8b-b" বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয়। কিংবা তাহার নিকটবর্তী পূর্ব্বপুরুষগণ উপবিষ্ট না হইয়াছেন, তিনি কখনই “পঞ্চগৌড়েশ্বর” উপাধি গ্রহণ করিতে পারেন নাই। “পঞ্চ গোঁড় চাপিয়া যে গৌড়েশ্বর রাজা। গৌড়েশ্বর পূজা কৈলে গুণের হয় পূজা।” ইত্যাদি উক্তিতে ইনি যে নিতান্ত ক্ষুদ্র রাজা ছিলেন না তাহ প্রতীয়মান হয়। “নয় দেউড়ী” পার হইয়া কৃত্তিবাসকে রাজার নিকট যাইতে হইয়াছিল এবং দ্বারীর হস্তে স্বর্ণময় যষ্টি ছিল; পাঠ সমাপনান্তে কৃত্তিবাস “গৌড়েশ্বরের” নিকট যাইবেন, ইহা জীবনের প্রধান লক্ষ্য করিয়াছিলেন। এই সকল কথায় মনে হয়, এই রাজা বঙ্গদেশে সে সময়ে প্রধান নৃপতি ছিলেন। ইনি সেন-রাজাদের বংশধর হইতে পারেন, নতুবা কোন মুসলমান বাদসহিও হইতে পারেন। কিন্তু যদিও “কেদার খা” প্রভৃতি মুসলমান-উপাধিযুক্ত নাম দেখিয়া মনে হয় রাজসভা মুসলমানপ্রভাব বর্জিত ছিল না, কিন্তু তথাপি এতগুলি নামের মধ্যে একটিও মুসলমানী নাম না পাইয়া আমরা এই রাজাকে হিন্দুরাজা অনুমান। করার বেশী পক্ষপাতী। ১৩৮৫ খৃষ্টাব্দ কৃত্তিবাসের জন্ম-কাল ধরিয়া লইলে তিনি রাজা গণেশের সভায় উপস্থিত হইয়াছিলেন বলিয়া মনে হয়। কৃত্তিবাসের আত্ম-বিবরণ হইতে নিম্নলিখিত কতকগুলি বিষয়ে আমরা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছি, পাঠক স্বয়ং তাহার সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন। ১। কৃত্তিবাস রাজাকে প্রণাম করেন নাই, রাজাও র্তাহাকে প্রণাম করেন নাই। ২। কৃত্তিবাস রাজার দান গ্রহণে স্বীকৃত হন নাই। ৩। সেই কালে হিন্দুরাজার সভায় বাঙ্গলা ভাষা বিশেষ অনাদৃত ছিল। “অষ্টাদশ-পুরাণানি রামস্ত চরিতানি চ। ভাষায়াং মানবঃ শ্রত্ন রৌরবং নরকং ব্রজেৎ॥” ইত্যাদি শ্লোকে র্যাহারা ভাষানুবাদকে নিন্দ করিয়াছেন, তাহাদের প্রভাবান্বিত রাজসভা হইতে কৃত্তিবাস রামায়ণ অনুবাদের ভারপ্রাপ্ত হইলেন। আমরা যতগুলি প্রাচীন ভাগবত ও মহাভারতের অনুবাদ পাইয়াছি, তাহার অধিকাংশই মুসলমান সম্রাট্ট কি নবাবগণের আজ্ঞায় বিরচিত হইয়াছিল।
পাতা:Vanga Sahitya Parichaya Part 1.djvu/৬১২
অবয়ব