মহুয়া/মিলন

উইকিসংকলন থেকে

মিলন

সৃষ্টির প্রাঙ্গণে দেখি বসন্তে অরণ্যে ফুলে ফুলে
দুটিরে মিলানো নিয়ে খেলা।
রেণুলিপি বহি’ বায়ু প্রশ্ন করে মুকুলে মুকুলে
কবে হবে ফুটিবার বেলা?
তাই নিয়ে বর্ণচ্ছটা, চঞ্চলতা শাখায় শাখায়,
সুন্দরের ছন্দ বহে প্রজাপতি পাখায় পাখায়,
পাখীর সঙ্গীত সাথে বন হ’তে বনান্তরে ধায়
উচ্ছ্বসিত উৎসবের মেলা॥


সৃষ্টির সে-রঙ্গ আজি দেখি মানবের লোকালয়ে
দুজনায় গ্রন্থির বাঁধন।
অপূর্ব্ব জীবন তাহে জাগিবে বিচিত্র রূপ ল’য়ে
বিধাতার আপন সাধন।
ছেড়েছে সকল কাজ, রঙীন বসনে ওরা সেজে
চলেছে প্রান্তর বেয়ে, পথে পথে বাঁশি চলে বেজে,
পুরানো সংসার হ’তে জীর্ণতার সব চিহ্ণ মেজে
রচিল নবীন আচ্ছাদন॥

যাহা সব-চেয়ে সত্য সব-চেয়ে খেলা যেন তাই,
যেন সে ফাল্গুন কলোল্লাস।
যেন তাহা নিঃসংশয়, মর্ত্ত্যের ম্লানতা যেন নাই,
দেবতার যেন সে উচ্ছ্বাস।
সহজে মিশেছে তাই আত্মভোলা মানুষের সনে
আকাশের আলো আজি গোধূলির রক্তিম লগনে,
বিশ্বের রহস্যলীলা মানুষের উৎসব প্রাঙ্গণে
লভিয়াছে আপন প্রকাশ॥


বাজা তোরা বাজা বাঁশি, মৃদঙ্গ উঠুক্ তালে মেতে
দুরন্ত নাচের নেশা-পাওয়া।
নদীপ্রান্তে তরুগুলি ঐ দেখ্ আছে কান পেতে,
ঐ সূর্য্য চাহে শেষ চাওয়া।
নিবি তোরা তীর্থবারি সে-অনাদি উৎসের প্রবাহে
অনন্তকালের বক্ষ নিমগ্ন করিতে যাহা চাহে
বর্ণে গন্ধে রূপে রসে, তরঙ্গিত সঙ্গীত উৎসাহে
জাগায় প্রাণের মত্ত হাওয়া॥

সহস্র দিনের মাঝে আজিকার এই দিনখানি
হ’য়েছে স্বতন্ত্র চিরন্তন।
তুচ্ছতার বেড়া হ’তে মুক্তি তা’রে কে দিয়েছে আনি’
প্রত্যহের ছিঁড়েছে বন্ধন।
প্রাণ-দেবতার হাতে জয় টীকা প’রেছে সে ভালে,
সূর্য্য তারকার সাথে স্থান সে পেয়েছে সমকালে,
সৃষ্টির প্রথম বাণী যে-প্রত্যাশা আকাশে জাগালে
তাই এলো করিয়া বহন॥

২০ আশ্বিন, ১৩৩৫