বিষয়বস্তুতে চলুন

মিবাররাজ/পরিশিষ্ট

উইকিসংকলন থেকে

পরিশিষ্ট।

 আমরা ‘মিবাররাজে’ গুহাকেই মিবারের আদিরাজ করিয়াছি, —কিন্তু গুহা বা বাপ্পা কে মিবারের আদি রাজ এ সম্বন্ধে একটু গোল আছে।

 মিবার রাজগণ ইরাণী বংশ-জাত কি না এই আলোচনা প্রসঙ্গে টড আবুল ফজলের এই উক্তি উদ্ধৃত করিতেছেন—

 The Rana's family consider themselves to be descendents of noshirwan. They came to Berar (Berat) and became chiefs of pernalla which city being plundered eight-hundred years prior to the writing of this book (আকবর নামা) his mother fled to Mewer and was protected by Mandalica Bhil whom the infant Bappa slew, and seized his territory.

 মর্ম্ম এই—

 “রাণা-পরিবার আপনাদিগকে নসিরাণ-বংশ মনে করেন। তাঁহার বিরাটে আসিয়া পার্ণালা নগরের প্রধান হইয়া উঠেন, এই পুস্তক লেথার (আকবর নামা) আট শত বৎসর পূর্ব্বে উক্ত নগর যখন লুষ্ঠিত হয় সেই সময় বাপ্পার মাতা মিবারে আসিয়া মন্দালিক ভীলের আশ্রয়ে ছিলেন। পরে বাপ্পা মন্দালিককে নিহত করিয়া তাহার রাজ্য গ্রহণ করেন।”

 এই উক্তিতে বাপ্পাই মিবারের আদিরাজ। অথচ টড যখন রাণদিগের ইতিহাস প্রদান করিতেছেন তখন গুহাকেই মন্দালিকের হন্তারক ইদর রাজ ধরিয়া উল্লেখ করিতেছেন। কেবল তাহাই নহে, এই উল্লেখস্থলে আবার আবুল ফজেলের দোহাই দিয়াছেন।[] অথচ আবুল ফজেল যে এ সম্বন্ধে কি বলেন তাহা পাঠকগণ আগেই দেখিয়াছেন তাহাতে বাপ্পা ছাড়া গুহার নাম নাই। সুতরাং এ সমস্যা ভাঙ্গে কিরূপে? বান্ধব পত্রিকার ‘বনপুত্র’ লেখকের ন্যায় যদি বলা যায় গুহা ও বাপ্পা একই ব্যক্তি—গুহাতে জন্ম বলিয়া গুহা—বাপ নামে সম্বোধিত বলিয়া বাপ্পা—তবেই ইহার একরূপ সমন্বয় হয়। কিন্তু তাহাও নহে, বাপ্পা ও গুহা যে দুই সময়ের স্বতন্ত্র দুই ব্যক্তি তাহা টড স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন।[] তিনি গুহার জীবন স্বতন্ত্র লিখিতেছেন বাপ্পার জীবন স্বতন্ত্র লিখিতেছেন বাপ্পাকে গুহার নবম পুরুষ বলিয়। পরিচয় দিয়াছেন।[] এ পরিচয় অগ্রাহ্য করিবার যো নাই, কিরূপ ইতিহাসাদি হইতে ইহা সঙ্কলিত তাহা পূর্ব্বেই বলা হইয়াছে। টড পুরাতন আশাপুরের একখানি খোদিত প্রস্তর-লেখ্য পাইয়াছেন তাহাতেও গুহা ও বাপ্পার স্বাতন্ত্র্য সুপ্রমাণিত।[] রাজস্থানের মিবার ইতিহাসে গুহা ও বাপ্পার মধ্যে প্রায় দুইশত শতাব্দীর ব্যবধান। বল্লভীপুর আক্রমণের সময় ইহাতে ৫২৪ খৃষ্টাব্দ (এই সময়েই গুহার জন্ম) আর বাপ্পার চিতোর-সিংহাসন আরোহণ কাল ৭২০ খৃষ্টাব্দ নির্দ্দিষ্ট।

 আবুল ফজেলের উক্তিতে তাঁহার পুস্তক লেখার আট শত বৎসর আগে বাপ্পার মাতা মিবার আগমন করেন। ষোড়শ শতাব্দীতে তাঁহার পুস্তক প্রণীত, তাহার আটশত বৎসর পূর্ব্ব হইলে ৮ শতাব্দী হয়।

 কিন্তু অন্যান্য ইতিহাস হইতে টড যতদূর প্রমাণ পাইয়াছেন তাহাতে ৮ খৃষ্টাব্দ নহে, ৬ খৃষ্টাব্দেই বল্লভীপুর লুণ্ঠিত হয়, সুতরাং বাপ্পা শিলাদিত্যেরও সন্তান হইতে পারেন না, বিরাট হইতেও তাঁহার মাতার প্রথম আগমন নহে; তবে অষ্টম শতাব্দীতে বাপ্পা চিতোর সিংহাসন লাভ করেন এই পর্য্যন্ত ঠিক। সুতরাং গুহার জীবনী দিয়া যে আবুল ফজেল বাপ্পাকে সাজাইয়াছেন, তাহাই টড দেখাইয়াছেন, টডের কথায় গুহাকেই আমরা মিবারের আদি রাজ রূপে গ্রহণ করিয়াছি।


 একটু অপ্রাসঙ্গিক হইলেও এইখানে আমরা আর একটি কথা বলিব।

 ক্ষত্রিয় রাজাদিগের পাণ্ডু লেখ্য ইতিহাসাবলী,[] তাঁহাদের ভাটগ্রন্থ তাঁহাদের মন্দিরস্থ খোদিত লিপি প্রভৃতি হিন্দুদিগের যে সকল লেখা হইতে টড মিবার-রাণাগণের পরিচয় গ্রহণ করিয়াছেন সে সকলেই রাণাগণ সূর্য্যবংশ বলিয়া উক্ত। মাঝখান হইতে কোন কোন যাবনিকগ্রন্থ কি রূপ যুক্তিহীন কথায় রাণাদিগের এই সূর্য্য কুলে ইরাণীত্ব আরোপ করিয়া তাঁহাদের বংশগৌরব মলিন করিতে প্রয়াস পাইয়াছে পাঠকদিগকে আমরা তাহা না দেখাইয়া থাকিতে পারিলাম না।

 “মাসার অল ওমরা” নামক গ্রন্থের উক্তি হইতেই প্রধানতঃ উক্তরূপ অনুমানের জন্ম।

 শিবজির ইতিহাস ‘লেখক লক্ষ্মীনারায়ণ সুফিক আরঙ্গাবাদি’ (আরঙ্গাবাদের কাব্যলেখক) রাণা রংশ বলিয়া শিবজির পরিচয় প্রদান প্রসঙ্গে তাঁহার পুস্তকে উল্লিখিত গ্রন্থের উক্তি উদ্ধৃত করিয়াছেন।[] টড আবার এই উদ্ধৃতাংশ অনুবাদ করিয়া রাজস্থানে যাহা সন্নিবেশ করিয়াছেন—আমরা এইখানে সংক্ষেপে তাহার সার মর্ম্ম প্রকাশিত করিতেছি। পাঠকগণ এখন দেখুন উক্তরূপ অনুমানের ভিত্তি কতদূর দৃঢ়।

 “হিন্দু রাজকুল প্রধান উদয়পুর রাণাগণ ‘নমিরান ই আদিলের’ (ন্যায়বান) (যিনি হিন্দুস্থানের অনেক প্রদেশ জয় করেন) বংশ বলিয়া পরিচিত। বৈজন্তিয়মের (আধুনিক কনষ্ট্যানটিনোপল) সম্রাট মরিসের কন্যা মেরিয়ানা পারস্যরাজ নসিরাণের এক মহিষী ছিলেন। তাঁহার গর্ভের সন্তান নাসজাদ পিতার ধর্ম্ম ত্যাগ করিয়া মাতার খৃষ্টান ধর্ম্ম গ্রহণ করেন, এবং সসৈন্য হিন্দুস্থানে আসিয়া সেখান হইতে পিতার বিরুদ্ধে ইরাণ যাত্রা করেন, সেইখানে তাহার মৃত্যু হয়—কিন্তু তাঁহার যে পুত্রকে তিনি হিন্দুস্থানে রাখিয়া যান তাহা হইতেই রাণা বংশের উৎপত্তি।”

 এই এক কথা—আর এক—

 “পিতৃ বিদ্রোহী নসিজাদ ইরাণে গিয়া যুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাঁহার বৈমাত্র ভ্রাতা পিতৃ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েন। এই ভ্রাতার বংশধর শেষ অগ্নিউপাসক রাজা এজিদ ১৭ হিজরা অব্দে মুসলমানগণ কর্ত্তৃক পরাভূত ও হৃত রাজ্য হয়েন। এজিদের তিন কন্যা ছিল। যুদ্ধের পর দ্বিতীয় কন্যা সাহার বানু ইমাম হোসেনের পত্নী হইলেন, তৃতীর কন্যা বানু একজন আরব কর্ত্তৃক বলপূর্ব্বক চিকিক অরণ্যে নীত হইয়া সেইখ়ানে ঈশ্বর শরণ করতঃ অদৃশ্য হইলেন। (এই জন্য পারসীদের ইহা একটি পুণ্য তীর্থ।) কিন্তু জ্যেষ্ঠা কন্যা মহাবানুর যে কি হইল ইরাণী পুস্তকে তাহার কোন উল্লেখ নাই, কিন্তু মহাবানু যে হিন্দুস্থানে আসিয়াছিলেন হিন্দু পুস্তক হইতে তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়, মহাবানু হইতেই শশোদিয়া[] বংশের (রাণা বংশ) উৎপত্তি। এইরূপে যেদিক দিয়াই ধর মিবাররাজগণ হয় নসিরাণ-পুত্র নসিজাদের সন্তান না হয় এজিদ কন্যা মহাবানুর সন্তান।”

 এই ত ‘মাসার অল ওমরার’ উক্তি, কিন্তু ইহার মধ্যে মুখের জোর কথা ছাড়া রাণাদের ইরাণীত্ব প্রতিপাদন করে এমন ঐতিহাসিক যুক্তি কই?

 ইতিহাস বরঞ্চ ইহার বিপরীতেই যুক্তি প্রদান করে।

 টড বলেন—পারস্য ইতিহাসে নসিজাদের সৌরাষ্ট্র আক্রমণ ও তাহার সিংহাসন আরোহণের সময় (৫৩১ খৃঃ) যা পাওয়া যায় তাহার সহিত হিন্দু ইতিহাসের বল্লভীপুর লুণ্ঠন কালের (৫২৪ খৃঃ) ঐক্য দেখা যায়।[]

 আরো বলেন—

 বল্লভীপুরের কাছে বৈজন্তিয়ম নামে একটি নগর ছিল। বৈজন্তিয়ম-সম্রাট-কন্যার গর্ভজাত পারস্য-রাজপুত্র নসিজাদ যে এইখানে যুদ্ধ করেন এই নামটিই তাহার প্রমাণ। যুদ্ধ জয়ের পর মাতার দেশের নামে এই নগরের নাম করণ করিয়াছেন।[]

 টডের এই দ্বিতীয় কথাটির সম্বন্ধে আমাদের একটু বক্তব্য আছে।

 টড যে নগরকে বৈজন্তিয়ম নাম দিতেছেন, যতদূর সম্ভব তাহার প্রকৃত নাম বৈজয়ন্তী। বৈজয়ন্তী একটি সংস্কৃত কথা সুতরাং এই নাম হইতেই নগরটি নসিজাদের স্থাপিত এমন প্রমাণ হয় না। বিজয় সেন যখন বল্লভীপুর বিজয়পুর প্রভৃতি স্থাপন করেন তখন বৈজয়ন্তী নামে আর একটি নগর তাঁহা কর্ত্তৃক স্থাপিত হইয়াছিল ইহাই অধিক সম্ভবপর।

 টড যে সংস্কৃত ভাষা জানেন না—রাজস্থানের নানা স্থানে তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়—ইহাও আর একটি প্রমাণ মাত্র।

 কিন্তু যদি উক্ত নগর নসিজাদের স্থাপিত বৈজন্তিয়ম বলিয়াই মানিয়া লওয়া যায় তাহা হইলে টডের উল্লিখিত দুইটি কথা হইতে ইহাই প্রমাণ হয়—যে তাতারগণ নহে, পারস্য-রাজপুত্র নসিজাদই বল্লভীপুর আক্রমণ করিয়া শিলাদিত্যের রাজ্য অধিকার করেন। রাণাগণ যে নসিজাদের বংশ উপরোক্ত ঐতিহাসিক ঘটনা হইতে তাহার প্রমাণ হয় না, বরঞ্চ পারস্যরাজপুত্রের সৌরাষ্ট্র আক্রমণ কাল ও শিলাদিত্যের পরাভব কালের ঐক্য হওয়ায় শিলাদিত্য যে পারস্যরাজের সন্তান নহেন তাহাই প্রমাণ হইতেছে।

 এইখানে একটি কথা, সূর্য্য উপাসক ইরাণীদিগের সহিত রাণাদিগের পূজা পদ্ধতির অনেকটা সাদৃশ্য আছে। উভয়েই সূর্য্য পূজা করেন—উভয়ের পতাকায় সূর্য্যের মূর্ত্তি। রাণার নগরের প্রধান দ্বার সূর্য্যদ্বার নামে খ্যাত, ইত্যাদি। ইহা হইতে কি রাণাগণ পারস্য রাজবংশ বলিয়া প্রতিপন্ন হইতে পারেন না? না। ইরাণীগণ যে পুরাতন আর্য্যজাতির একটি শাখা—ইহা একটি সিদ্ধান্ত কথা, সুতরাং রাণাদিগের সহিত তাঁহাদের পূজা পদ্ধতির এই যে সাদৃশ্য তাহাতে কেবল সেই সিদ্ধান্তই অব্যর্থ রহিতেছে, রাণাগণ যে নসিজাদের সন্তান এ সাদৃশ্যে তাহার প্রমাণ হয় না।

 এখন দেখা যাক ‘মাসার অল ওমরার’ দ্বিতীয় উক্তি অর্থাৎ রাণাগণ মহাবানুর সন্তান এই অনুমানটি কিরূপ যুক্তিসঙ্গত।

 ‘মাসার অল ওমরা’ লেখক বলিতেছেন বটে এজিদের জ্যেষ্ঠ কন্যা হিন্দুস্থানে আসিয়াছিলেন—হিন্দু পুস্তকে তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়, কিন্তু কোন পুস্তক এ সম্বন্ধে কি বলিতেছে তাহা কিছুই বলেন নাই, সুতরাং তাহা না জানিলে এ কথার মূল্য আপাততঃ অতি সামান্য। তবে টডের মতে ‘মাসার অল ওমরার’ প্রথম অনুমানটি অপেক্ষা দ্বিতীয়টিতে কিছু সত্য থাকিতে পারে। মগধি ভাষায় ‘উপদেশ প্রধান’ নামক গ্রন্থে শিলাদিত্যের জন্ম সম্বন্ধে এইরূপ একটি প্রবাদ আছে—

 [১০]গুজরাটের একটি নগরে দেবাদিত্য নামক এক ব্রাহ্মণ ছিলেন সুভগা নামে তাঁহার একমাত্র বালিকা বিধবা কন্যা ছিল। কন্যা পিতার নিকট সূর্য্য মন্ত্র শুনিয়া অসাবধানে তাহা উচ্চারণ করায় সূর্য্যদেব তাহার নিকট উপস্থিত হইলেন।

 বিধবা কন্যাকে অন্তঃস্বত্তা দেখিয়া ব্রাহ্মণের ক্ষোভের সীমা রহিল না—কিন্তু যখন শুনিলেন সূর্য্যদেব তাহার জামাতা—তখন ব্রাহ্মণ অনেকটা শান্ত হইলেন—কিন্তু অন্যে কন্যাকে কলঙ্কিত বিবেচনা করিবে এই ভয়ে গর্ভিনী দুহিতাকে বল্লভীপুর প্রেরণ করিলেন। সেখানে তাহার যমজ সন্তান হইল—একটি পুত্র একটি কন্যা।

 পুত্র বড় হইয়া পাঠশালায় যায়, সমপাঠীগণ তাহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করে—সে বলিতে পারে না— সকলে তাহাকে উপহাস করে—এই উপহাসে এক দিন সে ক্রুদ্ধ হইয়া মাতাকে হত্যা-ভয় দেখাইয়া তাহার পিতার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিল।

 এই সময় সূর্যাদেব সন্তানের নিকট প্রকাশিত হইয়া আত্ম পরিচয় প্রদান পূর্ব্বক তাহাকে একটি শিলাখণ্ড প্রদান করিলেন, এই শিলা স্পর্শ করাইবা মাত্র তাহার উপহাসকারী সমপাঠীর মৃত্যু হওয়ায় বালক রাজ সমীপে আনীত হইল। রাজা তাহাকে দণ্ডভয় দেখাইলে বালক ক্রুদ্ধ হইয়া শিলাখণ্ড দ্বারা তাঁহাকে নিহত করিয়া তাঁহার সিংহাসন অধিকার করিল। শিলা হইতে তাঁহার নাম শিলাদিত্য।

 টড এই প্রবাদটির সহিত মহাবানুকে এক করিতে চাহেন। তিনি বলেন মহাবানুর পিতা এজিদ রাজ্য হারাইবার পর সম্ভবতঃ মহাবানু হিন্দুস্থানে তাহার আত্মীয়গণের নিকট (পূর্ব্বেই বলা হইরাছে নসিজাদের পুত্র হিন্দুস্থানে বসতিস্থাপন করেন) আশ্রয় লইতে আসেন। মহাবানুই সুভগা নামে খ্যাত হইয়া থাকিবেন।[১১]

 পারস্য রাজ দুহিতা-মহাবানুকে সৌরাষ্ট্র রাজ কেহ যে বিবাহ করিতে না পারেন তাহা নয়, তবে কি এ ঘটনাটি সত্য বলিয়া ধরিয়া লইতে গেলে ইতিহাস বেঠিক হইয়া পড়ে। এই মাত্র আমরা দেখিলাম নসিজাদ যখন সৌরাষ্ট্রে আসেন সেই সময়ে বল্লভীপুরের শেষ সূর্য্যবংশী রাজা শিলাদিতা নিহত হন। নসিজাদের আক্রমণের অনেক পরে এজিদ মুসলমানদিগের সহিত যুদ্ধে পরাস্ত হন সুতরাং মহাবানু তখন সৌরাষ্ট্রে আসিয়া কিছু আর শিলাদিত্যের মাতা হইতে পারেন না।

 তার পর, রাণাদিগের বংশের ইতিহাসে এ প্রবাদের কোনই উল্লেখ নাই, তাহাতে কনকসেনের বংশ পরস্পরায় ধারাবাহীক্রমে—শিলাদিত্য সৌমাদিত্যের সন্তান বলিয়া উক্ত। (কোন কোন ইতিহাসে শিলাদিত্যের পিতার নাম সূরয রাও)।

 টড এ সম্বন্ধে আবুল ফজেলের যে উক্তি উদ্ধৃত করিয়াছেন —তাহাও ঐরূপ মুখের কথা। “রাণা পরিবার আপনাদিগকে নসিরাণের বংশ মনে করেন”—(Rana’s Family consider themselves descendents of Noshirwan.) এই এক লাইনে তাঁহার উক্তি শেষ হইয়াছে।

 সুতরাং কেবল এইরূপ কথা হইতে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের সন্তান কুলোদ্ভব বিখ্যাত সূর্য্য বংশ রাণাগণকে ইরাণী পিতা মাতার সন্তান বলিয়া অনুমান করা নিতান্তই অদ্ভুত বলিয়া মনে হয়। কিন্তু শিশু যখন প্রশংসা পূর্ণ নেত্রে উজ্জ্বল কিরণশালী চন্দ্রের দিকে চাহিয়া আছে তখন যদি তাহাকে বল—ঐ যে চন্দ্র দেখিতেছ উহার কিরণ, জ্যোতি সকলি মিথ্যা,—প্রকৃত প্রস্তাবে উহা একটা মৃৎপিণ্ড মাত্র—তখন সে কথা শিশুর ত নিতান্তই অদ্ভুত মনে হইতে পারে, তাই বলিয়া উহার মধ্যে সত্যের কি কিছু সম্ভাবনা নাই? কে অস্বীকার করিবে?

 তবে সম্ভাবনা যাহা তাহা পণ্ডিতদিগের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতেই পৌঁছে, শিশু তাহার সহজ জ্ঞান ও সহজ বুদ্ধি দিয়া তাহা দেখিতে পায় না। যদি পণ্ডিতগণ, পণ্ডিত প্রবর টডের ন্যায় উপরোক্ত প্রমাণে আমাদের খৃষ্টান মহারাণীর সহিত সূর্য্য বংশ রাণাদিগের রক্ত সম্পর্কের সম্ভাবনা দেখিয়া আহ্লাদ প্রকাশ করেন—তাহাতে আমাদের আপত্তি নাই—কিন্তু অজ্ঞ আমাদের টডের এ আহ্লাদ দেখিয়া পিকুইকের পুরাতত্ত্ব আবিষ্কারটিই মনে আসিয়া পড়ে।[১২]

    of the ancient Balabhi & city called Byzantium which almost affords conclusive proof that it must have been the son of Noshirwan who captured Balabhi and Gajni and destroyed the family of Silladitya; for it would be & legitimate occasion to name such conquest after the city where his Christian mother had birth. Tod's Rajast’han Vol 1. P238.

  1. At this period Edur was goverened by a chief of the savage race of the Bhil; his name, mandalica. The young Goha frequented the forests in company with the Bhils whose habits better assimilated with his daring nature than those of the Brahmins. He became a favourite with the vena-pootras, or “children of the forest,” who resigned to him Edur with its woods and mountains. The fact is mentioned by Abul Fuzil, and is still repeated by the bards, with a characteristic version of the incident, of which doubtless there were many.
     Tods Rajasthan P. 221.
  2. তবে গুহা ও বাপ্পা এই দুই জনেরই জীবনের বিলক্ষণ ঘটনা সাদৃশ্য দেখা যায়।
     গুহার পিতা শিলাদিত্য যবন হস্তে নিহত হইয়াছিলেন, বাপ্পার পিতা নাগাদিত্যও ভীলদিগের হস্তে নিহত হইয়া ছিলেন। গুহা ব্রাহ্মণকন্যা কমলাবতী কর্ত্তৃক প্রতিপালিত হইয়া ভীলরাজ মন্দালিকের ইদর রাজ্যে অধিষ্ঠিত হইলেন, বাপ্পাও কমলাবতীর বংশ কর্ত্তৃক রক্ষিত হইয়া চিতোর-রাজ্য লাভ করিলেন। ভীলগণ ইদররাজ গুহাকে রক্ত ফোটা দিয়া অভিষিক্ত করিয়াছিল বাপ্পাও ভীলপুত্রের রক্ত ফোটা পরিয়া চিতোরের অধিপতি হইয়াছিলেন।
  3. Tods Rajasthan Vol 1. Annals of Mewer Chapter 11.
  4. Tods Rajasthan Vol 1 Geneological Table page 45.
  5. খোমান রস, রাজ রত্নাকর, রাজবল্লভ, জয়বল্লভ প্রভৃতি। এই সকল ইতিহাসাদি হইতে টড রাজাদিগের যে পরিচয় সঙ্কলন করিয়াছেন তাহার পৌরাণিক অংশ ছাড়িয়া দিলে কনকসেন হইতেই ইঁহাদের ইতিহাস আরম্ভ হয়, মিবাররাজে আমরা সংক্ষেপে গুহার পূর্ব্বেকার এই বংশ ইতিহাস প্রদান করিয়াছি।
  6. The work which has furnished all the knowledge which exists on the Persian ancestry of the Mewar princes is the Masser al Omra, or that (in the authors possession) founded on it, intitled Bisat al Canaem, or display of the Foe, written in A. H. 1204. The writer of this work styles hinsalf Latchmi Narrain shufeek Arungabadi, or the ‘rhymer of Arungbad; He professes to give an account of Sevaji the founder of the—Malratta Empire; for which purpose he goes deep into the lineage of the Ranas of Mewar from whom sivaji was descended, quoting at length the Massers al Omra from which the following is a literal translation.
     Tod's Rajasthan. Vol 1. P 235.
  7. গুহা হইতে প্রথমে রাণাগণ গুহলুট আখ্যা পাইয়া ছিলেন, পরে স্থানের নাম হইতে আহারিয়া ও শশোদিয়া এই নাম প্রাপ্ত হন।
  8. The period of the invasion of Saurashtra by Noshizad who mounted the thrown A. D. 531, corresponds well with the sack of Balabhi A. D. 524.
  9. We have a singular support to these historic relics in a geographical fact, that places on the site
  10. See Tod’s Rajasthan Vol 1. Annals of Mewer, Chapter III
  11. But though I deem it morally impossible that the Ranas should have their lineage from any male branch of the Persian house, I would not equally assert that Maha Banoo the fugitive daughter of Yezdegird may not have found a husband, as well as sunctuary with the prince of saurashtra, and she may be the soobhogna (mother of silladitya) whose mysterious amour with the ‘sun’ compelled her to abandon her native city of Kaira. The son of Marian had been in saurashtra and it is therefore not unlikely that her grand child should there seek protection in the reverses of her family.
    P239.
  12. Whichever of the propositions we adopt at the command of the author of ‘the Annals of princes’ namely “that the Sesodia race is of the seed of Noshizad Son of Noshirwan or that of of Mahabanoo daughter of Yezdegird” we arrive at a singular and startling conclusion, viz. that the ‘Hindua Sooraj descendant of a hundred kings’ the undisputed possessor of the honours of Rama, the patriarch of the solar race, is the issue of a Christian princess: that the chief prince among the nations of Hind can claim affinity with the emperors of ‘the mistress of the world’ though at a time when her glory had waned and her crown had been transferred from the Tiber to the Bosphorus.
    Tod’s Rajasthan P. 239.