্দরীকে ট্রয়নগরে রাখিয়া চলিল? এই জন্যেই কি এত বীরবৃন্দ এ দূর রণক্ষেত্রে প্রাণ