বিষয়বস্তুতে চলুন

বাংলা শব্দতত্ত্ব/সংজ্ঞাবিচার

উইকিসংকলন থেকে

সংজ্ঞাবিচার

পৌষ মাসের বালকে উৎকৃষ্ট সংজ্ঞা বাহির করিবার জন্য ‘হুজুগ’, ‘ন্যাকামি’ এবং ‘আহ্লাদে’ এই তিনটি শব্দ নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছিলাম, পাঠকদের নিকট হইতে অনেকগুলি সংজ্ঞা আমাদের হাতে আসিয়াছে।[]

 কথাগুলি সম্পূর্ণ প্রচলিত। আমরা পরস্পর কথোপকথনে ওই কথাগুলি যখন ব্যবহার করি তখন কাহারো বুঝিবার ভুল হয় না, অথচ স্পষ্ট করিয়া অর্থ জিজ্ঞাসা করিলে ভিন্ন লোকে ভিন্ন অর্থ বলিয়া থাকেন। ইহা হইতে এমন বুঝাইতেছে না যে, বাস্তবিকই ওই কথাগুলির ভিন্ন লোকে ভিন্ন অর্থ বুঝিয়া থাকেন— কারণ, তাহা হইলে তো ও কথা লইয়া কোনো কাজই চলিত না। প্রকৃত কথা এই, আমরা অনেক জিনিস বুঝিয়া থাকি, কিন্তু কী বুঝিলাম সেটা ভালো করিয়া বুঝিতে অনেক চিন্তা আবশ্যক করে। যেমন আমরা অনেকে সহজেই সাঁতার দিতে পারি, কিন্তু কী উপায়ে সাঁতার দিতেছি তাহা বুঝাইয়া বলিতে পারি না। অথবা, একজন মানুষ রাগিলে তাহার মুখভঙ্গি দেখিলে আমরা সহজেই বলিতে পারি মানুষটা রাগিয়াছে; কিন্তু আমি যদি পাঁচজনকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করি, আচ্ছা বলো দেখি রাগিলে মানুষের মুখের কিরূপ পরিবর্তন হয়, মুখের কোন্ কোন্ মাংসপেশীর কিরূপ বিকার হয়, মুখের কোন্ অংশের কিরূপ অবস্থান্তর হয়, তাহা হইলে পাঁচজনের বর্ণনায় প্রভেদ লক্ষিত হইবে অথচ ক্রুদ্ধ মনুষ্যকে দেখিলেই পাঁচজনে বিনা মতভেদে সমস্বরে বলিয়া উঠিবে লোকটা ভারি চটিয়া উঠিয়াছে। পাঠকদের নিকট হইতে যে-সকল সংজ্ঞা পাইয়াছি তাহার কতকগুলি এই স্থানে পরে পরে আলোচনা করিয়া দেখিলেই পরস্পরের মধ্যে অনেক প্রভেদ দেখা যাইবে।

 একজন বলিতেছেন, ‘হুজুক— জনসাধারণের হৃদয়োন্মাদক আন্দোলন।’ তা যদি হয় তো, বুদ্ধ চৈতন্য যিশু ক্রমোয়েল ওয়াশিংটন প্রভৃতি সকলেই হজুক করিয়াছিলেন। কিন্তু লেখক কখনােই সচরাচর কথােপকথনে এরূপ অর্থে হুজুক ব্যবহার করেন না।

 ইনিই বলিতেছেন, ‘ন্যাকামি— অভিমানবশত কিছুতে অনিচ্ছা প্রকাশ অথবা ইচ্ছাসত্ত্বে অভিমানীর অনিচ্ছা প্রকাশ।’

 স্থলবিশেষে অভিমানচ্ছলে কোনাে ব্যক্তি ন্যাকামি করিতেও পারে, কিন্তু তাই বলিয়া অভিমানবশত অনিচ্ছা প্রকাশ করাকেই যে ন্যাকামি বলে তাহা নহে।

 আহ্লাদে শব্দের ব্যাখ্যা করিতে গিয়া ইনি বলেন, ‘দশজনের আহ্লাদ পাইয়া অহংকৃত।’ প্রশ্রয়প্রাপ্ত, অহংকৃত এবং ‘আহ্লাদে’-র মধ্যে যে অনেক প্রভেদ এতাে বলাই বাহুল্য।

 হুজুগ শব্দের নিম্নলিখিত প্রাপ্ত সংজ্ঞাগুলি পরে পরে প্রকাশ করিলাম।

হুজুগ

 ১। বিস্ময়জনক সংবাদ যাহা সত্য কি মিথ্যা নির্ণয় করা কঠিন।

 ২। অকারণ বিষয়ে উদ্যোগ ও উৎসাহ (অকারণ শব্দের দুই অর্থ—১ অনির্দিষ্ট; ২ তুচ্ছ, সামান্য)।

 ৩। অল্পেতে নেচে ওঠার নাম।

 ৪। অতিরঞ্জিত জনরব।

 []

 ৬। ফল অনিশ্চিত এরূপ বিষয়ে মাতা।

 ৭। কোনাে এক ঘটনা, লােকে যাহার হ্যাপায় প’ড়ে স্রোতে ভাসে। ‘বাজারদরে নেচে বেড়ানো।’ ‘ঝড়ের আগে ধুলা উড়া।’

 ৮। ফস্ কথায় নেচে ওঠা।

 ৯। দেশব্যাপী কোনাে নূতন (সত্য এবং মিথ্যা) আন্দোলন।

 ১০। বাহ্যাড়ম্বরে মত্ততা।

 প্রথম সংজ্ঞাটি যে ঠিক হয় নাই তাহা ব্যক্ত করিয়া বলাই বাহুল্য।

 দ্বিতীয় সংজ্ঞা সম্বন্ধে বক্তব্য এই যে, লেখক নিজেই অকারণ শব্দের যে-অর্থ নির্দেশ করিয়াছেন তাহা পরিষ্কার নহে। অনির্দিষ্ট অর্থাৎ যাহার লক্ষ স্থির হয় নাই এমন কোনো তুচ্ছ সামান্য বিষয়কেই বোধ করি তিনি অকারণ বিষয় বলিতেছেন― তাঁহার মতে এইরূপ বিষয়ে উদ্যোগ ও উৎসাহকেই হুজুগ বলে। কেহ যদি বিশেষ উদ্যোগের সহিত একটা বালুকার স্তূপ নির্মাণ করিয়া সমস্ত দিন ধরিয়া পরমোৎসাহে তাহা আবার ভাঙিতে থাকে তবে তাহাকে হুজুগে বলিবে না পাগল বলিবে?

 তৃতীয় সংজ্ঞা। রাম যদি ঘুড়ি উড়াইবার প্রস্তাব শুনিবা মাত্র উৎসাহে নাচিয়া উঠে তবে রামকে কি হুজুগে বলিবে।

 চতুর্থ সংজ্ঞা। অতিরঞ্জিত জনরবকে যে হুজুগ বলে না তা আর কাহাকেও বুঝাইতে বলিতে হইবে না। শ্যাম তাহার কন্যার বিবাহোপলক্ষে পাঁচ শ টাকা খরচ করিয়াছে; লোকে যদি রটায় যে সে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করিয়াছে, তবে সেই জনরবকেই কি হুজুগ বলিবে।

 পঞ্চম সংজ্ঞা। মাঝে মাঝে সংবাদপত্রে অসম্ভব সংবাদ রাষ্ট্র হইয়া থাকে, তাহাকে কেহ হুজুগ বলে না।

 ষষ্ঠ সংজ্ঞা। লাভ অনিশ্চিত এমনতরো ব্যবসায়ে অনেকে অর্থলোভে প্রবৃত্ত হইয়া থাকেন, সেরূপ ব্যবসায়কে কেহ হুজুগ বলে না।

 সপ্তম। এ সংজ্ঞাটি পরিষ্কার নহে। যে-ঘটনার স্রোতে লোকে ভাসিতে থাকে তাহাকে হুজুগ বলা যায় না; তবে লেখক হ্যাপা শব্দের ঘোগ করিয়া ইহার মধ্যে আর-একটি নূতন ভাব প্রবেশ করাইয়াছেন। কিন্তু হ্যাপা শব্দের ঠিক অর্থটি কী সে সম্বন্ধে তর্ক উঠিতে পারে, অতএব হুজুগ শব্দের ন্যায় হ্যাপা শব্দও সংজ্ঞানির্দেশযোগ্য। সুতরাং হ্যাপা শব্দের সাহায্যে হুজুগ শব্দ বোঝাইবার চেষ্টা সংগত হয় না। ‘বাজারদরে নেচে বেড়ানো’, ‘ঝড়ের আগে ধুলা উড়া’— দুটি ব্যাখ্যাও সুস্পষ্ট নহে।

 অষ্টম। হরি যদি মাধবকে বলে, তুই ট্যাঁকশালের দাওয়ান হইবি—অমনি যদি মাধব নাচিয়া উঠে— তবে মাধবের সেই উৎসাহ-উল্লাসকে হুজুগ বলা যায় না।

 নবম। আন্দোলন নূতন হইলেই তাহাকে হুজুগ বলা যাইতে পারে না।

 দশম। বাহ্যাড়ম্বরে মত্ততা মাত্রই হজুগ বলিতে পারি না। কোনো রায়বাহাদুর যদি তাহার খেতাব ও গাড়িজুড়ি লইয়া মাতিয়া থাকে, তাহাr সেই মত্ততাকে কি হুজুগ বলা যায়।

 আমরা যে-লেখককে পুরস্কার দিয়াছি তিনি হুজুগ শব্দের নিম্নলিখিতমত ব্যাখ্যা করেন:

‘মাথা নাই মাথা ব্যথা’ গােছের কতকগুলা নাচুনে জিনিস লইয়া যে-নাচন আরম্ভ হয় সেই নাচনের অবস্থাকেই হুজুগ বলে। বিশেষ কিছুই হয় নাই অথবা অতি সামান্য একটা-কিছু হইয়াছে আর সেইটাকে লইয়া সকলে নাচিয়া উঠিয়াছে, এই অবস্থার নাম হুজুগ।


 আমরা দেখিতেছি হুজুগে প্রথমত এমন একটা বিষয় থাকা চাই যাহার প্রতিষ্ঠাভূমি নাই― যাহার ডালপালা খুব বিস্তৃত, কিন্তু শিকড়ের দিকের অভাব। মনে কর আমি ‘সার্বজনীনতা’ বা ‘বিশ্বপ্রেম’ প্রচারের জন্য এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করিয়া বসিয়াছি; তাহার কত মন্ত্রতন্ত্র কত অনুষ্ঠান তাহার ঠিক নাই, কিন্তু আমার ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের বহির্ভূত লােকদের প্রতি আমাদের জাতবিদ্বেষ প্রকাশ পাইতেছে— মূলেই প্রেমের অভাব অথচ প্রেমের অনুষ্ঠানের ত্রুটি নাই। দ্বিতীয়ত, ইহার সঙ্গে একটা নাচনের যোগ থাকা চাই, অর্থাৎ কাজের প্রতি ততটা নহে যতটা মত্ততার প্রতি লক্ষ। অর্থাৎ হাে-হা করিয়া বেশ সময় কাটিয়া যাইতেছে, খুব একটা হাঙ্গামা হইতেছে এবং তাহাতেই একটা আনন্দ পাইতেছি। যদি স্থির হইয়া স্তব্ধভাবে কাজ করিতে বলে তবে তাহাতে মন লাগে না, কারণ নাচানো এবং নাচা, এ-দুটোই মুখ্য আবশ্যক। তৃতীয়ত, কেবল একজনকে লইয়া হুজুগ হয় না—সাধারণকে আবশ্যক— সাধারণকে লইয়া একটা হট্টগােল বাধাইবার চেষ্টা। চতুর্থত, হুজুগ কেবল একটা খবরমাত্র রটানাে নহে; কোনাে অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হইবার জন্য সমারােহের সহিত উদ্যোগ করা, তার পরে সেটা হউক বা না-হউক।

 আমাদের পুরস্কৃত সংজ্ঞালেখকের সংজ্ঞা যে সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ ও যথেষ্ট সংক্ষিপ্ত হইয়াছে তাহা বলিতে পারি না। তিনি তাঁহার সংজ্ঞার দুইটি পদকে সংক্ষেপ করিয়া অনায়াসেই একপদে পরিণত করিতে পারিতেন।

 সংজ্ঞা রচনা করা যে দুরূহ তাহার প্রধান একটা কারণ এই দেখিতেছি যে, একটি কথার সহিত অনেকগুলি জটিল ভাব জড়িত হইয়া থাকে, লেখকেরা সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞার মধ্যে তাহার সকলগুলি গুছাইয়া লইতে পারেন না— অনবধানতাদোষে একটা-না-একটা বাদ পড়িয়া যায়। উদ্‌ধৃত সংজ্ঞাগুলির মধ্যে পাঠকেরা তাহার দৃষ্টান্ত পাইয়াছেন।

ন্যাকামি

 ১। জানিয়া না-জানার ভান।

 ২। জানিয়া না-জানার ভাব প্রকাশ করা।

 ৩। জেনেও জানি না, এই ভাব প্রকাশ করা।

 ৪। জানিয়াও না-জানার ভান।

 ৫। অবগত থাকিয়া অজ্ঞতা দেখানো।

 ৬। বিলক্ষণ আনিয়াও অজ্ঞানতার লক্ষণ প্রকাশ করা।

 ৭। বুঝেও নিজেকে অবুঝের ন্যায় প্রতিপন্ন করা।

 ৮। সেয়ানা হয়ে বোকা সাজা।

 ৯। জেনেশুনে ছেলেমি।

 ১০। বুঝে অবুঝ হওয়া। জেনেশুনে হাবা হওয়া।

 ১১। ইচ্ছাকৃত অজ্ঞতা এবং মিথ্যা সরলতা।

 প্রথম হইতে সপ্তম সংজ্ঞা পর্যন্ত সকলগুলির ভাব প্রায় একই রকম। অর্থাৎ সকলগুলিতেই জানিয়াও না-জানার ভান, এই অর্থই প্রকাশ পাইতেছে; কিন্তু এরূপ ভাবকে অসরলতা মিথ্যাচরণ বা কপটতা বলা যায়। কিন্তু কপটতা ও ন্যাকামি ঠিক একরূপ জিনিস নহে। অষ্টম সংজ্ঞায় লেখক শ্রীযুক্ত মহেন্দ্রনাথ রায় যে বলিয়াছেন, সেয়ানা হইয়া বোকা সাজা, ইহাই আমার ঠিক বোধ হয়। জানিয়া না-জানার ভাব প্রকাশ করিলেই হইবে না, সেইসঙ্গে প্রকাশ করিতে হইবে আমি যেন নির্বোধ, আমার যেন বুঝিবার শক্তিই নাই। ষষ্ঠ এবং সপ্তম সংজ্ঞাতেও কতকটা এই ভাব প্রকাশ পাইয়াছে, কিন্তু তেমন স্পষ্ট হয় নাই। নবম ও দশম সংজ্ঞা ঠিক হইয়াছে। কিন্তু অষ্টম হইতে দশম সংজ্ঞাতে বোকা, ছেলেমি, হাবা শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে; এই শব্দগুলি সংজ্ঞানির্দেশযোগ্য। অর্থাৎ হাবামি, বোকামি ও ছেলেমির বিশেষ লক্ষণ কী তাহা মনোযোগসহকারে আলোচনা করিয়া দেখিবার বিষয়। এইজন্য একাদশ সংজ্ঞার লেখক যে ইচ্ছাকৃত অজ্ঞতার ভানের সঙ্গে ‘মিথ্যা সরলতা’ শব্দ যোগ করিয়া দিয়াছেন, তাহাতে ন্যাকামি শব্দের অর্থ পরিষ্কার হইয়াছে। অজ্ঞতা এবং সরলতা উভয়ের ভান থাকিলে তবে ন্যাকামি হইতে পারে। আমাদের পুরস্কৃত সংজ্ঞালেখক লিখিয়াছেন, “ন্যাকামি বলিতে সাধারণত জানিয়া শুনিয়া বােকা সাজার ভাব বুঝায়” পরে দ্বিতীয় পদে তাহার ব্যাখ্যা করিয়া বলিয়াছেন, “যেন কিছু জানে না, যেন কিছু বুঝে না এই ভাবের নাম ন্যাকামি।” যেন কিছু জানে না, যেন কিছু বুঝে না বলিতে লােকটা যেন নেহাত হাবা, নিতান্ত খোকা এইরূপ বুঝায়, লােকটা যেন কিছু বুঝেই না, এবং তাহাকে বুঝাইবার উপায়ও নাই।

আহ্লাদে

 ১। স্বার্থের জন্য বিবেচনারহিত।

 ২। যাহারা পরিমাণাধিক আহ্লাদে সর্বদাই মত্ত।

 ৩। যে সকল-তাতেই অন্যায়রূপে আমােদ চায়, অথবা যে হক্ না হক্ দাঁত বের করে।

 ৪। অযথা আনন্দ বা অভিমান প্রকাশক।

 ৫। অন্যকে অসন্তুষ্ট করিয়া যে নিজে হাসে।

 ৬। যে সর্বদা আহ্লাদ করিয়া বেড়ায়।

 ৭। কী সময়ে কী অসময়ে যে আহ্লাদ প্রকাশ করে।

 ৮। যে অভিমানী অল্পে অধৈর্য হয়।

 ৯। যে অনুপযুক্ত সময়েও আবদারী।

 ১০। সাধের গােপাল নীলমণি।

 আমার বােধ হয়, যে-ব্যক্তি নিজেকে জগতের আদুরে ছেলে মনে করে তাহাকে আহ্লাদে বলে; প্রশ্রয়দাত্রী মায়ের কাছে আদুরে ছেলেরা যেরূপ ব্যবহার করে যে-ব্যক্তি সকল জায়গাতেই কতকটা সেইরূপ ব্যবহার করিতে যায়। অর্থাৎ যে-ব্যক্তি সময়-অসময় পাত্রাপাত্র বিচার না করিয়া সর্বত্র আবদার করিতে যায়, সর্বত্রই দাঁত বাহির করে, মনে করে সকলেই তাহার সকল বাড়াবাড়ি মাপ করিবে সে-ই আহ্লাদে। তাহাকে কে চায় না-চায়, তাহাকে কে কী-ভাবে দেখে, সে-বিষয় বিবেচনা না করিয়া সে দুলিতে দুলিতে গায়ে পড়িয়া সকলের গা ঘেঁষিয়া বসে, সকলের আদর কাড়িতে চেষ্টা করে। সংজ্ঞালেখকগণ অনেকেই আহ্লাদে ব্যক্তির এক-একটি লক্ষণমাত্র নির্দেশ করিয়াছেন, কিন্তু যাহা বলিলে তাহার সকল লক্ষণ ব্যক্ত হয় এমন কোনো কথা বলেন নাই। দশম সংকে ঠিক সংজ্ঞা বলাই যায় না।

 যাহাকে পুরস্কার দেওয়া গিয়াছে তা^হার আলোকে শব্দের সংজ্ঞা ঠিক হয় নাই। তিনি বলেন:

 ভাতের ফেনের মতো টগবগে। যাহাদিগের প্রায় সকল কারেই ‘একের মরণ অন্যের আমোদ’ কথার সত্যতা প্রমাণ হয়, অর্থাৎ তুমি বাঁচ আর মর আমার আমোদ হইলেই হইল, ইহাই যাহাদিগের মত ও কার্য, তাহাদিগকেই ‘আহ্লাদে’ বলা যায়।

 আমাদের পুরস্কৃত সংজ্ঞালেখক দুটি সংজ্ঞার উত্তর দিয়াছেন। তৃতীয়টিতে কৃতকার্য হন নাই। শ্রী বঃ— বা বলিয়া তিনি আত্মপরিচয় দিয়াছেন, বোধকরি নাম প্রকাশ করিতে অসম্মত। আমরা বলিয়াছিলাম সংজ্ঞা পাঁচ পদের অধিক হয়, কেহ কেহ পদ বলিতে শব্দ বুঝিয়াছেন। আমরা ইংরাজি sentence অর্থে পদ ব্যবহার করিয়াছি।

 ফাল্গুন ১২৯২

  1. পাঠকদের প্রতি: বালকের যে-কোনো গ্রাহক ‘হজুগ’, ‘ন্যাকামি’ ও ‘আহ্লাদে’ শব্দের সর্বোৎকৃষ্ট সংক্ষেপ সংজ্ঞা (definition) লিখিয়া পৌষমাসের ২০শে তারিখের মধ্যে আমাদিগের নিকট পাঠাইবেন তাঁহাকে একটি ভালো গ্রন্থ পুরস্কার দেওয়া হইবে। একেকটি সংজ্ঞা পাঁচটি পদের অধিক না হয়।—বালক, পৌষ ১২৯২।
  2. মূলে মুদ্রাকরপ্রমাদ।