মানসিংহ/অষ্টমঙ্গলা

উইকিসংকলন থেকে

 শুন শুন অরে ভবানন্দ। মোর অষ্টমঙ্গলায়, অমঙ্গল দূরে যায়, শুনিলে না হয় কভু মন্দ। প্রথমে মঙ্গল শুন, সৃষ্টি করি তিনি গুণ, বিধি বিষ্ণু হরে প্রসবিনু। দক্ষের দুহিতা হয়ে, পতি ভাবে হরে লয়ে, দক্ষযজ্ঞে সে তনু ছাড়িনু। শুন শুন অরে ভবা, নন্দ ইত্যাদি। দ্বিতীয়ে হেমন্ত ধামে, জনমিনু উমানামে, মোর বিয়া হেতু কাম মৈল। বিয়া হৈল হর সঙ্গে, হরগৌরী হৈনুরঙ্গে গণেশ কার্ত্তিক পুত্র হৈল। শুন শুন অরে ভবানন্দ ইত্যাদি। তৃতীয়ে শিবের সঙ্গে কন্দল করিয়া রঙ্গে, ভিক্ষা হেতু তারে পাঠাইনু। পান পাত্র হাতে লয়ে, অন্নপূর্ণারূপ হয়ে, অন্ন দিয়া শিবে নাচাইনু॥ কাশী মাঝে ত্রিলোচন, লয়ে যত দেবগণ, বিশ্বকর্ম্ম নির্ম্মিত মন্দিরে। করিয়া তপস্যা ঘোর, পূজা প্রকাশিলা মোর, অন্নে পূর্ণ করিনু ভূমিরে॥ শুন শুন অরে ভবানন্দ ইত্যাদি। চতুর্থেতে বেদব্যাস, নিন্দা কৈলা কৃত্তিবাস, ভুজস্তম্ভ হইয়েছিল তার। শেষে অন্ন নাহি পায়, আমি অন্ন দিনু তায়, কাশীখণ্ডে আছয়ে প্রচার॥ সেই ব্যাস তার পরে, ব্যাস বারাণসী করে, মোর উপাসনা করে বসি। বুড়ীরূপে আমি গিয়া, বাক্যছলে শাপ দিয়া, করিন গর্দ্দভ বারাণসী। কুবেরের অনুচরে, বসুন্ধরা বসুন্ধরে, শাপ দিয়া ভূতলে আনিনু। হরিহোড় নাম দিয়া, বুড়ীরূপে আমিগিয়া, ঘুটে বেচা ছলে বর দিনু। শুন শুন ইত্যাদি। পঞ্চমে শাপের ছলে, আনিনু ধরণী তলে, নলকুবরে রে এই গামে। ভবানন্দ তুমি সেই, চন্দ্রিণী পদ্মিনী এই, চন্দ্রমুখী পদ্মমুখী নামে॥ পরে হরিহোড়ে ছাড়ি, আইনু তোমার বাড়ী, ঝাঁপী হাতে পার হয়ে নায়। শুনি পাটুনীর মুখে, তুমি নিজ ঘরে সুখে, ঝাঁপীরূপে পাইলা আমায়॥ অসিয়াছি তোর ঘরে, শুন কহি তার পরে, প্রতাপ আদিত্য ধরিমারে, এল মানসিংহ রায়, দেখা হেতু তুমি তায়, বর্দ্ধমানে গেলা আগুসারে॥ মানসিংহ শুনি তথা, বিদ্যাসুন্দরের কথা, জিজ্ঞাসিলা বিশেষ তোমায়। ইতিহাস ছলে সুখে, শুনিনু তোমার মুখে, আদ্যঃ স সুন্দর বিদ্যায়॥ পূজি মোর কালী রূপ, সুকবি সুন্দর ভূপ, উপনীত হৈল বর্দ্ধমান। হীরা নাম মালিনীর, ঘরে উত্তরিল ধীর, শুনিল বিদ্যার রূপ গান। গাঁথিয়া দিলেক মালা, ভুলে বিদ্যা রাজবালা, দুহে দেখা রথের নিকটে। মোর বরে সন্ধি হৈল, গন্ধর্ব্ব বিবাহ কৈল, বাসর বঞ্চিল অকপটে। শুন ইত্যাদি। ষষ্ঠেতে সুন্দর কবি, বিদ্যা পদ্মিনীর রবি, অশেষ চাতুরী প্রকাশিল। কপট সন্ন্যাসী হৈল, রাজায় সাক্ষাত কৈল, নানামতে বিহার করিল॥ বিদ্যা হৈল গর্ব্ভবতী, ক্রুদ্ধ হৈল নরপতি, কোটাল ধরিতে গেলা চোরে। নারী বেশে চোর ধরে, রাজার সাক্ষাত করে, সুন্দর ঠেকিল দায় ঘোরে॥ শুন২ ইত্যাদি সপ্তমেতে আমি গিয়া, কালীরূপে দেখা দিয়া, বাঁচাইনু কুমার সুন্দরে। বীরসিংহ পূজা কৈল, মোর অনুগ্রহ হৈল, বিদ্যা লয়ে কবি গেল ঘরে॥ এই ইতিহাস সুখে, শুনিয়া তোমার মুখে, মানসিংহ এল তোর ঘরে। সপ্তাহ বাদলে তারে, নানামত উপহারে, তত্ব নিলা তুমি মোর বরে॥ ভেদ পেয়ে তোর মূখে, মোর পূজা দিয়া সুখে, মানসিংহ যশোরে আইল। প্রতাপ আদিত্যে ধরি, লইল পিঞ্জরে ভরি, তোমা লয়ে দিল্লীতে চলিল॥ তুমি মোর পূজা দিয়া, কুতুহলে দিল্লী গিয়া, পাতশার ক্রোধে বদ্ধ হৈলা। তুমি পাতশার ডরে, নত হয়ে ভক্তি ভরে, এক মনে মোরে স্ততি কৈলা॥ আমি তোরে তুষ্ট হয়ে, ডাকিনী যোগিনী লয়ে, উপদ্রব করিনু শহরে। পাতশা মানিয়া মোরে, রাজাই দিলেক তোরে, মহাসুখে তুমি এলা ঘরে॥ শুন শুন ইত্যাদি। অষ্টমতে তুমি সেই, মোর পূজা কৈলে এই, আমি অষ্টমঙ্গলা কহিনু। ব্রত হৈল পরকাশ, এবে চল স্বর্গবাস, এই বর পূর্ব্বে দিয়াছিনু। শুন শুন অরে ভবানন্দ। মোর অষ্টমঙ্গলায়, অমঙ্গল দূরে যায়, শুনিলে না হয় কভু মন্দ॥ অন্নদা অষ্টাহ গীত, রচিবারে নিয়োজিত, কৈলা রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। বন্দিয়া গোবিন্দ পায়, রায় গুণাকর গায়, পরিপূর্ণ অষ্টমঙ্গলায়॥