লিপিকা/মেঘলা দিনে
মেঘলা দিনে
রোজই থাকে সমস্ত দিন কাজ, আর চারদিকে লোকজন। রোজই মনে হয়, সেদিনকার কাজে সেদিনকার আলাপে সেদিনকার সব কথা দিনের শেষে বুঝি একেবারে শেষ করে দেওয়া হয়। ভিতরে কোন কথাটি যে বাকি রয়ে গেল তা বুঝে নেবার সময় পাওয়া যায় না।
আজ সকাল বেলা মেঘের স্তবকে স্তবকে আকাশের বুক ভেরে উঠেছে। আজও সমস্ত দিনের কাজ আছে সামনে, আর লোক আছে চারদিকে। কিন্তু, আজ মনে হচ্চে ভিতরে যা-কিছু আছে বাইরে তা সমস্ত শেষ করে দেওয়া যায় না।
মানুষ সমুদ্র পার হল, পর্ব্বত ডিঙিয়ে গেল, পাতালপুরীতে সিঁধ কেটে মণি-মানিক চুরি করে আনলে, কিন্তু একজনের অন্তরের কথা আরেকজনকে চুকিয়ে দিয়ে ফেলা, এ কিছুতেই পারলে না।
আজ মেঘলা দিনের সকালে সেই আমার বন্দী কথাটাই মনের মধ্যে পাখা ঝাপ্টে মরচে। ভিতরের মানুষ বল্চে; “আমার চিরদিনের সেই আররেকজনটি কোথায়, যে আমার হৃদয়ের শ্রাবণ মেঘকে ফতুর করে তার সকল বৃষ্টি কেড়ে নেবে!'”
আজ মেঘলা দিনের সকালে শুন্তে পাচ্চি সেই ভিতরের কথাটা কেবলি বন্ধ দরজার শিকল নাড়চে। ভাবছি, “কী করি! কে আছে যার ডাকে কাজের বেড়া ডিঙিয়ে এখনি আমার বাণী সুরের প্রদীপ হাতে বিশ্বের অভিসারে বেরিয়ে পড়বে? কে আছে যার চোখের একটি ইসারায় আমার সব ছড়ানো ব্যথা এক মুহূর্ত্তে এক আনন্দে গাঁথা হবে, এক আলোতে জ্বলে উঠবে? আমার কাছে ঠিক সুরটি লাগিয়ে চাইতে পারে যে, আমি তাকেই কেবল দিতে পারি। সেই আমার সর্ব্বনেশে ভিখারী রাস্তার কোন্ মোড়ে?”
আমার ভিতর মহলের ব্যথা আজ গেরুয়াবসন পরেচে। পথে বাহির হতে চায়, সকল কাজের বাহিরের পথে,—যে-পথ একটিমাত্র সরল তারের একতারার মত, কোন্ মনের মানুষের চলায় চলায় বাজ্চে।