মানসিংহ/রাজার অন্নদার সহিত কথা

উইকিসংকলন থেকে

রাজার অন্নদার সহিত কথা।

 মোরে তরাহ তারিণী। অভয়া ভয়বারিণী। অম্বিকা অন্নদা, শঙ্করী সারদা, জয়ন্তী জয়কারিণী। চামুণ্ডা চণ্ডিকা, করালী কালিকা, ত্রিপুরা শূলধারিণী॥ মহিষমর্দ্দিনী, মহেশ মোহিনা, দুর্গা দৈত্য বিনাশিনী। ভৈরবীভবানী, সর্ব্বাণী রুদ্রাণী, ভারত চিত্তচারিণী

 এইরূপে পূর্ব্ব কথা বিশেষ কহিয়া। মহামায়া মায়াজাল দিলা ঘুচাইয়া॥ মোহ গেল জাতিস্মর হৈলা ভিন জন। দেখিতে পাইলা সর্ব্ব পূর্ব্ব বিবরণ॥ মজুন্দার কন আর এথা নাহি কাজ॥ অব্যাজে দেখিবগিয়া বাপ যক্ষরাজ॥ চন্দ্রমখী পদ্মমুখী কান্দে নানাছান্দে। শ্বশুর শাশুড়ী দেখিবারে প্রাণ কান্দে॥ দেবীর চরণে ধরি কান্দে তিন জন। লয়ে চল এথা আর নাহি প্রয়োজন। অন্নদা কহেন চল ব্যাজ নাহি জার। প্রিয়পুত্র যেই তাঁরে দেহ রাজ্যভার॥ মজুন্দার কন আমি কি জানি তাহার। উপযুক্ত বুঝিয়া নিযুক্ত কর তার॥ অন্নদা কহেন তবে ভবিষ্য ত কই। মোর প্রিয় গোপাল ভূপাল হবে অই। সমাদরে মোর ঝাঁপী রাখিবেক এই। যার স্থানে ঝাঁপী রবে রাজা হবে সেই॥ গোপালের পুত্র হবে বড় ভাগ্যধর। রাঘব হইবে নাম রাঘব সো সর॥ দেগাঁয়ে আছিল রাজা দেপাল কুমার। পরশ পাইয়াছিল বিখ্যাত সংসার॥ আমার কপটে তার হয়েছে নিধন। রাঘবেরে দিব আমি তার রাজ্যধন। গ্রাম দীঘী নগর সে করিবে পত্তন। দীঘী কাটি করিবেক শঙ্কর স্থাপন। তার পুত্র হইবেক রাজা রুদ্ররায়। বাড়িবেক অধিকার আমার দয়ায়॥ গঙ্গীতীরে নবদ্বীপে শঙ্কর স্থাপিবে। পথিবীতে কীর্ত্তি রাখি কৈলাসে যাইবে॥ তিন পুত্র রুদ্রের হইবে নিরুপম। রামচন্দ্র বড়রাম জীবন মধ্যম॥ রামকষ্ণ ছোট তার বড় ব্যবহার। রামচন্দ্র নিধনে রাজাই হবে তার॥ জিনিবেক সভাসিংহ আদি রাজরাজী। সোমযাগ করি নাম হবে সোমযাজী॥ এই ঝাঁপী হেলন করিবে অহঙ্কারে। সেই অপরাধে আমি ছাড়িব তাহারে॥ নিধন করিব তারে দরবারে লয়ে। রাজ্য দিব রামজীবনেরে তুষ্ট হয়ে অবিরোধে তার ঘরে থাকিব সচ্ছন্দে। রাজাই করিবে রাম জীবন আনন্দে॥ তিন পুত্র হবে তার প্রথম ভার্য্যার। রাজা রাম কৃষ্ণ রায় রঘুরাম রায়॥ গোপাল গোবিন্দ হবে অপর ভার্য্যায় তার মধ্যে রাজা হবে রঘুরাম রায়। ভূমিদান দয়া দর্পরাজ ধর্ম্ম বলে। রঘুবীর খ্যাত হবে ধরণী মণ্ডলে। তার পুত্র হবে কৃষ্ণচন্দ্র মতিমান। কাশীতে করিবে জ্ঞান বাপীর সোপান॥ বিগ্রহ ব্রহ্মণ্যদেব মূর্ত্তি প্রকাশিয়া। নিবাস করিবে শিবনিবাস করিয়া॥ আমার প্রতিমা পূজা প্রকাশ তাহাতে। কত কব তার যশ বুঝিবা ইহাতে॥ শাকে আগে মাতৃকা যোগিনীগণ শেষে। বরগীর বিভ্রাট হইবে এই দেশে॥ আলিবর্দ্দি কৃষ্ণচন্দ্রে ধরি লয়ে যাবে। নজরানা বলিবার লক্ষ টাকা চাবে॥ বর্দ্ধ করি রাখিবেক মুরশিদাবাদে। মোরে স্তুতি করিবেক পড়িয়া প্রমাদে॥ স্বপ্নে দেখা দিব অন্নপূর্ণারূপ হয়ে। এই গীতে পূজার পদ্ধতি দিব কয়ে॥ সভাসদ তাহার ভারত চন্দ্র রায়। ফুলের মুখটী নৃসিংহের অংশ তায়। ভূরিশিটে ভূপতি নরেন্দ্ররায় সুত। কৃষ্ণচন্দ্র পাশে রবে হয়ে রাজ্যচ্যুত। ব্যাকরণ অভিধান সাহিত্য নাটক। অলঙ্কার সঙ্গীত শাস্ত্রের অধ্যাপক॥ পুরাণ আগমবেত্তা নাগরী পারশী। দয়া করি দিব দিব্যজ্ঞানের আরশী॥ জ্ঞানবান হবে সেই আমার কৃপায়। এই গীত রচিবারে স্বপ্ন কব তায়॥ কৃষ্ণচন্দ্র আমার আজ্ঞার অনুসারে। রায় গুণাকর নাম দিবেক তাহারে॥ সেই এই অষ্ট মঙ্গলার অনুসারে। অষ্টাহ মঙ্গল প্রকাশিবেক সংসারে॥ ডীউসাই নীলমণি কণ্ঠ অভরণ। এই মঙ্গলের হবে প্রথম গায়ন॥ শুনিয়া কহিল ভবানন্দ মজুন্দার। জগতঈশ্বরী তুমি যে ইচ্ছা তোমার॥ যে জান তা করিবে কি কাজ মোরে কয়ে। তিলেক বিলম্ব নাহি চল মোরে লয়ে। বেদ লয়ে ঋষি রসে ব্রহ্ম নিরূপিলা। সেই শকে এই গীত ভারত রচিলা॥