ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস/ষষ্ঠ উপদেশ
ষষ্ঠ উপদেশ।
বিষয়-সুখ এবং ব্রহ্মানন্দ।
সেই ভূমাতেই আমাদের সুখ, অল্প বিষয়ে সুখ নাই। বিষয়-মুখে আমাদের আত্মা তৃপ্ত হয় না। বিষয়সুখ সকলই ক্ষণ-ভঙ্গুর, অতীব ক্ষুদ্র—কখনো বা ধর্ম্মের অনুকূল, কখনো বা প্রতিকূল; কখনো বা সেব্য, কখনো ত্যাজ্য। সেই ভূমা ঈশ্বরই আমাদের তৃপ্তির স্থল, আমাদের শান্তি-নিকেতন। ব্রহ্মানন্দই আমাদের ইহকাল ও পরকালের অবিনশ্বর সম্বল। বিষয়-সুখের তুলনায় ব্রহ্মানন্দ কালেতে অনন্ত এবং ভারেতেও অপরিমেয়। ব্রহ্মানন্দ যেমন স্থায়ী, তেমনি গভীর। মনুষ্যের আত্ম অতি মহৎ; ক্ষুদ্র পদার্থে নিরন্তর লিপ্ত থাকিয়া সে সুস্থ থাকিতে পারে না। যে সকল ব্যক্তি সৌভাগ্যের অজস্র দান উপভোগ করিতেছে; বিপুল মন, অতুল ঐশ্বর্য্য, মহোচ্চ পদ, অটল প্রভুত্ব ভোগেই এজীবনকে ব্যয় করিতেছে; তাহাদের তৃপ্তি-সুখ কখনই নাই; এই প্রকার অতৃপ্তিই সেই ভুমার প্রতি আমাদের আত্মার প্রধান আকর্ষণ। বিষয় শৃঙ্খলে বদ্ধ না থাকিয়া বিষয়ের অতীত পদার্থকে অন্বেষণ করি; ইহাই আমাদের উৎকৃষ্ট আধিকার। ধর্মের আদেশে বিষয় স্রোতের প্রতিকূলে ইচ্ছাকে নিয়োগ করিতে পারি, এই আমাদের আশ্চর্য্য শক্তি। যাঁহার আত্মা ধর্ম্ম-বলে সবল হইয়াছে—পুণ্য-জ্যোর্তিতে জ্যোতিষ্মন্ হইয়াছে, বিষয়-সুখ যে কি ক্ষুদ্র তাহা তিনিই বুঝিয়াছেন। আমরা সংসারের সহিত সংগ্রাম করিয়া—কুপ্রবৃত্তিকে বল পূর্ব্বক নিরস্ত করিয়া বহু আয়াসে বহু দিবসে যে ধর্ম্ম-রত্ন উপার্জন করি, কোন পার্থিব ধন কি তাহার বিনিময়ে গ্রহণ করা যাইতে পারে? কখনই না। ধর্ম্মের শেষ পুরস্কার ঈশ্বর। ঈশ্বরই আমাদের যথার্থ লক্ষ্য স্থান। তাঁহা হইতে বিচ্যুত হইয়া তান্য যে দিকে গমন করি, সেই দিকই তিমিরাবৃত শূন্য। দিগ্দর্শনের শলাকা যেমন স্বাভাবিক অবস্থায় উত্তর দক্ষিণ মুখীন হইয়া থাকে এবং বাহির হইতে বিয় পাইলেই সেই শলাকা বিপরীত দিকে চালিত হয়, আমাদের আত্মাও সেই প্রকার। আত্মার স্বাভাবিক ভাবস্থাতে সে ঈশ্বরের দিকেই দৃষ্টি করে। কিন্তু যদি বিষয়াকর্ষণ প্রবল হয়—যদি র দৃষ্টান্ত বা কুসংসর্গের জাল বিস্তৃত হয়; তবেই সে অন্য দিকে গমন করে। আত্মার সুস্থাবস্থাতে ঈশ্বরই তাহার উপজীবিকা, ধর্ম্মই তাহার মন্ত্রী। পাপই বিকৃতি। ঈশ্বর হইতে বিচ্যুতিই অস্বাভাবিক। বালক। কাল অবধিই ঈশ্বরের ভাব এবং ধর্ম্মের ভাব অল্প অল্প পরিস্ফুটিত হইতে থাকে। বিষয়-জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে বালকের মনে ঈশ্বর-জ্ঞান তারস্ত হয় এবং বিষয়-বুদ্ধির সহিত তাহার ধর্ম-বুদ্ধির উদ্বোধ হইতে থাকে। সেই স্বাভাবিক ঈশ্বরের ভাব এবং সেই স্বাভাবিক ধর্ম-বুদ্ধির উদ্দীপন করিয়া দিবার জন্য প্রথম হইতেই তাহার ধর্ম্ম প্রদর্শকের সহায় আবশ্যক। সত্য কথা বলাই বালকদিগের স্বাভাবিক ভাব; তাহারা কুটিলতা শিক্ষা না করিলে আর তাদের মিথ্যা বলিতে প্রবৃত্তি হয় না। পিতা মাতার প্রতি বালকদিগের যে একটি নির্ভরের ভাব—একটি অটল নিষ্ঠা আছে; বয়োবৃদ্ধি সহকারে সেই সকল ভাব ঈশ্বরেতেই পরিচালিত হওয়াই স্বভাবিক; কিন্তু সেই সকলের উদ্দীপন হয় না বলিয়া এক্ষণে নির্ব্বাণ প্রায় দেখা যাইতেছে। যখন তাহারা দেখে, তাহাদের পিতা মাতা কেবলই বিষয়ে মগ্ন আছেন, ঈশ্বরের উপাসনাতে কাহারো মন নাই; তখন কিরূপে তাহাদের ঈশ্বরের ভাব সমুজ্জ্বলিত হইতে পারে? এই হেতু পরিবারের মধ্যে এক জন সৎ আচার্য্য থাকা অত্যন্ত আবশ্যক। এই ব্রহ্মবিদ্যালয়ের কেবল এই উদ্দেশ্য, যাহাতে ধর্ম্মের ভাব এবং ঈশ্বরের ভাব সকলের আত্মাতে জাগ্রৎ হয়। ধর্ম্মের ভাব, কর্তব্য জ্ঞান, ঈশ্বর স্পৃহা সকলেরই আছে; কিন্তু তাহা উদ্বোধন করাই ইহার উদ্দেশ্য। আমরা দুর্ব্বলতা প্রযুক্ত যেমন জড়ীভুত হইতেছি, অজ্ঞান বশতঃ সে রূপ নয়। আমরা যাহা যাহা কর্ত্তব্য বলিয়া জানি—ঈশ্বরের আদেশ বলিয়া মান্য করি, তাহা যদি অনুষ্ঠানে পরিণত করিতে পারি; তবে আমারদের সৌভাগ্যের সীমা কি থাকে? ধর্মের আদেশ অমরদের বুদ্ধি-ভুমিতে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে—ধর্ম্মের তীব্রতর ভৎর্সনাতে কুপ্রবৃত্তি-সকল অনেক সময়ে সঙ্কুচিত হইতেছে; কিন্তু সেই ধর্ম্মের বলকে আরো বলবান করা আমাদের প্রয়োজন। আমরা যদি আমারদের ঈশ্বরের ভাব কেবল স্বভাবের হস্তে অর্পণ করিয়াই ক্ষান্ত থাকি, তবে তাহাতে কোন ফলই দর্শে না। যদি শর দেখিয়া আমাদের বৈরাগ্য উপস্থিত হয়—যদি বিপদে পড়িয়াই ঈশ্বরকে মনে হয়—তবে তাহাতে কি হইতে পারে? আমরা সকল সময়েতেই যে তাঁহার আশ্রিত এবং তিনি আমাদের একমাত্র আশ্রয়, এই ভাব নিরন্তর মনে রাখা কর্ত্তব্য। আমরা যেমন বন্ধুর সহিত এক প্রকার সম্বন্ধ নিবদ্ধ করি, সেই রূপ ঈশ্বরের সহিত সম্বন্ধ নিবদ্ধ না করিলে তাঁহাকে জানার কোন ফল নাই। আমরা জানিলাম, ঈশ্বর আমারদিগের পরম পিতা, আমরা সকলেই তাঁহার পুত্র। কিন্তু পুত্রের ন্যায় যদি তাঁহাকে ভক্তি না করি, পুত্রের ন্যায় তাঁহাতে নির্ভর না করি; তবে সে জ্ঞান থাকা না থাকা সমান। আমরা জানিলাম ঈশ্বর সর্ব্বজ্ঞ, সর্ব্বব্যাপী; কিন্তু অল্পজ্ঞ মনুষকে যে রূপ সাক্ষাৎ দেখি, তাঁহাকে যদি তদ্রুপ করিয়াও না দেখি; সামান্য লোকের অনুরোধে কোন অসৎ কর্ম্ম হইতে যেমন নিবৃত্ত হই, তাঁহার অনুরোধ ততটুকুও রক্ষা করিয়া না চলি; তবে সে জ্ঞান বৃথা। আমরা যদি কর্ম্মের সময় ইশ্বরকে বিস্মৃত হইয়া থাকি এবং কেবল উপাসনার সময়েই তাঁহাকে মনে করি; তবে এখনো তাহার সহিত সে প্রকার সম্বন্ধ নিবদ্ধ হয় নাই। কর্ম্মের সময়ই আপনার কর্ম্ম—উপাসনার সময়ই তাঁহার কার্য্য; এমত নহে। ধর্ম্ম-কার্য্য যাহা কিছু করি; সকলই তাঁহার কার্য্য—তাঁহার প্রিয় কার্য্য; স্বার্থপরতার কুমন্ত্রণাতে যে কিছু ধর্ম্ম-বিরুদ্ধ কার্য্য করি, তাহাই তাঁহার কার্য্য নহে; তাহাই পরিহার করা আমারদিগের প্রাণ পণে কর্ত্তব্য। যখন তিনি আমাদের ন্যায়বান্ রাজা আর আমরা সকলেই তাঁহার প্রজা; তখন তাঁহার আদেশ পালন না করা কি বিগর্হিত কর্ম্ম। যখন তিনি আমাদের প্রভু, আর আমরা তাঁহার আজ্ঞাধীন ভৃত্য; তখন তাঁহার কার্য্যে অবহেলা করা কি অকৃতজ্ঞতার কর্ম্ম!
ঈশ্বরের সহিত সম্বন্ধ নিবদ্ধ করা ইহ কালেই আবশ্যক; নতুবা আমারদের মহতী বিনষ্টি। কি কর্ম্মক্ষেত্রে কি ব্রাহ্মসমাজে সকল সময়েই আমরা যেন তাঁহার কার্য্যে এবং তাঁহার উপাসনাতে নিযুক্ত থাকি। তাঁহার উপাসনাতেই আমারদের দেবত্ব হয়। সংসার দুর্দ্দিবসের ঝঞ্ঝা শিলাপাত হইতে পরিত্রাণ পাইবার জন্য ব্রহ্ম রূপ-নিকেতন আমাদের এখানেই আবশ্যক। আমরা যে অবস্থায় থাকি না কেন, কেহই তাঁহা হইতে আমারদিগকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। সম্পদ্ এবং সম্পদের অনুচরেরাও যদি অমারদিগকে পরিত্যাগ করে—বন্ধুগণ যদিও বিচ্ছিন্ন হয়; তথাপি ঈশ্বর হইতে আমরা বিচ্ছিন্ন নহি। আমরা নির্জনেও একাকী নহি—বিপদের সময়ও নিরাশ্রিত নহি; কিন্তু ঈশ্বর আমাদের সহিত সর্ব্বদাই আছেন এবং তিনি তাঁহার শীতল আশ্রয়ের ছায়া সর্ব্বদাই বিস্তার করিতেছেন। এই বিস্তীর্ণ জগৎ শ্মসান তুল্য শূন্য নহে। কিন্তু ইহা উৎসব-পূর্ণ দেব-মন্দির।
যে ব্যক্তি ঈশ্বর হইতে পরিচ্যুত, তাহার কিছুতেই শান্তি নাই। সাংসারিক সম্পদ্ই তাহার জীবন সর্ব্বস্ব— সাংসারিক বিপদ্ই তাহার মৃত্যু তুল্য। বিষয় লোলুপ ব্যক্তি বিষয় লইয়া যে সুখী থাকিতে পারে, তাহাও নহে। বিষয় পাইবার পূর্ব্বে যে রূপ উদ্যোগ থাকে, যে রূপ উদ্যম থাকে, তাহা পাইলে আর সে রূপ থাকে না; পুনর্ব্বার নুতন বিষয়ের পাশ্চাতে মন ধাবমান হয়। বিষয় লাভে তৃপ্তি-সুখ কখনই হয় না। প্রথমতঃ বিষয় পাইবার জন্য কেমন ব্যগ্রতা ও কি কষ্ট। দ্বিতীয়তঃ না পাইলে কেমন তাসুখ! তৃতীয়তঃ বিষয় পাইলেও তাহাতে অতৃপ্তি! চতুর্থতঃ পাইবার পর তাহা নস্ট হইলে কেমন যন্ত্রণা! এই সকল যন্ত্রণা ও বিড়ম্বনার মধ্যে দিয়াই ঘোর বিষয়ী ব্যক্তির অহর্নিশ বিচরণ করিতে হয়। কোথায় যে সে শান্তি পাইবে, এমন স্থান নাই। তাহারা অমৃতের পুত্র হইয়া সংসার চক্রেই আবর্ত্তিত হইতে থাকে, কোথাও শান্তি পায় না। তাহারা সুখ-মরীচিকায় প্রতিবার আশাসিত এবং প্রতিবার প্রবঞ্চিত হইয়া কেবল ঘূর্ণায়মান হয় এবং পরিশেষে হয় তো সংসারের প্রতি মনুষ্যের প্রতি বিরক্ত হইয়া ঈশ্বরের মঙ্গল-স্বরূপেও দোষারোপ করিতে প্রবৃত্ত হয়।
সেই সকল ব্যক্তিরা ইহা অবগত নহে, যে ক্ষুদ্র বিষয় লইয়া মনুষ্য কখনই তৃপ্ত থাকিতে পারে না। যাঁহার ভূমা ঈশ্বরকে প্রাপ্ত হইয়াছেন, তাঁহারা সর্ব্বতোভাবেই পরিতৃপ্ত থাকেন। ঈশ্বরকে যাঁহারা মূল ধন রূপে সঞ্চিত করিয়া রাখিয়াছেন; পার্থিব বিষয়ভাবে তাঁহারা মুমূর্ষু হয়েন না। বিষয় জনিত হর্ষ, শোক; সংসারের বিপদ সম্পদ; তাঁহারদিগকে অধিকার করিতে পারে না। সকল অবস্থাতে তাঁহারা কর্ত্তব্য কর্ম্ম সম্পন্ন করিয়াই মুখী থাকেন। ধন পাইলেও তাঁহাদের এক প্রকার কর্ত্তব্য; দরিদ্রাবস্থাতেও তাঁহাদের অন্যরূপ কর্তব্য। তাঁহারা যে কোন কর্ম্ম করেন, তাহা ঈশরেতেই সমর্পণ করেন; তাঁহার প্রিয় কার্য্য হইতে কেহই তাঁহারদিগকে আকৃষ্ট করিতে পারে না! তাঁহারা সেই মহান্ সুরুষকে প্রাপ্ত হইয়া কি মহত্ত্বই প্রাপ্ত হইয়াছেন; তাঁহারা সেই সকল সম্পদের সম্পদকে পাইয়া সুসম্পন্ন হইয়াছেন।
বিষয়-সুখেই যদি আমরা প্রমত্ত থাকি—সংসার ভিন্ন যদি আমারদের নিকটে আর সকলই অসার হয়; তবে আমরা আমাদের মহত্ত্বর শ্রেষ্ঠতর অধিকার হইতে প্রচ্যুত হই। ঈশ্বরের সহিত আমারদের যে সকল সম্বন্ধ, তাহা অননুভূত থাকে। ধর্ম্মের যে সকল মহান্ ভাব, তাহা অব্যক্ত রূপে স্থিতি করে। সুখই যাহাদের ধর্ম্ম এবং দুঃখই পাপ, নিঃস্বার্থ ভাব যে কি, তাহা তাহারা কি প্রকারে বুঝিবে? ব্রহ্মপরায়ণ ব্যক্তি যে ধর্ম্মের জন্য অনায়াসে প্রাণ দান করিতে উদ্যত, তাঁহারদিগের নিকটে সে কেবল ভ্রান্তি মাত্র। ঈশ্বর প্রীতি যে মনুষ্যকে দেবত্ব পদ স্থাপিত করে, সে কল্পনা মাত্র। সেই পণ্ডিতম্মন্য ব্যক্তিগণ অশেষ শাস্ত্র-সিন্ধু মন্থন করিয়া এই স্থির করেন, যে মনুষ্যের সকল কর্ম্মের সমুদয় ধর্ম্মের লক্ষ্য কেবল স্বার্থপরতা। তাহারা মনুষ্যের মহদ্ভাব-সকলকে পশু ভাবের তুল্য করিতে চাহে এবং তাহার জ্ঞান ধর্ম্ম-বুদ্ধি সম্পন্ন আত্মাকে জড় করিতে চাহে। তাহারা মনুয্যের আশা, ভরশা, জ্ঞান ধর্ম্ম, সকলই এই সঙ্কীর্ণ স্থান ও সঙ্কীর্ণ কালেই বদ্ধ করিতে চাহে এবং মৃত্যুর সঙ্গেই তাহার আত্মার ধ্বংস ও বিনাশ ঘোষণা করে। সাবধান যেন তাহারদের উপদেশ-গরল কেহ প্রমাদ গ্রস্ত হইয়া ভক্ষণ না করেন।
যাঁহারা ধর্ম্মের পথে দণ্ডায়মান আছেন এবং পুণ্য-পদবীতে আরোহণ করিতেছেন, তাঁহারা উক্ত প্রকার ভ্রমজালে কদাপি পতিত হয়েন না। পুণ্যের যে কি মনোহর মূর্ত্তি—ঈশ্বর-প্রীতি যে কি রমণীয় পদার্থ—ব্রহ্মানন্দ যে কি মহান্—ঈশ্বরের সহিত যে কি প্রকার চির-সম্বন্ধ। তাঁহারা ইহা পরীক্ষাতেই জানিতেছেন, বৃথা যুক্তিতে তাঁহারা ভুলিবার নহেন। একেতো আমাদের দেশ অধর্ম্মের আলয় হইয়াছে, তাহাতে বিজ্ঞান-শাস্ত্রও যদি নীচ হীন পাপ কলঙ্কিত হয়, উপদেষ্টাও যদি সেই রূপ হয়, গৃহীতাও যদি বিনীত ভাবে সেই সকল উপদেশ গ্রহণ করেন; তবে এদেশের মঙ্গল কোথায়? যাহারা এই প্রকার বিষম বিষয়ের উপদেশ প্রদান করেন, তাঁহারা বোধ হয় আপনারদের স্বভাবের প্রতি দৃষ্টি করিয়াই এই রূপ উপদেশ দিয়া থাকেন; অনন্ত কালের নিমিত্তে আমাদের আত্মার সহিত পরমাত্মার যে সম্বন্ধ আছে, তাহা তাঁহারা বিনাশ করিতে চাহেন। তাঁহাদিগকে এক প্রকার আত্মঘাতী বলিলেও বলা যায়। একবার পরীক্ষা করিয়া দেখ, ধর্ম্মের কি পবিত্র, প্রশান্ত ভাব—ভূমা ঈশ্বরেতে আমারদের কেমন আরাম—ব্রহ্মানন্দ কি সুগভীর, কি স্থায়ী; তবে আর ভ্রমপথের পথিক হইতে হইবে না। আমরা জ্ঞানালাপেতেই যেন তৃপ্ত না থাকি। ঈশ্বরেতে আমাদের কত দূর প্রীতি জন্মিয়াছে, তাহা তাঁহার কার্য্য করিবার সময়েই পরীক্ষা হয়। তাঁহাকে প্রীতি কর এবং আনন্দের সহিত তাঁহার প্রিয়কার্য্য সাধন কর। ইহাতেই মঙ্গল, ইহাতেই মুক্তি।