বিষয়বস্তুতে চলুন

বরেন্দ্র রন্ধন/চতুর্থ অধ্যায়

উইকিসংকলন থেকে

চতুর্থ অধ্যায়

মেথি পর্ব্ব।

(১) ছেঁচ্‌কী (নিরামিষ)

 আনাজ, মৎস্য অথবা উভয় একত্রে ছেঁচিয়া লইয়া অথবা মিহি’বা ছোট ছোট ডুমা করিয়া কুটিয়া অল্প তৈলে মেথি, লঙ্কা ফোড়ন দিয়া নুণ হলুদ সহ উত্তমরূপে আংসাইয়া অল্প জলে সিদ্ধ করতঃ শুকাইয়া নসনসে গোছ করিয়া নামাইলে ‘ছেঁচ্‌কী’ প্রস্তুত হইল।

 ভাজির সহিত ছেঁচ্‌কীর প্রভেদ অল্পই,—ভাজিতে দুই এক ক্ষেত্রে লঙ্কা, মেথি প্রভৃতি ফোড়ন দেওয়া যায় বটে কিন্তু সাধারণতঃ কোনরূপ ফোড়ন ব্যবহৃত হয় না, ছেঁচ্‌কীতে সব সময়েই লঙ্কা, মেথি বা লঙ্কা, কালজিরা ফোড়ন দিতে হয়। ভাজিতে সাধারণতঃ কচি আনাজ ব্যবহৃত হয়, ছেঁচ্‌কী পাকা বুড়া আনাজেই সচরাচর রাঁধা হইয়া থাকে। ভাসা তেলে জল না দিয়া অথবা অল্প তেলে সামান্য মত জল আছড়া দিয়া ভাজিতে হয়, ছেঁচ্‌কী অল্প তেলে এবং পশ্চৎ অপেক্ষাকৃত অধিক জলে রাঁধা হয়। ভাজিতে আনাজাদি অপেক্ষাকৃত বড় বড় করিয়া কুটা হয় এবং তাহা ঐ আকার বিশিষ্ট অর্থাৎ গোটা রাখিয়াই ভাজা হইয়া থাকে, ছেঁচ্‌কীর আনাজ মিহি করিয়া কুটিয়া লওয়া হয় এবং তাহা তেলে একটু বেশী আংসাইয়া লইয়া— (আংসাইয়া আনাজ লালচে হইলে তবে ঠিক হইবে) পরে জল দিয়া সিদ্ধ করিয়া বেশ নসনসে বা লপেট গোছ করিয়া লইয়া নামাইতে হয়। ভাজির সমতুল্য ছেঁচ্‌কী কদাপী মুচমুচে হয় না, তবে ‘ঝুরি’ ঠিক লপেট গোছ না হইয়া একটু ঝুরঝুরে গোছ হইয়া থাকে। অতএব ছেঁচ্‌কীর বিশেষত্ব—মিহি করিয়া আনাজ বানানে এবং পশ্চাৎ তাহা তেলে লঙ্কা, মেথি প্রভৃতি ফোড়ন দিয়া অধিক আংসানে।

 ছেঁচ্‌কী হইতে ‘মেথি পর্ব্ব’ আরম্ভ। মেথি পর্ব্ব চারি অধ্যায়ে বিভক্ত—(১) ছেঁচ্‌কী। (২) চড়চড়ী। (৩) শুক্তানি ও (৪) ঝোল। তৎপর ‘জিরা পর্ব্ব’ আরম্ভ। তাহাও চারি অধ্যায়ে বিভক্ত—(১) সূপ। (১) ঘণ্ট। (৩) ঝাল ও (৪) কালিয়া। বরেন্দ্রের তাবৎ ব্যঞ্জনই (তরকারী) এই অষ্টাধ্যায়ের অন্তর্গত।

 মেথি পর্ব্বে সর্ব্বত্র মেথিও লঙ্কা ফোড়ন দিয়া রন্ধন হইবে এবং জিরা পর্ব্বে সর্ব্বত্র জিরা ও লঙ্কা বা শুধু জিরা ফোড়ন দিয়া রন্ধন হইবে। বরেন্দ্রে ‘পাঁচ-ফোড়ন’ব্যবহার প্রচলন নাই। মোটামুটি অষ্ট প্রকার ব্যঞ্জনের মধ্যে চারি প্রকার মেথি ফোড়ন দিয়া এবং অবশিষ্ট চারি প্রকার জিরা ফোড়ন দিয়া রন্ধন হইয়া থাকে। তবে অবশ্য ব্যঞ্জন অথবা আনাজাদি ভেদে মেথি ও জিরার সহিত অপর যে ফোড়ন সেখানে খাপ খাইবে কেবল তাহাই দেওয়ার বিধি আছে। যেমন ‘শুক্তানিতে’ মেথির সহিত দুটো সরিষা ফোড়ন দিতে হইবে এবং ‘কালিয়াতে’ জিরার সহিত দুটো গরম মশলা ফোড়ন দিতে হইবে। মেথির সহিত শুক্নালঙ্কা ফোড়ন দেওয়া অনিবার্য্য, কিন্তু জিরার সহিত ইচ্ছা করিলে তাহা বাদ দেওয়াও যাইতে পারে। মেথির সহিত বাটা ঝালের মধ্যে একমাত্র লঙ্কা বাটা ছাড়া আর কোন প্রকার বাটা ঝালই দিবে না, কিন্তু জিরা ফোড়নের সহিত জিরা-গোলমরিচ বাটা দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। অপিচ তৎসঙ্গে লঙ্কা বাটা, ধনিয়া বাটা, তেজপাতা বাটা, রাঁধুনী বাটা প্রভৃতিও অনেক স্থলেই দিতে হয়। কেবল একমাত্র ‘সূপে’ বা ডাইলের ঝোলে এই নিয়মের ব্যতিক্রম লক্ষিত হয়, অর্থাৎ বাটা ঝাল না দিয়াই তাহা অধিকাংশ স্থলে রন্ধন হইয়া থাকে।

 মেথি কিছু তীতস্বাদবিশিষ্ট ও নাল্‌সেপানা, সুতরাং তাহা কখনও বাটনারূপে ব্যবহৃত হয় না অথবা এক লঙ্কা বাটা ছাড়া অপর কোনও বাটা ঝালের সহিত মেথি ফোড়ন খাপও খায় না। সুতরাং মেথি ফোড়ন দেওয়া ব্যঞ্জনের সহিত কোনও প্রকার বাটা ঝাল দেওয়া প্রসস্ত নহে। বরেন্দ্রে মেথির সহিত কদাপী একত্রে জিরা ফোড়ন দেওয়া হয় না, অথবা মেথি ফোড়ন দেওয়া ব্যঞ্জনের সহিত জিরা বাটা-সংযোগও হয় না। দুই এক ক্ষেত্রে ইহার কিছু ব্যতিক্রম ঘটিয়া থাকে। যথা, ইলিশ ও কৈ মাছের ‘ঝালে’ জিরার সহিত দুটো মেথি ফোড়ন দেয়। পক্ষান্তরে ডাল-ফেলানী ‘ঝোলে’ মেথির পরিবর্ত্তে দুটো জিরা ফোড়ন দেওয়াও হইয়া থাকে।

 মেথি পর্ব্বের অন্তর্গত ‘ঝোলের’ সহিত ‘ছেঁচ্‌কীর’ বিশেষ সাদৃশ্য আছে,—উভয়ে একই প্রকার ফোড়ন আদি পরে। কিন্তু ‘ছেঁচ্‌কীতে’ যেমন পাকা আনাজাদি মিহি করিয়া কুটিয়া লইতে হয় এবং তাহা অধিক পরিমাণে আংসাইয়া লাল্‌চে গোছ করিয়া লইতে হয় এবং শেষ পর্য্যন্ত শুকাইয়া নস্‌নসে করিয়া নামাইতে হয়, ‘ঝোলে’ তাহা করিতে হয় না;—ঝোলে কচি আনাজাদি অপেক্ষাকৃত বড় বড় করিয়া কুটিয়া লইতে হয়, এবং তাহা তাদৃশ কষাইতেও হয় না এবং শেষ পর্য্যন্ত যথেষ্ট ঝোল ঝোল রাখিয়া নামাইতে হয়। ‘ঝোল’ পর্য্যায়ের কেবল নিরামিষ ‘লাবরা’ এবং আমিষ ‘ভাঙ্গা’ শুকাইয়া অপেক্ষাকৃত লপেট গোছ করিয়া রাঁধিতে হয়, তবুও তাহা ছেঁচ্‌কীর ন্যায় তাদৃশ ‘ঘেঁতাঘেঁতা’ গোছ হয় না অথবা তাহার কচি আনাজ মৎস্যাদিও তাদৃশ অধিক কষাইয়া পাক করিতে হয় না। অবশ্য এই দুই লক্ষণে পার্থক্য থাকিলেও সে ব্যবধান খুব কমই বলিতে হইবে, তত্রাচ ‘ছেঁচ্‌কী’ পর্য্যায়ের ব্যঞ্জন হইতে ‘ঝোল’ পর্য্যায়ের এই উভয়বিধ ব্যঞ্জনেরই আস্বাদনের যথেষ্ট তফাৎ আছে বলিয়া বোধ হয়।

 ছেঁচ্‌কীতে পিঠালী ব্যবহৃত হয় না, তবে দুই এক ক্ষেত্রে তিল বা পোস্ত বাটা ব্যবহৃত হইয়া থাকে। তিল বাটা দিলে তাহাকে ‘খরখরি’ বলা হয়।

 ছেঁচ্‌কীতে ও ঝোলে দুই এক ক্ষেত্রে দুটো সরিষা ফোড়নও দেওয়া যায়।

৭৬। লাউ ছেঁচ্‌কী

 লাউ সরু সরু বা ছোট ছোট ডুমা করিয়া কুটিয়া লও, অথবা ছেঁচিয়া লও। তৈলে লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া লাউ ছাড়। উত্তমরূপে আংসাও। নুণ, হলুদ দিয়া জল দাও। সিদ্ধ হইলে একটু চিনি দাও, জল শুকাইয়া বেশ নসনসে গোছ হইলে নামাও।

৭৭। শিম ছেঁচ্‌কী

 শিমের শিরা ফেলিয়া দিয়া ছোট ছোট খণ্ডে কুটিয়া লও। একটু ভাপ দিয়া লও। তৈলে লঙ্কা মেথি ফোড়ন দিয়া শিম ছাড়। উত্তমরূপে আংসাও। নুণ, হলুদ ও একটু লঙ্কা বাটা জলে গুলিয়া ঢালিয়া দাও। সিদ্ধ হইলে একটু চিনি মিশাও। শুকাইয়া নস্‌নসে গোছ হইলে নামাও।

 কাঁকরোল, ডুমুর, স্কোয়াস, মূলা, ওলকোবি, সালগম প্রভৃতির এই প্রকারে ছেঁচ্‌কী রাঁধিবে।

৭৮। লাউ-ভাদালে ছেঁচ্‌কী

 লাউ ও গাভথোড় সরু সরু বা ছোট ছোট ডুমা করিয়া কুটিয়া লও। থোড়ে কিছু লবণ মাখিয়া খানিকক্ষণ রাখিয়া পরে চিপিয়া জল ফেলিয়া লও। তৈলে লঙ্কা, কালজিরা ও মেথি ফোড়ন দিয়া লাউ ভাদাল ছাড়। আংসাও। নুণ হলুদ দিয়া একটু জল দাও। সিদ্ধ হইলে একটু চিনি দাও। শুকাইয়া নসনসে হইলে নামাও। লাউ-মূলাতেও এইরূপ ছেঁচ্‌কী রাঁধিবে। বুড়া মূলা হইলে ভাপ দিয়া লইবে। তাহাতে কালজিরা ফোড়ন দিবার প্রয়োজন নাই।

৭৯। মোচা ছেঁচ্‌কী

 মোচার ভিতরের ফুল-কলার ফুল কাটিয়া ফেলিয়’ ছুলিয়া একটু লম্বা ছাঁদে কুটিয়া লও। গাভথোড় একটু মোটা মোটা রাখিয়া কুটিয়া লও। গাভথোড় পাৎলা পাৎলা করিয়া কুটিয়া লইলে তৈলে ভাজিলে চিমড়াপনা হইয়া যাইবে। থোড়ে একটু নুণ মাখিয়া খানিকক্ষণ পরে জল চিপিয়া লও। তৈলে লঙ্কা ও কালজিরা ফোড়ন দিয়া মোচা ও গাভথোড় ছাড়। আংসাও। (ইহা অধিক আংসাইলে চিমড়াপানা হইয়া যাইবে।) নুণ হলুদ দিয়া জল দাও। সিদ্ধ হইলে চিনি দাও। শুকাইলে নামাও। এই ছেঁচ্‌কী মোলায়েম হইবে কিন্তু নসনসে হইবে না।

 শুধু গাভথোড় ছোট ডুমা ডুমা করিয়া কুটিয়া এই প্রকারে ছেঁচ্‌কী রাঁধিবে।

 গাভথোড় ছেঁচ্‌কীতে পরিশেষে তিল বাটা মিশাইয়া শুকাইয়া নামাইলে তাহা থোড়ের ‘খরখরি’ হইবে। মূলা প্রভৃতিরও ‘খরখরি’ হয়।

৮০। পেঁয়াজ কলি (বা ফুল্কা) ছেঁচ্‌কী

 পেঁয়াজ কলি ছোট ছোট করিয়া কুটিয়া লও। বেগুন ছোট ছোট ডুমা ডুমা করিয়া কুটিয়া লও। তৈলে লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া ছাড়। আংসাও। নুণ হলুদ দিয়া ঈষৎ জল দাও। শুকাইয়া নসনসে হইলে নামাও। শিমের সহিতও পেঁয়াজ কলির ছেঁচ্‌কী হইতে পারে। রাঁধাকোবি, ফুলকোবির পাতার সহিত ও প্যাঁজকলির উত্তম ছেঁচ্‌কী রাঁধিতে পারা যায়।

৮১। সজিনা ফুলের ছেঁচ্‌কী

 সজিনা ফুল বাছিয়া লইয়া ভাপ দিয়া জল গালিয়া ফেলিয়া লও। বেগুন ছোট ছোট ডুমা করিয়া কুটিয়া লও। তৈলে তেজপাতা, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া ফুল ও বেগুন ছাড়। আংসাও। নুণ, হলুদ দিয়া একটু জল দাও। পরে কিছু মিষ্ট দাও। শুকাইয়া নস্‌নসে হইলে নামাও।

 শান্তি, শুশুনী প্রভৃতি শাকের এই প্রকারে বেগুন যোগে ছেঁচ্‌কী হইতে পারে।

৮২। ফুলকোবি পাতার ছেঁচ্‌কী

 ফুলকোবির পাতা কুচাইয়া একটু ভাপ দিয়া লও। বেগুন ছোট ছোট ডুমা করিয়া কুটিয়া লও। তৈলে লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া পাতা বেগুন ছাড়। উত্তমরূপে আংসাও। নুণ, হলুদ দিয়া একটু চিনি দাও। শুকাইয়া নসনসে হইলে নামাও। বাঁধাকোবি পাতারও এই প্রকারে ছেঁচ্‌কী হইবে।

৮৩। বিলাতী কুমড়ার ছেঁচ্‌কী

 বিলাতী কুমড়া সরু সরু করিয়া অথবা ছোট ছোট ডুমা করিয়া কুট। তৈলে লঙ্কা, মেথি ও কালজিরা ফোড়ন দিয়া ছাড়। উত্তমরূপে অংসাও। নুণ হলুদ দিয়া একটু জল দাও। সিদ্ধ হইলে চিনি দাও। শুকাইয়া নামাও।

৮৪। শশা ছেঁচ্‌কী

 বুড়া শশা সরু সরু করিয়া কুটিয়া লও। তৈলে তেজপাত, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া ছাড়। উত্তমরূপে অংসাও। নুণ, হলুদ দিয়া একটু জল দাও। সিদ্ধ হইলে একটু চিনি দাও। শুকাইয়া নসনসে হইলে নামাও।

 শশার সহিত ভাদাল মিশাইয়াও ছেঁচ্‌কী রাঁধিতে পার।

 কঁচা ফুটী, কঁচা তরমুজ বা পাকা তরমুজের খোলর শাঁস, কচি ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুমা, কাঁকরী প্রভৃতির এই প্রকারে ছেঁচ্‌কী রাঁধিবে।

৮৫। ছাঁচি কুমড়া ছেঁচ্‌কী

 পুরু বা বুড়া কুমড়া সরু সরু করিয়া কুটিয়া ভাপ দিয়া লও। তৈলে লঙ্কা, কালজিরা, মেথি ও দুটো সরিষার গুঁড়া ফোড়ন দিয়া কুমড়া ছাড়। নুণ হলুদ দাও। আংসাও। প্রয়োজন বোধ করিলে একটু জল দিয়া সিদ্ধ করিয়া শুকাইয়া নামাও। একটু চিনি দিবে।

৮৬। বটী (পূর্ব্ববঙ্গীয়)

 মিঠা (বিলাতী) কুমড়ার খোসা, লাউর খোসা, শশার খোসা, মিঠে কুমড়া, গাভথোড় প্রভৃতি কুটিয়া এক সঙ্গে লও। তেলে কাঁচা লঙ্কা, কালজিরা ও দুটো সরিষা ফোড়ন দিয়া ছাড়। উত্তমরূপে আংসাও। নুণ হলুদ দিয়া অল্প জল দাও। শুকাইয়া নামাও।

৮৭। খরখরি

 থোড়, মূলা, ঝিঙ্গা, অথবা আলু প্রভৃতি আনাজের ছেঁচ্‌কী রাঁধিয়া নামাইবার পূর্ব্বে তাহার সহিত নারিকেল-কুড়া, তিল বা পোস্ত বাটা মিশাইয়া নাড়িয়া চাড়িয়া শুকাইয়া নামাইলে যে ব্যঞ্জন প্রস্তুত হইল তাহাকে ‘খরখরি’ বলা হয়। তিল প্রভৃতি বাটার ভাগ অবশ্য অল্প পরিমাণে দেয়, তবে কেহ কেহ রুচী অনুসারে কিছু বেশী ও দিয়া থাকেন।

৮৮। আলু ছেঁচ্‌কী

 আলু ছোট ডুমা ডুমা করিয়া কুট। তৈলে লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া ছাড়। আংসাও। নুণ ললুদ দিয়া জল দাও। একটু চিনি দাও। শুকাইয়া নামাও।

৮৯। আলুর ঝুরি

আলু সিদ্ধ করিয়া থোসা ছাড়াইয়া উত্তমরূপে চটকাইয়া ছানিয়া লও। তৈলে লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া ছাড়। নুণ হলুদ ও একটু চিনি দাও। উত্তমরূপে আংসাও। শুকাইয়া ঝুরঝুরে হইলে নামাও।

৯০। আলু পটোলের ঝুরি

 আলু, পটোল, করিলা ও কাঁঠালের বীচি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডুমা ডুমা করিয়া কুট। তৈলে তেজপাত, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া অনাজ ছাড়। অংসাও। নুণ, হলুদ দিয়া সামান্য একটু জল দাও। বেশ শুক্‌না শুক্‌না করিয়া নামাও।

ছেঁচ্‌কী (আমিষ)

৯১। ইলিশ মাছের ঝুরি

 ইলিশ মাছের গাদার মাছই ঝুরি রাঁধিবার পক্ষে প্রশস্ত। আলু, পটোল, কাঁঠালবীচি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডুমা ডুমা করিয়া কুটিয়া লও। নুণ, হলুদ মাখিয়া মাছ কষাইয়া রাখ। তৈলে তেজপাত, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া আনজ ছাড়। আংসাও। কষান মাছ ছাড়। মুণ, হলুদ দিয়া পুনঃ আংসাও। মাছগুলি ভাঙ্গিয়া দাও। বেশ ভাজা ভাজা গোছ হইলে নামাও। ইহাতে জল দিবার আবশ্যক নাই। নামাইবার পূর্ব্বে দুটো চিড়া ভিজাইয়া চিপিয়া লইয়া মিশাইলে ইহার স্বাদ সুন্দর অন্যরূপ হইবে।

 কুচা চিঙড়ী এবং কৈ মাছের ঝুরিও এইরূপে রাঁধিবে।

৯২। কচি কুমড়ার সহিত ইলিশ মাছ ছেঁচ্‌কী

 আষাঢ় মাসের শেষে এবং শ্রাবণমাসে যখন ইলিশ মাছ বেশ তৈলাক্ত ও সুস্বাদু হয় সেই সময় ছাঁচি কুমড়াও কচি অবস্থায় পাওয়া যায়। এতদুভয় সংযোগে অতি উপাদেয় ছেঁচ্‌কী প্রস্তুত হইয়া থাকে। মাছের ভাগ কিছু বেশী লইলে তবে ছেঁচ্‌কীর স্বাদ উত্তম হয়। মাছ কুটিয়া নুণ হলুদ মাখ। কচি ছাঁচী কুমড়া মিহি করিয়া বানাও। তৈলে মাছ ছাড়িয়া কষাইয়া উঠাইয়া রাখ। সম্ভবপর হইলে ঐ তেলেই তেজপাত, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া কুমড়া

ছাড়। উত্তমরূপে আংসাও। তেজপাত ভাঙ্গিয়া না যায় তাহার ব্যবস্থা করিবে। নুণ, হলুদ ও লঙ্কা বাটা জলে গুলিয়া ঢালিয়া দাও। কষান মাছ ছাড়। সুসিদ্ধ হইলে মাছ ভাঙ্গিয়া দিয়া ঘাঁটিয়া সমস্ত বেশ করিয়া মিশাইয়া দাও। জল শুকাইয়া বেশ নসনসে গোছ হইলে নামাও। (তৈল একটু অধিক পরিমাণে দিলে তবে স্বাদ উৎকৃষ্ট হইবে।)

 শশা বা জগ-ডুমুরের সহিত ইলিশ মাছের ছেঁচ্‌কী এই প্রকারে রাঁধিবে।

 দ্রষ্টব্য—ইলিশ মাছের সহিত লাউ ব্যবহৃত হয় না।

৯৩। লাউ-চিঙড়ী

 লাউ ডুম ডুমা করিয়া কুট। ছোট ছোট চিংড়ী মাছ লইয়া নুণ হলুদ মাখ। তৈলে তেজপাত, লঙ্কা, কালজিরা ও মেথি ফোড়ন দিয়া চিঙড়ী মাছ ছাড়। আংসাও। লাউ ছাড়। আংসাও। ঈষৎ লঙ্কাবাটা ও নুণ দিয়া জল দাও। জল শুকাইয়া আসিলে একটু মিষ্ট দিয়া নাড়িয়া চাড়িয়া বেশ নস্‌নসে করিয়া নামাও।

 কাঁকড়া এবং শোল মাছের সহিত লাউর এই প্রকারে ছেঁচ্‌কী রাঁধিতে পার। ইচ্ছা করিলে কিছু নারিকেল কুড়া, তিল বা পোস্তবাটা নামাইবার পূর্ব্বে মিশাইয়া লইতে পার। লাউর পরিবর্তে বাঁধাকোবি ব্যবহৃত হইতে পারে।

৯৪। ভাদাল-চিঙড়ী

 গাভথোড় ভাদাল ছোট ছোট ডুম ডুমা করিয়া কুট। নুণ মাখিয়া কিছুক্ষণ পরে জল চিপিয়া ফেল। তৈলে তেজপাত, লঙ্কা, কালজিরা ও মেথি ফোড়ন দিয়া চিংড়ী মাছ ছাড়। আংসাও। ভাদাল ছাড়। আংসাও। সামান্য লঙ্কা বাটা ও নুণ হলুদ দিয়া জল দাও। সিদ্ধ হইলে একটু মিষ্ট দিয়া শুকাইয়া নামাও। ইচ্ছা করিলে কিছু নারিকেল কুড়া, তিল বা পোস্তবাটা মিশাইতে পার।

৯৫। কৈ মাছের সহিত বাঁধাকোবির ছেঁচ্‌কী

 বাঁধাকোবি কুচি কুচি করিয়া কুটিয়া লও। কৈ মাছ নুণ হলুদ দিয়া মাখ। বড় কৈ মাছ হইলে দুই বা তিন খণ্ড করিয়া লও। তৈলে তেজপাত, লঙ্কা, মেথি ফোড়ন দিয়া মাছ ছাড়। সামান্য আংসাও। বাঁধাকোবি ছাড়। আংসাও। নুণ, হলুদ, লঙ্কাবাটা দিয়া জল দাও। সিদ্ধ হইলে একটু চিনি দাও। শুক্‌না শুক্‌না করিয়া নামাও। ইচ্ছা করিলে কিছু নারিকেল কুড়া, তিল বা পোস্তবাটা নামাইবার পূর্ব্বে মিশাইতে পার।

 লাউয়ের সহিত কৈ মাছের ছেঁচ্‌কী এই প্রকারে রাঁধিবে।